পিরোজপুরের নাজিরপুরে আওয়ামী লীগের সম্প্রীতি সমাবেশে প্রশাসনকে হুমকি দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সাংসদ এ কে এম এ আউয়াল।
গতকাল রোববার বেলা তিনটা থেকে রাত পৌনে আটটা পর্যন্ত উপজেলা সদরের স্বাধীনতা মঞ্চে ওই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার পর ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগ এই সম্প্রীতি সমাবেশের আয়োজন করে।
সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেওয়ার সময় এ কে এম এ আউয়াল নাজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) উদ্দেশে বলেন, ‘দেশে আওয়ামী লীগের সরকার। সেই দলের আমি জেলা সভাপতি। আমার কথা শুনবেন না, শুনবেন খুনিদের কথা। সেটা শোনা যাবে না।’
এ সময় তিনি আরো বলেন,‘ আপনাদের যাঁরা গুরু, তাঁরা কিন্তু আমাকে স্যার বলেন। আমি ডকুমেন্ট তৈরি করে ফেলেছি। আপনারা কে কোথায় কী বলেন। কার নামে কাজ নিয়েছেন। কে কাজ তৈরি করে, আমি জানি। সব রেকর্ড কাগজ-কলমে কথা বলবে। যদি কাজ শুরু হয় এগোতে পারবেন না।’
তার ওই বক্তব্যে উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সোমবার উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরে তার ওই বক্তব্য নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে।
এ সময় তিনি নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে উপস্থিত জনতাকে ধর্মীয় প্রতিজ্ঞা করিয়ে বলেন, ‘আপনারা নৌকার পক্ষে কাজ করবেন ও ভোট দিবেন’। ওই সমাবেশে উপস্থিত বক্তাদের মধ্যে জেলা আ.লীগের দপ্তর সম্পাদক শেখ ফিরোজ আহম্মেদ ছাড়া সকলেই নৌকার পক্ষে ভোট চান। ওই সমাবেশে উপজেলার দীর্ঘা, শাঁখারীকাঠী ও শ্রীরামকাঠী ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীরাও ভোট চেয়ে বক্তব্য রাখেন।
উপজেলার শ্রীরামকাঠী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ছিদ্দিকুর রহমান তুহিন (চশমা প্রতীক) অভিযোগ করে বলেন, রোববার বিকালে সম্প্রীতি সমাবেশের নামে শ্রীরামকাঠীসহ উপজেলার ৩ ইউনিয়নের আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্ধারিত প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাওয়া ও বিরোধী মতাদর্শের ভোটারদের হুমকি-ধামকি দেয়া হয়েছে। ভোটারদের প্রতিজ্ঞা করিয়ে ভোট চাওয়ায় তাদের ভোটাধিকার ক্ষুন্ন করা হয়েছে। একই অভিযোগ উপজেলা ৩ ইউনিয়নের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ছিদ্দিকুর রহমান জানান, নির্বাচনের আগে প্রার্থীর পক্ষে কোন বড় জনসমাবেশে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়। তবে ওই সমাবেশের অনুমতি দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, আ.লীগের পক্ষে সম্প্রীতি সমাবেশের কথা বলে সমাবেশের অনুমতি নেয়া হয়েছে। নির্বাচনী সমাবেশের কথা বলা হয় নি।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মণীন্দ্র নাথ মজুমদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সমাবেশে বক্তব্য দেন নাজিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অমূল্য রঞ্জন হালদার, মঠবাড়িয়া পৌরসভার মেয়র রফিউদ্দিন আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কানাই লাল বিশ্বাস প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ১১ নভেম্বর নাজিরপুর উপজেলার শ্রীরামকাঠি, শাঁখারিকাঠি ও দীর্ঘা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সম্প্রীতি সমাবেশে আউয়াল উপস্থিত জনতাকে শপথ করিয়ে বলেন, ‘আপনারা নৌকার পক্ষে কাজ করবেন ও ভোট দেবেন।’ সমাবেশে বেশির ভাগ বক্তা নৌকার পক্ষে ভোট চান। সমাবেশে উপজেলার শ্রীরামকাঠি, শাঁখারিকাঠি ও দীর্ঘা ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীরাও ভোট চেয়ে বক্তব্য দেন। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে তাঁরা বড় ধরনের সমাবেশের আয়োজন করে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ভোট চান। এসব ঘটনায় উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও ইউপি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।