দেশের সরকারি
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ২৯ হাজারের মতো প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদ রয়েছে। চলতি বছরেই
এসব শূন্যপদ পূরণ করতে চায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু পদোন্নতি দেওয়া
হলেও অনেক সহকারী শিক্ষক তা নিতে চাইছেন না। এরইমধ্যে ১০ হাজারের বেশি শিক্ষক পদোন্নতি
না নেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন।
জানা গেছে,
বর্তমানে দেশে ২৯ হাজারের বেশি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য। এসব বিদ্যালয়ে
ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব চালিয়ে নিচ্ছেন সহকারী শিক্ষকরা। ২০০৯ সালে মামলার কারণে
পদোন্নতির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদ পূরণ বন্ধ হয়ে যায়। তবে দীর্ঘ দেড় দশক পর
গত ৩ আগস্ট পদোন্নতির দুয়ার খোলে। পদোন্নতির জন্য একটি সফটওয়্যার ব্যবহার করে গ্রেডেশন
তালিকা প্রস্তুত করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। পরবর্তীতে মন্ত্রণালয় থেকে অফিস আদেশ
জারি করা হয়। তবে সবকিছু সম্পন্ন হওয়ার পর পদোন্নতি না নিতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে
আবেদন করেছেন ১০ হাজারের বেশি শিক্ষক।
এসব শিক্ষকরা
বলছেন, তাদের চাকরির বয়স শেষ পর্যায়ে। তাই বয়স ও শারীরিক দিক বিবেচনায় তারা পদোন্নতি
নিতে চান না। এ ছাড়া বর্তমানে সহকারী শিক্ষক থাকা অবস্থায় যে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন, প্রধান
শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি নেওয়ার পর তার খুব বেশি টাকা বাড়বেও না। বরং তাদের দায়িত্ব
অনেক বেড়ে যাবে। এর ফলে তারা পদোন্নতি না চেয়ে আবেদন করেছেন।
চাঁদপুরের হাইমচরের
খুদিয়া বাজাপ্তী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক উজ্জলা রানী বলেন, পদোন্নতি
নিয়ে কোনো লাভ নেই। বরং দায়িত্বের বোঝা কাঁধে চাপবে। শেষ বয়সে আর প্রধান শিক্ষক হওয়ার
কোনো ইচ্ছা নেই।
এ ছাড়া প্রাথমিক
শিক্ষা অধিদপ্তরের গ্রেডেশন পদ্ধতি নিয়েও রয়েছে ক্ষোভ। চাকরিতে যোগদানের তারিখের পরিবর্তে
জন্মতারিখ অনুযায়ী জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করা হচ্ছে। এর ফলে অনেক শিক্ষক পদোন্নতি নিতে
আগ্রহী নন।
চাঁদপুরের গন্ডামারা
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নাসির উদ্দিন বলেন, আমি চাকরিতে আগে যোগদান
করেছি। অথচ আমার পরে যারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন, তারা বেশি বেতন পাচ্ছেন। এখন আবার দেখছি
গ্রেডেশনের তালিকায়ও তারা ওপরে। পদোন্নতিও তারাই পাবেন।
এ বিষয়ে প্রাথমিক
শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক মনীষ চাকমা বলেন, চাকরির বয়স শেষসহ নানান কারণে কেউ কেউ
পদোন্নতি নিতে চাইছেন না। এ ছাড়া অনেকে ব্যক্তিগত নানান কারণও উল্লেখ করছেন। কেউ আগ্রহী
না থাকলে তো জোর করে দায়িত্ব দেওয়া যাবে না। আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি।
প্রাথমিক ও
গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেন, একজন শিক্ষক ৩০ বছর চাকরি করার পর যদি
প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে না পারেন, সেটা তার অক্ষমতা ও অদক্ষতা। যদি কারও
ব্যক্তিগত ও শারীরিক সমস্যা থাকে, সেটা ভিন্ন কথা। তবে স্বাভাবিক অবস্থায় দায়িত্ব নিতে
না চাওয়াটা অগ্রহণযোগ্য এবং দুঃখজনক।