সম্প্রতি নওগাঁর
মহাদেবপুরের দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে হিজাব বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। যেখানে একজন
সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষকের বিরুদ্ধে হিজাব পরিধান করা শিক্ষার্থীদের মারধরের অভিযোগ
উঠেছে। ঘটনাকে কেন্দ্র করে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। অভিযুক্ত শিক্ষক আমোদিনী পালকে
কারণ দর্শানোর নোটিশও দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক ধরণীকান্ত বর্মণ। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়
দেওয়া নোটিশে সাত দিনের মধ্যে তাকে জবাব দিতে বলা হয়েছে। তবে প্রধান শিক্ষকের লুটপাট
ও অনিয়ম ঢাকতেই হিজাব বিতর্কে আমোদিনী পালকে ফাঁসানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিদ্যালয়
ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সভাপতি পবিত্র পাল।
এদিকে আলোচিত
ঘটনার তদন্তে মহাদেবপুর উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি
গঠন করে দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। ওই কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন
দিতে বলা হয়েছে।
স্কুলড্রেসের জন্য বিদ্যালয়ে হামলার ৩ দিন পর থানায়
জিডি
গত বুধবার বিদ্যালয়টির
সমাবেশে স্কুলড্রেস না পরে আসায় শিক্ষার্থীদের শাসন করেন শরীরচর্চার শিক্ষক বদিউল আলম
ও সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনী পাল। পরে অভিযোগ ওঠে হিজাব পরায় শিক্ষার্থীদের মারপিট
ও অশালীন ভাষায় গালাগাল করা হয়েছে। হিজাব পরে বিদ্যালয়ে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। এরপরই
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে অভিভাবকেরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। পরে অভিভাবকরা স্কুলে
গিয়ে এর প্রতিবাদ জানান। অভিযুক্ত নারী শিক্ষককে না পেয়ে তারা স্কুলের আসবাবপত্রও ভাঙচুর
করেন। খবর পেয়ে থানা পুলিশের দুটি টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
তবে বিষয়টিকে
আমোদিনী পালের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক
সভাপতি পবিত্র পাল। তিনি বলেন, ‘ধরণীকান্ত বর্মণ প্রধান শিক্ষক থাকাকালীন বিদ্যালয়ে নিয়োগ বাণিজ্যের
লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়াসহ বিদ্যালয়ের টাকা লুটপাট করেন। তিনি কয়েক দিনের মধ্যেই
অবসরে যাবেন। তার ভয়, সরকারি নিয়ম অনুসারে পদাধিকার বলে সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনী
পাল ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পাবেন। তিনি যদি সব অনিয়ম ফাঁস করে দেন, তাহলে
তিনি বিপদে পড়বেন। আমোদিনী পালের সঙ্গে অন্যায় সমঝোতা করতে না পেরে হিসাব দিতে গড়িমসি
শুরু করেন প্রধান শিক্ষক। পরে বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকসহ অন্যরা আমোদিনীকে পরিকল্পিতভাবে
হিজাব বিতর্কে ফাঁসিয়েছেন।’
‘স্কুলড্রেস নিয়ে শাসন করেছি, হিজাবের বিষয়ে কিছু বলিনি’
তিনি আরও বলেন,
প্রধান শিক্ষক তার চাকরির ১২ বছর দায়িত্বকালে টাকার বিনিময়ে ১০ জন শিক্ষকসহ অফিস সহকারী
নিয়োগ দিয়েছেন। বিদ্যালয়ে কোনও হিসাব বই তিনি রাখেননি।
বিদ্যালয়ের
সহকারী শিক্ষক শাহাদত হোসেন রতনও এমনটাই দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘স্কুলড্রেস পরে না আসায় বিদ্যালয়ের
ছাত্রদের শাসন করেছিলেন শরীরচর্চার শিক্ষক বদিউল আলম। অন্যদিকে ছাত্রীদের শাসন করেন
সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনী পাল। সে সময় হিজাবের কোনও কথা হয়নি।’
বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা
কমিটির সাবেক সভাপতি পবিত্র পাল আরও অভিযোগ করেন, পূর্ব পরিকল্পিতভাবে প্রধান শিক্ষকের
যোগসাজশে বুধবার রাতে বিদ্যালয়ের দুই একজন শিক্ষক ও অফিস সহকারী মিলে হাসেমপুর গ্রামে
গোপন বৈঠক করেন। এরপর বৃহস্পতিবার হিজাব বিতর্কের মাধ্যমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের
অভিযোগ তোলা হয়।
স্কুলড্রেসের জন্য ছাত্রীদের মারধরের ঘটনায় ৩ সদস্যের
কমিটি
অভিযোগ সূত্রে
জানা গেছে, বুধবার (৬ এপ্রিল) জাতীয় সংগীত চলাকালে বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষিকা
আমোদিনী পাল স্কুলড্রেস পরে না আসায় ছাত্রীদের অপমান ও মারধর এবং অশালীন ভাষায় গালিগালাজ
করেন। এর আগে ছাত্রীদের স্কুলড্রেস পরে বিদ্যালয়ে আসতে বলেছিলেন তিনি। এরপরও স্কুলড্রেস
পরে না আসায় ১৮ ছাত্রীকে মারধর করেন। এ সময় তার নির্দেশে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক
বদিউল আলম অষ্টম শ্রেণির তিন শিক্ষার্থীকে মারধর করেন। তবে কয়েকজন অভিভাবক অভিযোগ করেন,
হিজাব পরে আসায় ওসব ছাত্রীকে মারধর করা হয়েছে। এজন্য তারা ক্ষুব্ধ হন। পরে বিদ্যালয়ে
হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। সহকারী প্রধান শিক্ষকের শাস্তির দাবি জানান অভিভাবক ও স্থানীয়রা।