পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার সিংখালী গ্রামে নানা বাড়িতে জন্ম নেয়া শামছুন্নাহার স্মৃতিই বর্তমান সময়ের ঢালিউডের আলোচিত-সমালোচিত চিত্রনায়িকা পরীমণি। গত ৪ আগষ্ট র্যাব কর্তৃক বিপুল পরিমান দেশি বিদেশী মাদক সহ আটক হয়। তার বিলাশবহুল বনানীর ফ্লাটে সন্ধান মিলেছে মিনি বার। উদ্ধার করা হয়েছে বিদেশী মদ, আইচসহ বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য। পরে তাকে মাদক মামলায় আদালতের মাধ্যমে ৪ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
চিত্রনায়িকা পরীমণির আসল নাম শামছুন্নাহার স্মৃতি। পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ার উপজেলার ৪নং ইকড়ি ইউনিয়নের সিংখালী গ্রামের নানা বাড়িতে তার জন্ম। এসএসসি পরীক্ষার সনদ অনুযায়ী ১৯৯২ সালের ২৪ অক্টোবর শামছুন্নাহার স্মৃতি (পরীমণি) জন্ম গ্রহণ করেন। বাবার বাড়ি নড়াইল হলেও পরীর জন্ম শৈশব কৈশর সবকিছুই কেটেছে এখানে।
পরীমণির নানী মৃত ফাতিমা বেগম ভান্ডারিয়ার উপজেলার ১০৩নং দক্ষিণ সিংখালী বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (বর্তমানে সরকারি) প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন। পরীমণির প্রাথমিক শিক্ষা শুরু সেখানেই।
সেই বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক পরীমণির চাচাতো নানা বেলায়েত হোসেন গাজী জানান, স্মৃতি (পরীমণি) ঐ স্কুল থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি পেয়েছিল।
সিংখালী গ্রামে পরীমণির জন্ম স্থান গাজী বাড়িতে রয়েছে সাজানো গোছানো একতলা একটি পাকা বাড়ি। বাড়িতে পরীমণির ছোট খালা ও খালু থাকেন। সাবেক শিক্ষক পরীমণির নানা সামছুল হক গাজী ঢাকায় নাতনী পরীমণির বাসাতেই থাকছেন।
জানা গেছে, নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার সালাবাদ ইউনিয়নের বাকা গ্রামের মো. মনিরুল ইসলাম ভান্ডারিয়া উপজেলার সিংখালী গ্রাম সংলগ্ন পাশ্ববর্তী মঠবাড়িয়া উপজেলার ভগীরথপুর বাজারে পুলিশ ফাঁড়িতে কনস্টেবল পদে চাকুরী করতেন। চাকুরির সুবাদে পুলিশ ফাঁড়ির অদূরে সিংখালী গ্রামের সামছুল হক গাজীর বড় মেয়ে সালমা সুলতানাকে বিয়ে করেছিলেন তিনি। মনিরুল সালমা দম্পতির একমাত্র মেয়ে শামসুন্নাহার স্মৃতি ওরফে পরীমণি। পরীর নানা সামছুল হক গাজী ভগীরথপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক এবং ইংরেজি শিক্ষক ছিলেন। স্মৃতির বয়স যখন তিন বছর তখন তার মায়ের মৃত্যু হয়। ২০১২ সালে দুর্বৃত্তদের হাতে পরীমণির বাবা মো. মনিরুল ইসলাম নিহত হন। নানা-নানীর কাছে বড় হওয়া স্মৃতি পঞ্চম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর ভান্ডারিয়ার পাশ্ববর্তী মঠবাড়িয়া উপজেলার ভগীরথপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেন। তিনি ২০১০ সালে মানবিক বিভাগে এসএসসিতে অকৃতকার্য হন। পরের বছর ২০১১ সালে জিপিএ ৩.৩৮ পেয়ে পাস করেন বলে নিশ্চিত করেছেন ভগীরথপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন। তার এসএসসি’র পরীক্ষা কেন্দ্র ছিল ভান্ডারিয়া বন্দর সরকারি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এলাকাবাসী জানান, পরীমণি ভগীরথপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণিতে লেখাপড়াকালীন সময় পাশ্ববর্তী মঠবাড়ীয়া উপজেলার ভগীরথপুর এলাকার ব্যাংক কর্মকর্তা জাকির জোমাদ্দারের ছেলে মো. ইসমাইল হোসেন জমাদ্দারের সাথে প্রেমের সম্পর্কে ঝড়িয়ে পড়ে। ২০০৯ সালে নবম শ্রেণিতে উঠলে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। প্রায় ৪ বছর স্বামী-স্ত্রী হিসেবে তারা বসবাস করেন। পরে পরীমণি ইসমাইলের সাথে দাম্পত্য সর্ম্পক চুকিয়ে ফেলেন। বর্তমানে ইসমাইল হোসেন চট্টগ্রামে বসবাস করেন বলে জানা গেছে।
শোনা যায়, বিয়ের কয়েক বছর পরে অন্য আরেক ছেলের সাথে সম্পর্ক গড়ে উঠে পরীমণির। ২০১১ সালে এসএসসি পরীক্ষা পাশের পরে স্মৃতি ওরফে পরীমণি নানা বাড়ি থেকে চলে যান। সে সময়ে এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে পরীমণি নানা সামছুল হক গাজীর তত্বাবধানে ঢাকায় চলে যান। ঢাকায় তিনি বুলবুল ললিতকলা একাডেমি (বাফা)’য় নাচ শিখেন। এরপর পরীমণি মডেলিং এর মাধ্যমে একপর্যায়ে ”ভালবাসা সীমাহীন” নামে চলচিত্রের মাধ্যমে চিত্রজগতে পা রাখেন।
পরীমণির আটকের পরে সিংখালী গ্রামের মানুষের মধ্যে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। নাম প্রকাশে অনচ্ছিুক এলাকাবাসী জানান, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সময় থেকেই পরীমণির মধ্যে উচ্চবিলাশী মনমানষিকতা কাজ করতো।
পরীমণির নানা বাড়ি সিংখালী গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, তার নানা বাড়ি বিশাল প্রাচীর ঘেরা এক তলা বিশিষ্ট পাকা বাড়িটি বর্তমানে তালাবদ্ধ। ওই ঘরে তার খালু জসিম হাওলাদার ও খালা তাসলিমা পাপিয়া থাকতেন। প্রতিবেশী আব্দুর রহমান হাওলাদার জানান, পরীমণিকে নিয়ে ঝামেলা হওয়ায় তার খালু-খালা বাড়িটি তালাবদ্ধ করে অন্যত্র চলে গেছেন। হয়তো তারা ঢাকাতে গেছেন। আর নানা সাবেক ইংরেজী শিক্ষক মো. সামছুল হক গাজী পরীমণির সাথে ঢাকাতেই বসবাস করছেন।