এক দশকে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের দুই ধরনের অপারেটিং সিস্টেমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হচ্ছে। হয় অ্যান্ড্রয়েড না হয় আইওএস। যেখানে আগে সিম্বিয়ান, ব্ল্যাকবেরিও এস, পাম ওএসসহ আরো অপশন ছিল। আইওএস ও অ্যান্ড্রয়েডের মধ্যে পরের অপারেটিং সিস্টেমটির বাজার বেশ বড়।
কেননা একমাত্র অ্যাপল ছাড়া সব স্মার্টফোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করে থাকে। তবে জেনারেশন জি বা নতুন প্রজন্মের ব্যবহারকারীদের জন্য অ্যান্ড্রয়েডের আধিপত্য হুমকির মুখে।
বর্তমানে অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ জেনারেশন জি। বিশেষ করে যাদের জন্ম ১৯৯৬ সালের পর তাদের জেন জি বা জুমার বলা হয়ে থাকে। সম্প্রতি ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের জেন জি ভোক্তারা সব ধরনের মোবাইল ডিভাইসের পরিবর্তে আইফোন ব্যবহারেই ঝুঁকছে।
জরিপের তথ্যানুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে ৩৪ শতাংশ আইফোন ব্যবহারকারী জেন জির অন্তর্গত। এর মাধ্যমে বাজারে স্যামসাংয়ের যে ১০ শতাংশ দখল ছিল তাও ধ্বংস হয়ে গেছে। জুমারদের আইফোন ব্যবহার বাড়ায় ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রতিষ্ঠানটির হিস্যা ৫০ শতাংশের বেশি ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৯ সালে যার পরিমাণ ছিল ৩৫ শতাংশ।
অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনের তুলনায় আইফোনের দাম তিন গুণ বা তারও বেশি। গড় দামও ১ হাজার ডলারের কাছাকাছি। কিন্তু এর পরও জুমারদের মধ্যে আইফোন কেনার আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। উত্তর আমেরিকায়ই যে শুধু আইফোনের ব্যবহার বাড়ছে তা নয়। ইউরোপে ৮৩ শতাংশ আইফোন মালিক তাদের ডিভাইস ব্যবহার অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছে।
অন্যদিকে এর অর্ধেকের কম অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারী একই ডিভাইস রাখার কথা জানিয়েছে। এককথায় এটি নিশ্চিত যে জেনারেশন জি অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস ব্যবহার থেকে সরে আসছে। যে কারণে ধীরে ধীরে অ্যান্ড্রয়েডের বাজারও কমতে থাকবে।
আইফোনের অন্যতম একটি সেবা আইমেসেজ। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে এ বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য, পর্যালোচনা ও পরিসংখ্যান রয়েছে। অ্যান্ড্রয়েডে আইমেসেজ সেভাবে ব্যবহার করা যায় না। যে কারণে জুমাররা যেকোনো মূল্যে আইমেসেজ ব্যবহারের জন্য আইফোন বা আইওএস ডিভাইস সংগ্রহের জন্য মুখিয়ে থাকে।
এ বিষয়ে বিভিন্ন লেখনি রয়েছে। একটি লেখনিতে দেখা যায় আইমেসেজের অনেক ব্যবহারকারী অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের কথোপকথন থেকে বাদ দিয়ে থাকে। এদিকে প্রচারণা ক্যাম্পেইনে রিচ কমিউনিকেশন সার্ভিসেস (আরসিএস) চালু না করায় অ্যাপলের সমালোচনা করছে গুগল।
যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে আইমেসেজ তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। কেননা অধিকাংশই মেসেজ আদান-প্রদানের জন্য হোয়াটসঅ্যাপের মতো থার্ড পার্টি পরিষেবা ব্যবহার করে থাকে। স্মার্টফোন বা অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারে তরুণরা কোন বিষয়গুলো প্রাধান্য দিয়ে থাকে সেগুলো সহজে নির্ধারণ করা যায় না। কারণ বিভিন্ন বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের পছন্দে পরিবর্তন আসে। এগুলোর মধ্যে জীবনযাপন পদ্ধতি, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থান অন্যতম। তবে এসবের বাইরে আইওএস ডিভাইস পছন্দের আরো কিছু কারণ আছে।
ডিজাইন ও ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা: আকর্ষণীয় ডিজাইনের জন্য তরুণদের কাছে অ্যাপলের জনপ্রিয়তা বেশি। বিশেষ করে যারা ছোট থেকে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে আসছে। ইউজার ফ্রেন্ডলি হওয়ায় আইওএস ডিভাইসের ভালো সুনামও রয়েছে। ফলে প্রযুক্তি সম্পর্কে যারা কম জানে তারাও এ ডিভাইস ব্যবহার করতে পারবে।
ব্র্যান্ড হিসেবে স্বীকৃতি: দীর্ঘ সময় বাজারে অবস্থানের মাধ্যমে ব্র্যান্ড হিসেবে অ্যাপলের ভালো সুনাম তৈরি হয়েছে। ফলে জেনারেশন জি বা জুমারদের অনেকেই আইওএস বা আইফোন ব্যবহারকে সম্মানের বলে মনে করে থাকে।
সামাজিক প্রভাব: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও আশপাশের চাপের কারণে অনেক সময় তরুণদের পছন্দে পরিবর্তন আসে। যদি কারো বন্ধু বা সমাজে প্রভাব বিস্তারকারী কেউ আইফোন ব্যবহার করে থাকে তাহলে আইওএসের জনপ্রিয়তা আরো বাড়বে।
গেমিং: বর্তমানে আইওএস প্লাটফর্মে অনেক বড় ও সমৃদ্ধ গেমিং ইকোসিস্টেম রয়েছে। আর তরুণরা মোবাইল গেম খেলার ব্যাপারে বেশ আগ্রহী। যে কারণে জুমারদের কাছে আইফোনের গ্রহণযোগ্যতা বেশি।
অ্যাপ স্টোর: আইওএসের অ্যাপ স্টোর কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ফলে এ প্লাটফর্মের ব্যবহারকারীদের ক্ষতিকর বা নিম্নমানের অ্যাপ ব্যবহার করতে হয় না। ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে এটি তরুণদের জন্য ইতিবাচক। কেননা অ্যাপ ডাউনলোডের সময় তা নিরাপদ ও বিশ্বাসযোগ্য কিনা সেটি গুরুত্বপূর্ণ।
নিরাপত্তা: সাম্প্রতিক সময়ে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও নিরাপত্তাকে মূল বিষয় হিসেবে গুরুত্ব দিচ্ছে অ্যাপল। এর মধ্যে অ্যাপ ট্র্যাকিংয়ে স্বচ্ছতা ও প্রাইভেট রিলে রয়েছে। তরুণ ব্যবহারকারীদের মধ্যে যারা অনলাইন নিরাপত্তার বিষয়ে সতর্ক তাদের জন্য আইওএস ডিভাইস আকর্ষণীয়।
জেনারেশন জি বা জুমারদের মধ্যে অনেকে অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসকেও প্রাধান্য দিয়ে থাকে। সাশ্রয়ীমূল্য, কাস্টমাইজ করার সুবিধাসহ বিভিন্ন ফিচারের কারণে অ্যান্ড্রয়েডের গ্রহণযোগ্যতাও রয়েছে। অনেকের কাছে ডিজাইন ও ব্র্যান্ডের তুলনায় এগুলোর প্রয়োজন বেশি। তবে সবার কাছেই যে সব বিষয় ভালো লাগবে তা নয়।
ব্যক্তিভেদে ফিচার, বাজেটসহ বিভিন্ন বিষয়ের পার্থক্য পছন্দে পরিবর্তন আনে। ঘটনা যা-ই হোক না কেন গুগল গুরুতর সমস্যার মধ্যে রয়েছে। সফটওয়্যার জায়ান্টটি যদি অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে চায় তাহলে জেন জি কে অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহার উৎসাহিত করতে হবে। তা না হলে ১০ বছর পর এর অস্তিত্ব থাকবে না এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষক ও গবেষকরা।