মহেশপুর(ঝিনাইদহ)প্রতিনিধি:
দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে একজন ঠিকাদার ঝিনাইদহের
মহেশপুর ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা হাসপাতালে রোগীদের খাবার সরবরাহ করে আসছেন। একটানা
১৭ বছর একই ঠিকাদার খাবার সরবরাহের কারণে ঠিকাদারের কাছে জিম্মি রোগীরা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের
সরবরাহ খাবারের মান ও পরিমাপ নিয়ে একাধিকবার প্রশ্ন উঠলেও উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে
চাপিয়ে দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে গেছে কর্তৃপক্ষ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকারি বরাদ্দে যে
খাবার সরবরাহ করার তালিকা রয়েছে, সেসব খাবার কখনো পূরণ না করে নিম্নমানের খাবার পরিবেশন
করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন এখানকার রোগীরা।
সরকার নির্ধারিত বরাদ্দে (২০২২-২০২৩) অর্থছরের
তালিকা অনুয়ায়ী প্রতিটি রোগীর জন্য সকালের নাস্তা রুটি, কলা, ডিম- ৩৯ টাকা, দুপুরে
ও রাতে মাছ, সবজি, ডাল ও সাপ্তাহে ৩ দিন মাংস- ১৩৬ টাকা। দিন প্রতিজন রোগীর জন্য ১৭৫
টাকা বরাদ্ধ থাকলেও যে ধরনের খাবার এবং যে পরিমাণ খাবার সরবরাহ করার কথা, রোগীরা সে
পরিমাণ খাবার পাচ্ছেন না। পরিমাপে কম ও পরিবেশন
করা সকল খাবারই নিম্নমানের।
মাংস তো দুরের কথা মোটা চালের ভাত, নামে
মাত্র মাছ, পঁচা-বাসি তরকারিসহ নিম্নমানের খাবার পরিবেশন ও পরিমাণে কম সরবরাহ করে মোটা
অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী রোগীরা।
রোগীর স্বজন ও রোগীরা জানান, প্রতিদিন
হাসপাতাল থেকে যে পরিমান খাবার দেওয়া হয় তা অতি সামান্য ও নিম্নমানের যা অনেকে খেতে
পারেন না। অনেকে খাবার নেন না। আবার কেউ কেউ খাবার নিলেও রোগীরা খান না। নির্ধারিত
পরিমানে মানসম্মত খাবার সরবরাহের দাবি তাদের।
মহেশপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা
জানান, বর্তমান সরকার সেবাখাতকে জনকল্যাণমূলক করতে নানা কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। হাসপাতালে
যারা ভর্তি থাকেন তাদের বেশিরভাগই গরীব রোগী। তাদের চিকিৎসার পাশাপাশি খাদ্য সরবরাহ
একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। খাবারের মান নিয়ে যেহেতু রোগীদের অভিযোগ রয়েছে, তাই এতে সরকারের
ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে।
খাবার সরবরাহকারী ঠিকাদার মো.হাচান আলী
বলেন, টেন্ডারের খাবার তালিকা অনুযায়ী প্রতিজন রোগীর জন্য ১৭৫ টাকা বরাদ্ধ থাকলেও শতকরা
২৫% ভ্যাটসহ অন্যদিকের খরচ বাদ দিয়ে কত টাকা থাকে আপনি বলেন? তারপরও বাজারের যে অবস্থা
এর চাইতে রোগীদেরকে আর কি খাওয়াবো?
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একাধিক
কর্মচারী বলেন, নামে মাত্র কাগজে কলমে খাবারের তালিকা থাকলেও আজ পর্যন্ত কোন ঠিকাদারি
প্রতিষ্ঠান খাবারের তালিকা অনুযায়ী রোগীদেরকে খাবার দেয়নি। তারা আরও বলেন এনিয়ে বেশি
কিছু বলতেও পারি না যদি কোনো ঝামেলা করে।
নিম্নমানের খাবার পরিবেশনের বিষয় জানতে
চাইলে আরএমও ডা.সুলতান আহম্মেদ বলেন, আমি দায়িত্বে থাকলেও বিষয়টি সম্পূর্ণ দেখভাল কারেন
স্যার(টিএইচও)। তারপরও তিনি খোজ খবর নিয়ে দেখবেন বলে জনান।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা
মাহমুদ বিন হেদায়েত বলেন, প্রতিদিন খাবারের মান ও পরিমাপ পরীক্ষা করা হয়। নিম্নমানের
খাবার দেওয়া তো প্রশ্নই ওঠে না।