ফেনীর দাগনভূঞা
উপজেলার মুহাম্মদ কাসিম আজাদ ১৯৮৭ সালে পাকিস্তান পাড়ি জমিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে মেহবুবা
নামে স্থানীয় এক নারীকে বিয়েও করেছিলেন। সে ঘরে জন্ম নিয়েছিল একটি কন্যা সন্তান। এরপর
দেশে ফিরেছিলেন কাসিম। দেশে আসার পর ২০০৪ সালে মৃত্যুবরণ করেন। এরপর পেরিয়ে গেছে দেড়
যুগের বেশি সময়। পাকিস্তানে জন্ম নেওয়া কাসিমের মেয়ে তাহরিম রিদাও বেড়ে ওঠেন। কিন্তু
বাংলাদেশে বাবার পরিবারের সঙ্গে তার কোনও সংযোগ ছিল না। শুধু জানতে ফেনী জেলায় বাবার
বাড়ি। বাবার নাম ও জেলা ছাড়া কিছুই জানতেন না। পিতৃ পরিচয় জানতে খোঁজ চালাতে থাকেন
রিদা।
দীর্ঘ ২২ বছর
পর বাংলাদেশ বাবার পরিবারের সন্ধান পেয়েছেন তিনি। পাকিস্তানে অবস্থান করে ফেনীর একটি
ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট দিয়ে সংযোগ স্থান হয়েছে বাবার পরিবারের সঙ্গে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার
(৯ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ সময় বিকাল ৩ টা ৫৭ মিনিটে তার ব্যক্তিগত আইডি থেকে রিদা ‘আমাদের ফেনী’ নামক একটি ফেসবুক গ্রুপে
স্ট্যাটাস দেন। সেখানে লেখেন, ‘আসসালামু আলাইকুম সবাইকে। আমি এখানে আমার বাবার পরিবার খুঁজতে এসেছি।
আমার বাবা ১৯৮৭ সালে পাকিস্তান এসে আমার মাকে বিয়ে করেছিলেন। ২০০৪ সালে তিনি মৃত্যুবরণ
করেন। তিনি বাংলাদেশের ফেনী থেকে এসেছিলেন। তার নাম ছিল মুহাম্মদ কাসিম আজাদ। আমার
দাদার নাম তফাজুল হক। যিনি সম্ভবত আমার পিতার শৈশবে মারা গেছেন।
আরও লেখেন, আমি আমার বাবার পরিবার সম্পর্কে খুব বেশি
বা প্রায় কিছুই জানি না। গ্রুপে নিজ চাচার একটি ছবি দিয়ে তিনি বলেন আবু সাদিক আমার
বাবার বড় ভাই। যদি কেউ এই পরিবার সম্পর্কে কিছু জানেন তবে আমার পরিবারের আমাকে জানাবেন।
আমি তাদেরকে কখনও দেখিনি।
কলেজে বা বাইরে
গেলে তার বাবার পরিচয় জানতে অনেকেই বিরক্ত করে। পিতৃপরিচয় না থাকায় অবহেলিত হতে হয়েছে
২২ বছর। তার বাবা পাকিস্তান থাকাকালীন তার মাকে বিয়ে করেন। পাকিস্তানে তার মাকে রেখে
দেশে গেলে অসুস্থ হয়ে মারা যান। এরপর তার পরিবারের সঙ্গে আর পরিচয় হয়নি।
পোস্ট দেওয়ার
২৩ মিনিটের মধ্যে তাহরিমের বাবার পরিবারের সন্ধান মেলে। জানা যায়, তার বাবার বাড়ি দাগনভূঞার
ফাজিলের ঘাটে। পোস্ট দেওয়ার ২৩ মিনিটের মধ্যেই তার ফুফু ও ফুফাতো ভাইয়ের সঙ্গে কথা
হয়।
তাহরিমের বাবা দেশে এসে তার মাকে চিঠি পাঠাতো। চিঠিতে উল্লেখিত ঠিকানা
সংগ্রহ করে তাহরিম ফেনী নামক শব্দটি পায়। পরে ফেনী গুগলে সার্চ করে জানতে পারে এটি
একটি জেলা। পরে ফেনী সার্চ করে ফেনী নামক গ্রুপটি পায়। এরপর যাবতীয় ডিটেইলসসহ
ফেসবুকে ইংরেজিতে পোস্ট করেন। এরপর ট্রান্সলেশন করে বাংলায় পোস্ট দেন অ্যাডমিন প্যানেল।
দাগনভূঞা থানার
ওসি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে তাহরিমের বাবার পরিবারের কাছে বার্তা পৌঁছে দেয়।
বর্তমানে তাদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন হয়েছে।
পিতৃপরিচয় পেয়ে
তাহরিম বলেন, ফেনীর মানুষ কে কী বলে ধন্যবাদ দেবো তা বলার ভাষা আমার নেই। আমাকে যারা
খুঁজে পেতে সহায়তা করেছে সবাইকে আল্লাহ নেক হায়াত দান করুক। খুব শিগগির আপনাদের সঙ্গে
দেখা হচ্ছে।