পাকিস্তানের
পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে অনাস্থা ভোটে পরাজিত হয়ে প্রধানমন্ত্রিত্ব হারিয়েছেন
ইমরান খান। এর মধ্য দিয়ে পতন হল তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) নেতৃত্বাধীন
জোট সরকারেরও। এদিকে প্রধানমন্ত্রী পদে জাতীয় পরিষদে বিরোধীদলীয় জোটের প্রার্থী শাহবাজ
শরিফ। এ পদে তাকে মনোনয়নও দেওয়া হয়েছে।
এই পদে সবচেয়ে
এগিয়েও রয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা ও পাকিস্তান মুসলিম লিগের (নওয়াজ) সভাপতি শাহবাজ। শনিবার
মধ্যরাতে অনাস্থা ভোটের পরই জাতীয় পরিষদে বক্তব্য দেন তিনি। পাকিস্তানের নতুন সরকার
রাজনীতিতে প্রতিহিংসা ছড়াবে না বলে মন্তব্য করেন শাহবাজ। আলজাজিরা ও রয়টার্সের
বক্তব্যের শুরুতেই
জোটের সব নেতাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান তিনি। বলেন, আমি অতীতের তিক্ততায় ফিরে যেতে চাই
না। আমরা তাদের ভুলে যেতে ও সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। আমরা প্রতিশোধ নেব না ও অবিচার
করব না। আমরা অকারণে মানুষকে কারাগারে পাঠাব না। আইন ও বিচার প্রক্রিয়া তার নিজস্ব
গতিতে চলবে।
শাহবাজ শরিফ
পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী পদে জাতীয় পরিষদে বিরোধীদলীয় জোটের প্রার্থী। আর্থিক
দুরবস্থা ও ভুল পররাষ্ট্রনীতির অভিযোগে ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিল এই
জোটের দলগুলোই।
ইমরান খানের
সম্ভাব্য উত্তরসূরি কে এই শাহবাজ শরিফ? তিনি শুধু পাকিস্তানের অন্যতম প্রধান বিরোধী
রাজনৈতিক নেতা নন। তার আরও একটি পরিচয় হল, তিনি দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের
ভাই। দেশের বাইরে শাহবাজ ততটা পরিচিত না হলেও দেশের ভেতরে প্রশাসনিক দক্ষতার জন্য তার
সুনাম আছে।
এ মুহূর্তে
পাকিস্তানের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে বিরোধী দলনেতার পদে থাকা শাহবাজের এর আগে প্রশাসনিক
প্রধানের দায়িত্ব সামলানোর অভিজ্ঞতা আছে। তিনবার পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর
পদে ছিলেন তিনি। এ পদে সবচেয়ে বেশি দিন থাকার কৃতিত্বও তারই আছে।
এছাড়া সাবেক
প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ দুর্নীতি সংক্রান্ত দুটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে লন্ডনে
চলে যাওয়ার পরই তার দল পিএলএম-এন পরিচালনার দায়িত্ব পান শাহবাজ।
১৯৯৯ সালে জেনারেল
পারফেজ মুশারফের নেতৃত্বে পাকিস্তানে সেনা অভ্যুত্থানের পর দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন
শাহবাজ শরিফ। ২০০০ সালে সৌদি আরবে নির্বাসনে থাকতে শুরু করেন তিনি। ২০০৭ সালে শাহবাজ
আবার পাকিস্তানে ফেরেন তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু করতে। ২০০৮ সালে নির্বাচনে জিতে
ফের পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হন।
শনিবার মধ্যরাতে
অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটিতে ইমরানের বিরুদ্ধে ভোট পড়ে ১৭৪টি। ৩৪২ আসনের জাতীয়
পরিষদে প্রস্তাবটি পাসের জন্য দরকার ছিল ১৭২ ভোট।
দেশের আর্থিক
দুরবস্থা ও ভুল পররাষ্ট্রনীতির অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা
প্রস্তাব আনে বিরোধী দলগুলো। এ অনাস্থা প্রস্তাবকে ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়ে ৩ এপ্রিল খারিজ করে দেন জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার কাসিম
খান সুরি। ওই দিনই প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট আরিফ
আলভি। এতে চরম রাজনৈতিক সংকটে পড়ে পাকিস্তান।
এ পরিস্থিতিতে
স্বতঃপ্রণোদিত নোটিশ দেন সুপ্রিম কোর্ট। বিরোধীরাও আদালতের শরণাপন্ন হন। টানা পাঁচদিনের
শুনানি শেষে গত বৃহস্পতিবার অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ ও জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত
অসাংবিধানিক ঘোষণা করেন সর্বোচ্চ আদালত। একইসঙ্গে শনিবার অনাস্থা প্রস্তাবের সুরাহার
নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চ। এত নাটকীয়তার
পর ইতিহাসে অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী হন ইমরান খান।