বর্তমান সরকারের
চলতি মেয়াদে দুই হাজার ৩৭৩ জন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার গেজেট বাতিল হয়েছে। একই সময় বীর মুক্তিযোদ্ধা
হিসেবে নতুন করে ১০ হাজার ৬১৭ জনের গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। এ সময় তিন হাজার ৮১৬ জন
বীর মুক্তিযোদ্ধার গেজেট সংশোধনও করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির কার্যপত্র থেকে এ তথ্য পাওয়া
গেছে। বৈঠকে ২০১৯ থেকে ২০২৩ সময় পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা
কাউন্সিলের (জামুকা) মুক্তিযোদ্ধাদের সুযোগ-সুবিধাবিষয়ক প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়।
গেজেট বাতিল
ও নতুন গেজেট প্রকাশের বিষয়ে সংসদীয় কমিটির সভাপতি শাজাহান খান বলেন, বিএনপি-জামায়াত
সরকারের সময় অনেক অমুক্তিযোদ্ধাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সনদ দেওয়া হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে
যাচাই-বাছাই করে যেসব ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা পাওয়া গেছে, তাদের গেজেট বাতিল হয়েছে।
বর্তমান মেয়াদে
নতুন করে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রায় ১১ হাজার জনের গেজেট প্রকাশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন,
বিভিন্ন সময় বাদ পড়া মুক্তিযোদ্ধাদের আবেদন যাচাই-বাছাই করে তাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে
অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া বীরাঙ্গনা, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক,
মুজিবনগর সরকারের কর্মচারীদেরও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট প্রকাশ করা
হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০১৯-২৩ সময়কালে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অনুকূলে এক লাখ ৮২ হাজার ৩৫২ ডিজিটাল সার্টিফিকেট ও ৯৫ হাজার ২৪৫ স্মার্ট আইডি কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। শহীদ বা যুদ্ধাহত খেতাবপ্রাপ্ত ও বাকি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ডিজিটাল সার্টিফিকেট ও স্মার্ট আইডি কার্ড প্রস্তুতের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন বলেও উল্লেখ করা হয়।
আরও পড়ুন>> ইয়েমেনে অপহৃত জাতিসংঘ কর্মকর্তা সুফিউল আনাম উদ্ধার
এদিকে জাতীয়
মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, জামুকা এ পর্যন্ত ১০ হাজার
৮৯১ জন সাধারণ মুক্তিযোদ্ধার (বেসামরিক) গেজেটভুক্তির সুপারিশ করে এবং তিন হাজার ১৯০
জন অমুক্তিযোদ্ধা গেজেট ও সনদ বাতিলের সুপারিশ করে। কাউন্সিল মুজিবনগর সরকারের ১৪৬
জন কর্মচারী, ২৩৮ জন নারী বীর মুক্তিযোদ্ধা (বীরাঙ্গনা), ২৯ জন স্বাধীন বাংলা বেতার
কেন্দ্রে অংশগ্রহণকারী ও মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে গঠিত সাংস্কৃতিক সংগঠনের শব্দসৈনিক, ৪৪
জন বাংলাদেশ হাসপাতাল বিশ্রামগঞ্জ নির্মাণ ও চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী মেডিক্যাল টিমের
সদস্য, ৬৮৫ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এবং ১৫৫ জন যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাকে গেজেটভুক্তির
সুপারিশ করেছে।
এদিকে অসচ্ছল
বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ ও প্রয়াত যুদ্ধ বীরদের পরিবারের সদস্যদের জন্য সরকারি অর্থায়নে
বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার লক্ষ্যে ‘অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মাণ’ প্রকল্প গ্রহণ করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক
মন্ত্রণালয়। এ প্রকল্পের আওতায় দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় ৩০ হাজার বাড়ি নির্মাণ করার
লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর অংশ হিসেবে এ পর্যন্ত (৩১ জুলাই ২০২৩) ২৪ হাজার ৭৫০
বীর নিবাসের টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে এবং ২২ হাজার ২৮৫ বীর নিবাসের কার্যাদেশ প্রদান
করা হয়েছে, যা বিভিন্ন পর্যায়ে নির্মাণকাজ চলমান আছে। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে
৫ হাজার বীর নিবাস উদ্বোধন করেছেন।
জানা গেছে,
সংসদীয় কমিটির আগের বৈঠকে এসব বীর নিবাসে কারা বসবাস করছে বা করবে তা নিয়ে আলোচনা হয়।
ওই বৈঠকে কমিটির সদস্য মেজর (অব) রফিকুল ইসলাম (বীরউত্তম) বলেন, বীর নিবাস যাদের নামে
বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে, সেখানে কারা বসবাস করছে তা তদারকি করা দরকার। কারণ অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা
এখন নেই। সেই ঘরে যদি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীরা বসবাস করে, তা হলে এটার অবমাননা করা হবে।
তাই বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত।
জবাবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, বীর নিবাসে যারা থাকবে, তারা কেমন পর্যায়ের হতে হবে তা নিয়ে আগামী বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা করা যেতে পারে। যাদের নামে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হবে, তাদের একটি শর্ত দেওয়া যায় কিনা তা নিয়ে আলোচনা করা উচিত। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যুবরণ করলে তার উত্তরাধিকারীরা কীভাবে বীর নিবাস ব্যবহার করবে তা নির্ধারণ করতে হবে। পরে বীর নিবাস ব্যবহার নীতিমালা এবং একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যুবরণ করলে তার উত্তরাধিকারীরা কীভাবে বীর নিবাস ব্যবহার করবে তা নির্ধারণ বিষয়ে আগামী বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনার সুপারিশ করা হয়।
আরও পড়ুন>> বন্যা ও ভূমিধস মোকাবেলায় চট্টগ্রাম-বান্দরবানে সেনা মোতায়েন
জানা গেছে,
মঙ্গলবারের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। এ বিষয়ে জানতে
চাইলে কমিটির সভাপতি বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। সত্যি যদি কোনো বীর নিবাসে
স্বাধীনতাবিরোধীরা বসবাস করেন, সেটি মহান মুক্তিযুদ্ধকে অসম্মান করা হবে। এ জন্য আমরা
একটি নীতিমালা করতে বলেছি।
কমিটির সভাপতি
শাজাহান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ
ক ম মোজাম্মেল হক, মেজর (অব) রফিকুল ইসলাম (বীরউত্তম) এবং এ বি তাজুল ইসলাম অংশগ্রহণ
করেন।