আজঃ শুক্রবার ২৪ মার্চ ২০২৩
শিরোনাম
ভোগান্তিতে সেবাপ্রার্থীরা

পিয়নরা সময়মতো আসলেও কর্মকর্তারা আসেন না

প্রকাশিত:শুক্রবার ১৭ মার্চ ২০২৩ | হালনাগাদ:শুক্রবার ১৭ মার্চ ২০২৩ | ৩২৫জন দেখেছেন
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি


Image

সকাল ৯টা বেজে ১৩ মিনিট সদর উপজেলার অধিকাংশ অফিসে তালাবদ্ধ। একটু পরেই চারজন লোক এসে অফিস খোলেন। তিনি নিজেকে অফিস সহকারী হিসেবে পরিচয় দিয়ে বলেন একটু দেরি হয়ে গেছে। অফিসের আর কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী তখনও আসেননি। ৯টা বেজে ১৫ মিনিটে সমাজ সেবা অফিসের দরজায়ও তালা দেখা যায়। বেশিরভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী সকাল ৯টার মধ্যে কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত হচ্ছেন না। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন সেবাপ্রার্থীরা।

সময়মতো অফিসে উপস্থিত থাকার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গত মাসে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়। শীর্ষ পর্যায় থেকে দেওয়া এ নির্দেশনা কতটা পালন হচ্ছে, তা জানতে গত রবি-সোম-মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত উপজেলার দপ্তরগুলোতে সরেজমিনে গিয়ে এ তথ্য জানা গেছে।

সরকার ঘোষিত সময় সকাল ৯টায় অফিসে কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের উপস্থিত হতে বলা হলেও বাস্তবে অনেক কর্মকর্তা ও কর্মচারিকে নির্ধারিত সময়ে অফিসে পাওয়া যায়নি। উপজেলা সমাজসেবা অফিসারের কার্যালয়ে মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) সকাল ৯ টায় ২০ মিনিটেও অফিসে কর্মকর্তা শরিফুল ইসলামকে পাওয়া যায়নি। পরে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে অফিসে আসেন তিনি। এসময় তিনি বলেন, সকালে রেডিও সেন্টারে আমার একটি অনুষ্ঠান ছিলো তাই সেখানে  ছিলাম।

সকাল পৌঁনে ১০ টা। উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো: রেজাউল করিমকে না পেয়ে মুঠোফোন দিয়ে কল করা হলে তিনি জানান, আমি আসন্ন পৌর সভার উপ-নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্বে রয়েছি। সকাল ৯ টা বেজে ৪৮ মিনিট। সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নরেশ চন্দ্র রায়কে অফিসে পাওয়া যায়নি। অফিসে কর্মরত টিএফপি এ রাখি দাস বলেন, স্যার এখনো অফিসে আসেনি। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই আসবেন। সকাল সাড়ে ১০টা। উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কার্যালয়ে গেলে উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও সহকারী প্রকৌশলী কর্মকর্তাকে না পেয়ে সহকারী প্রকৌশলী আফাজ উদ্দিনকে কল করলে তিনি বলেন, আমি বাসায় আছি। সঠিক সময়ে অফিসে পাওয়া যায়নি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রহমান কেউ।

এছাড়াও অফিসে পাওয়া যায়নি উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন কেউ। সহকারী পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা আব্দুর খালেকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন হয়তো কিছুক্ষণে অফিসে চলে আসবেন। আর উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা শারমিন আকতার অসুস্থতা জনিত কারণে ছুটিতে আছেন বলে জানান তার অফিস সহকারী।

সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আয়শা আক্তারের কার্যালয়ে গেলে তাকে না পেয়ে তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। বেলা প্রায় পৌনে ১১ টায় তার অফিসে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা খালিদুজ্জামন এসেও তাকে পাননি। খালিদুজ্জামনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমি এসে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে পাইনি। তার খোঁজ নিতে হবে। তিনি ফিলডের কাজেও বাইরে থাকতে পারেন বলে জানান তিনি। উপজেলা ই-তথ্য সেন্টার ও খোলা হয় সকাল সাড়ে ৯ টার পরে। ই-তথ্য সেন্টার রেজাউল করিম বলেন, কাল অনেক রাত পর্যন্ত কাজ করেছি তাই আজকে সেন্টার খুলতে একটু দেরি হয়েছে। এছাড়া আমরা প্রতিদিন ৯ টার মধ্যেই সেন্টার খুলি।

অন্যদিকে বেলা ১১টার পরে জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের কার্যালয়ে নিয়ে দেখা যায়, অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিন্নাতারা ইয়াছমিনও অফিসে আসেননি।

দপ্তরের অফিস সহকারী স্বপন জানান, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গত ১২ মার্চ থেকে ঢাকা এক কর্মশালায় আছেন।

সদর উপজেলা থেকে আরাজী পাহারভাঙ্গা থেকে এক বৃদ্ধা এসেছেন সমাজসেবা অধিদপ্তরে বয়ষ্ক ভাতার কাগজ ঠিক করতে। তিনি বলেন, অফিসার নাই তাই বসে আছি। তিনি আসলে কাগজগুলো জমা দিতাম।

ফয়সাল আহম্মেদের বাড়ি সদরের ভুল্লিতে তিনি সকাল ৯টায় উপজেলার সমাজসেবা কার্যালয়ে এসেছেন একটি আবেদন ফরম জমা দিতে। কিন্তু অফিসে কাউকে না পেয়ে অফিসের পাশেই একটি জায়গায় বসে অপেক্ষা করে বলেন, সকাল সকাল অফিস শুরু তাই সকালেই আসছি। কিন্তু এসে কাউকে পাইনি। সকাল সাড়ে ৯টার বেশি বেজে গেলেও এখনও কেউ নেই অফিসের পিয়ন ছাড়া। ভাবছিলাম সকাল সকাল কাজ সেরে আরেকটি কাজে যাবো। কিন্তু সেটা আর হলো না।

এসময় বিভিন্ন অফিসে সেবা নিতে আসা অনেকেই বলেন, সকালেই আসছি যাতে তাড়াতাড়ি কাজটি শেষ করা যায়। কিন্তু সকালে এসে কাউকে পাওয়া যায় না ১০টার আগে।

নিউজ ট্যাগ: ঠাকুরগাঁও

আরও খবর