স্বপ্নের সেতুর পথচলা শুরু হতে না হতেই একের পর এক
বিপত্তির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। পদ্মা সেতুতে উঠে নাট খুলে এক যুবক টিকটিক ভিডিয়ো করায়
তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আবার বাইক দুর্ঘটনায় দুই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু যে
সেতু ঘিরে এত চর্চা, সেই সেতুর নকশা করেছেন কে?
প্রায় দু’যুগের পরিকল্পনার ফসল পদ্মা সেতু। যা দেশের
টাকাতেই তিল তিল করে নির্মাণ করা হয়েছে।এই সেতুটি গড়তে নিজেদের শ্রম উজাড় করে দিয়েছেন
দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞরা।
এই প্রকল্পের
পরিচালক মোঃ শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, পদ্মা সেতুর নকশা, নির্মাণ কাজ কারও একার কৃতিত্বে
হয়নি। বহু মানুষের অনেক অবদান রয়েছে।পদ্মা সেতুর নকশার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল নিউজিল্যান্ডের
এইসিওমকে।
২০০৯ সালে হংকংয়ে
ওই সংস্থার নেতৃত্বে পদ্মা সেতুর নকশা তৈরির কাজ শুরু হয়। তবে তাদের সঙ্গে ছিল অস্ট্রেলিয়ার
এসমেস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, কানাডার নর্থ ওয়েস্ট হাইড্রলিক কনসালটেন্টস ও বাংলাদেশি
এসিই কনসালটেন্টস লিমিটেড।
জানা গিয়েছে,
পদ্মা সেতুর নকশায় এইসিওম টিমের নেতৃত্ব দিয়েছেন ব্রিটিশ নাগরিক রবিন শ্যাম। নকশা প্রণয়নে
ব্যবস্থাপক হিসেবে এসমেক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের হয়ে কাজ করেন অস্ট্রেলিয়ার কেন হুইটলার।
পদ্মার মতো খরস্রোতা
নদীতে সেতু নির্মাণে ঝক্কি ছিলই। নদীর সঙ্গে তাই সামঞ্জস্য রেখে কী ভাবে সেতু তৈরি
হবে, তার নকশা তৈরি করেছেন কানাডার ব্রুস ওয়ালেস। তাঁর সঙ্গে ছিলেন জার্মানি ও আমেরিকার
বিশেষজ্ঞরাও।
পদ্মা সেতুতে
১৬ হাজার টাকা দামের সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে।পদ্মা সেতু তৈরির জন্য ১১ সদস্যের বিশেষজ্ঞ
কমিটি তৈরি করা হয়েছিল। সেতু সংক্রান্ত যে কোনও বিষয়ে এই কমিটির মতামত ছিল চূড়ান্ত।
বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ
কমিটির প্রধান ছিলেন অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী। তাঁর মৃত্যুর পর ওই কমিটির প্রধান
হন অধ্যাপক শামীম জেড বসুনিয়া। এ ছাড়া এই কমিটিতে ছিলেন জাপানের দু’জন, নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক ও আমেরিকার
এক বিশেষজ্ঞ।
পদ্মা সেতুর নকশা,
পরিকাঠামো, পাইলিং বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বা কনসালটেন্টদের পরামর্শের বিষয়ে এই
কমিটি চূড়ান্ত মতামত দিয়েছে। সে ভাবেই বাস্তবায়ন করা হয়েছে।এই কমিটি ছাড়াও স্টিয়ারিং
কমিটি ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি ছিল।
পদ্মার মতো খরস্রোতা
নদীর উপর সেতু নির্মাণের কাজ যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং ছিল। সেতু তৈরি করতে গিয়ে একাধিক জটিলতা
দেখা গিয়েছিল। এমনকি, সেতুর নকশাও বদল করা হয়েছিল।
পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজের
তদারকি দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের রবার্ট জন এভস।পদ্মা সেতুর পুরো নির্মাণকাজ
দেখভালের দায়িত্ব ছিল কোরিয়ার সংস্থা এক্সপ্রেসওয়ে কর্পোরেশনের উপর।সেতু নির্মাণের
কাজ পেয়েছিল চিনের মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং।
পদ্মা নদীর দুই
পাড়ের সংযোগ (সড়ক ও সার্ভিস এরিয়া) তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল বাংলাদেশি সংস্থা
আব্দুল মোনেম লিমিটেড। মালয়েশিয়ার একটি সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে তারা কাজ করেছে। পদ্মা
সেতু নির্মাণের সঙ্গে কমপক্ষে ২০টি দেশের নাগরিকরা জড়িত ছিলেন। প্রকল্প বাস্তবায়নের
সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন ১৩৮ জন ব্যক্তি। পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য (পানির অংশ) ৬.১৫ কিমি।
স্থলভাগের অংশ ধরে সেতুটির মোট দৈর্ঘ্য ৯ কিমির বেশি।
অন্য দিকে, পদ্মা সেতু চালু করার পর থেকেই যে ভাবে বিপত্তি ঘটছে, তাতে সাবধানী কর্তৃপক্ষ। পদ্মা সেতুর উপর দাঁড়িয়ে ছবি তোলা পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গাড়ি থামিয়ে হাঁটার ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।