রংপুর প্রতিনিধি:
ঘুরছেনা যান্ত্রিক পাখা। বহিছেনা বাতাস। ভ্যাপসা গরমে অস্থির নগর জীবন। গ্রীষ্মের প্রচন্ড গরমে এতটুকু স্বস্তি দিতে কদর বেড়েছে হাত পাখার ।
কত শত বছর থেকে হাতপাখা মানুষের সাথী হয়েছে জানা না থাকলেও অবুঝ শিশু থেকে শুরু করে ৮০ বছরের পৌঢ় পর্যন্ত শরীরে বুলিয়ে নিতে ভোলেন না হাত পাখার সুবাতাস।
গ্রাম কি নগর সবখানেই এখন হাত পাখার কদর, তবে গ্রামে তুলনামূলক গাছের সু-শীতল ছায়া আর প্রকৃতির বাতাসে শরীরে শান্তির পরশ বুলিয়ে নেয়ার সুযোগ থাকলেও ইট-কাঠের শহরে শীতল ছায়াতো দুরের কথা গাছেরই দেখা পাওয়া দুস্কর।
অব্যাহত লোড শেডিং শহরের মানুষজনই এখন হাতপাখা বেশি কিনছেন জানালেন ব্যবসায়ী ইমরান আলী। রংপুর প্রধান পোষ্ট অফিসের ফুটপাতে হরেক রকম পাখা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। তাদের সংগ্রহে আছে বাঁশের বুননে তৈরী পাখা ও ঘুরানি পাখা, তাল পাতার ডাটা দিয়ে তৈরী তাল পাখা আবার কোনটাতে তালের পাতার সাথে জুড়ে দেয়া বাশেঁর কঞ্চি লাগানো পাখা। তাল ও বাঁশের পাতার মান ভেদে দাম পড়বে ৩০ থেকে ৫০ টাকা।
বাঁশ দিয়ে তৈরী গোল ফ্রেমের এক রং কাপড়ের মধ্যে বিভিন্ন রঙ্গিণ গ্লাস লাগানো আছে বাদশাহী পাখা, দাম পড়বে ১৫০ টাকা, আরো আছে রঙ্গিণ কাপড়ে সুতার কাজ করা নক্শী পাখা, কাপড়ে বিভিন্ন ফুল পাখির ছবি স্ক্রিন প্রিন্ট করা ছাপানো পাখা দাম ৫০ টাকা।
গোল ফ্রেমে শুধু লাল নীল সুতো দিয়ে বিশেষ কায়দায় বানানো ”প্রেম সখি” পাখার রয়েছে সাধারণ হাত পাখা এবং ঘুরানি পাখা। আছে পকেট পাখা, ময়ূর পাখা ছাড়াও নানান বাহারি পাখা।
দোকানীরা জানান বাদশাহী পাখা’র মূল কারিগর রংপুরের পীরগাছা থানার কালীগঞ্জ গ্রামের গ্রাম্য বধুরা, তারাই নিজ সমিতির মাধ্যমে এবারে তৈরী করছেন বাদশাহী পাখা।
ছাপানো কাপড়ে সুতার নকশা করা পাখা আসে ময়মনসিংহ থেকে। রংপুর অঞ্চলে বাঁশ পাখার প্রধান কারিগর বদরগঞ্জ ও আউলিয়া গঞ্জের পাখা শ্রমিকেরা।
সারাদেশে তালের পাতার বেশীর ভাগ পাখা সরবরাহ হয় নওঁগা থেকে এখানে রয়েছে তাল পাখার বিশাল পাইকারী বাজার। তালের ঘুরানি পাকা বগুড়া থেকেও সরবরাহ হয়।
তারাগঞ্জ থেকে আসে তাল পাতার সাথে জুড়ে দেয়া বাশ কঞ্চির পাখা, লাল নীল সুতো দিয়ে বানানো ”প্রেম সখি” পাখা আসে পীরগাছার নিভৃত পল্লী থেকে। এখানে শত শত মহিলা শ্রমিক তাদের নিপুন হাতে তৈরী করেন এ পাখা। নানা পাখা মিলিয়ে প্রতিদিন এ বাজার শত শত পাখা বিক্রয় করেন বিক্রেতারা।