দ্বাদশ জাতীয়
সংসদ নির্বাচনে পিরোজপুর-১ আসনের নৌকার প্রার্থী মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল
করিমের কাছে বিপুল ভোটে পরাজিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি
একেএমএ আউয়াল।
এ পরাজয়ের প্রতিশোধ
নিতে ফলাফল ঘোষণার পর থেকেই বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে আউয়াল ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী। পাশাপাশি
আউয়াল পরিবারের সদস্যরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উস্কানিমূলক স্ট্যাটাস দিয়ে এসব সন্ত্রাসী
কর্মকাণ্ড করার জন্য তাদের পেটোয়া বাহিনীকে অনুপ্রেরণা দিচ্ছে।
তাদের উস্কানিতে
একের পর এক আউয়াল বাহিনীর সন্ত্রাসী হামলা ও অপহরণের শিকার হচ্ছে নৌকা প্রতীকের সমর্থক
ও নেতাকর্মীরা।
এসব হামলায়
আহত নৌকার ১৪ কর্মী-সমর্থক বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। আউয়াল বাহিনীর এমন
সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে পিরোজপুর-১ আসনের তিনটি উপজেলা জুড়ে জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
নির্বাচন শেষ
হলে ওই দিন রোববার (৭ জানুয়ারি) রাতে জেলার
ইন্দুরকানী উপজেলার বালিপাড়া ইউনিয়নে নৌকার কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা চালায় আউয়ালের
সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় তারা নৌকার পক্ষে কাজ করায় ১২ জনকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে
আহত করেছে।
এ হামলায় আহত
নৌকার সমর্থক হলেন- ছাত্রলীগ কর্মী রাহাত ব্যাপারী (১৮), সুমন শেখ (২৬), রাকিব গাজী
(২৫), মুগিজ শেখ (২০), রাব্বি খান (১৮), পারভেজ খান (২৩), আ.লীগ নেতা হেলাল খান (৪০),
রহিম ফকির (৫২), বাদল তালুকদার (৬০), সেলিম বয়াতী (৫০), আলম ডাক্তার (৫১) ও রুহুল তালুকদার
(৫৪)।
এ বিষয়ে ওই ইউনিয়নের নৌকা মার্কার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব মোয়াজ্জেম হোসেন হাওলাদার জানান, ভোটের ফলাফল জানাতে দেরি হলে আমার এর প্রতিবাদ করি। কিন্তু আউয়ালের ক্যাডার কবির চেয়ারম্যান ও তার লোকজন কোনো কারণ ছাড়াই আমাদের ওপর হামলা করে।
অভিযুক্ত ইউপি
চেয়ারম্যান কবির হোসেন বলেন, ‘ভোটের রেজাল্ট দিতে বিলম্ব হওয়ায় মোয়াজ্জেম ও তার লোকজন ভোটকেন্দ্রের
কলাবসিবল গেট ভাঙচুর করেন। বিষয়টি শুনে আমি কিছু লোকজন নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের থামানোর
চেষ্টা করি। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়, তবে কারো ওপর কোনো হামলা করা হয়নি।’
ইন্দুরকানী
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জামান তালুকদার জানান, ভোটকেন্দ্রের ফলাফল
দিতে দেরি হওয়ায় দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এ সময় উভয় পক্ষের
মধ্যে হাতাহাতি হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ ও বিজিবি গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে
এ ঘটনায় কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি।
অপরদিকে নাজিরপুর
উপজেলার শেখ মাটিয়া ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রামে মো. লাইজুর শেখ নামে নৌকার এক কর্মীকে
কুপিয়ে গুরুতর আহত করেছে আউয়াল বাহিনীর সদস্য আজাহার খাঁ ও তার সহযোগীরা। আহত মো. লাইজুর
শেখের বাড়ি শেখ মাটিয়া ইউনিয়নের ষোলশত এলাকায়। গুরুতর আহত মো. লাইজুর শেখকে প্রথমে
নাজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হয়। পরে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য
খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। গত সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে এ হামলা
হয়েছে।
একইদিন শেখ
মাটিয়া ইউনিয়নের ষোলশত গ্রামের নৌকার কর্মী মো. আল নোমান রনিকে হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ
করে আটকে রাখে একই ইউনিয়নের রঘুনাথপুর ৩নং ওয়ার্ডের হাবি খান ও তার লোকজন। হাবি খান
স্থানীয়ভাবে আউয়ালের সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্য বলে পরিচিত।
নাজিরপুর থানার
অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহ বলেন, আল নোমান রনিকে উদ্ধার করে অপহরণের সাথে জড়িত দুই
জনকে আটক করা হয়েছে। লাইজুর শেখের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
এছাড়া, পিরোজপুর
পৌর শহরজুড়ে আউয়ালের সন্ত্রাসী বাহিনীর অন্যতম প্রধান তার ছোট ভাই মুজিবুর রহমান খালেকের
ছেলে তানভীর মুজিব অভি ও পৌর কাউন্সিলর সাইদুল্লাহ লিটন মহড়া দিচ্ছে। তাদের পুরো কর্মকাণ্ড
পরিচালনা করেছেন আউয়ালে মেজো ভাই পৌর মেয়র হাবিবুর রহমান মালেক। তাদের এই সন্ত্রাসী
কর্মকাণ্ডে শহর জুড়ে আতঙ্ক ও জনমনে ভীতির সৃষ্টি হয়েছে, দিনের বেলাতেও শহরে নেমে এসেছে
সুনসান নীরবতা।
সন্তানকে নিয়ে
স্কুলে আসা এক নারী অভিভাবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নৌকার প্রার্থীর জয়ের পরে
শহরে যে তাণ্ডব শুরু হয়েছে তা ভীতিকর, সন্তানকে নিয়ে স্কুলে আসতে ভয় হচ্ছে, কখন কি
হয়।
শহরের সিআইপাড়া
মোড়ের এক রিকশা চালক জানান, আউয়াল-মালেক-খালেক-মহরাজের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় ভোট দিয়েছি।
কিন্তু আউয়াল পরাজিত হওয়ার পুরো পরিবারসহ তাদের সস্ত্রাসী বাহিনী যে অবস্থা শুরু করেছে
তাতে মনে হচ্ছে পিরোজপুর শহরে কেয়ামত শুরু হয়েছে।
পারেরহাট সড়কের
বাসিন্দা রিয়াজুল ইসলাম জানান, পিরোজপুরের শান্তি প্রিয় মানুষ চায় খলিফা (আউয়ালের পিতা
একরাম খলিফা) পরিবারের জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পেতে, আর এ কারণেই তারা নৌকায় ভোট দিয়ে
শ ম রেজাউল করিমকে বিজয়ী করেছেন। কিন্তু খলিফা পরিবার যা শুরু করেছে তাতে মনে হয় পিরোজপুরে
শান্তি আসতে সময় লাগবে।
রাজারহাটের এক বাসিন্দা জানান, মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে পিরোজপুরে অনেকগুলো নির্বাচন দেখেছি। কিন্তু নির্বাচন পরবর্তী যে সহিংসতা পিরোজপুরে শুরু হয়েছে তা নজীরবিহীন। আমরা এ থেকে পরিত্রাণ চাই।
পুলিশ সুপার
মুহাম্মদ শরীফুল ইসলাম বলেন, শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হচ্ছে। যেখানেই সহিংসতার
খবর পাওয়া যাচ্ছে সেখানেই নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছে। কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা
করতে দেয়া হবে না। যারাই বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করবে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
এ ব্যাপারে
পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান জানান, তিনি ঘটনা শুনেছেন। একজন অতিরিক্ত
জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তারা রিপোর্ট দেয়ার
পর তিনি বিস্তারিত বলতে পারবেন।