দেশব্যাপী চালের বাজারে অভিযান শুরু হওয়ার প্রায় দুই সপ্তাহেও স্বস্তি ফেরেনি খুচরা পর্যায়ে। জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে চালের বাজার অস্থির হতে শুরু করে। ব্যবস্থা নিতে খাদ্য অধিদপ্তর ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বাজারে অভিযানে নামে। কিন্তু মানভেদে চালের দাম পাইকারিতে প্রতি বস্তায় ৫০ থেকে ১০০ টাকা কমলেও খুচরায় এর প্রভাব পড়েনি।
বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও বনানী কাঁচাবাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।
কারওয়ান বাজারের ঢাকা রাইস এজেন্সির মালিক মো সায়েম বলেন, ‘চালের দাম গত সপ্তাহের মতো একই আছে। আমরা এর আগের সপ্তাহে মিনিকেট ৬১ থেকে ৬২ টাকা কেজি দরে কিনেছি। এখন কিনছি ৬৬ থেকে ৬৭ টাকা কেজি।
বিক্রি করছি ৭০ টাকা কেজি। গত সপ্তাহে মিনিকেট প্রতি বস্তা ছিল তিন হাজার ৬০০ টাকা। এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার ৫০০ থেকে তিন হাজার ৬০০ টাকা দরে। মোটা চাল ব্রি-২৮ গত সপ্তাহে মানভেদে বস্তাপ্রতি বিক্রি হয়েছে দুই হাজার ৭০০ থেকে দুই হাজার ৮০০ টাকা। এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৬০০ টাকা বস্তা।’
তিনি আরও বলেন, ‘বস্তায় ৫০ বা ১০০ টাকা কমলে সেটা খুচরা বাজারে কমবে না। পাইকার যদি আমার কাছে ৬৬ টাকা কেজি বিক্রি করেন, তাহলে তাঁর মিলগেটে কেনা ৬৪ টাকা কেজি। তখন ৬৮ থেকে ৭০ টাকা বিক্রি করব।’
বাজারের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, চালের দাম তো এখন কমবে না। কারণ তিন মাস পর এর মৌসুম। এখনকার ব্রি-২৮, মিনিকেটের ভাত ভালো হয় না। ব্রি-২৮ চাল এখন বিক্রি করার কথা ৪৮ থেকে ৫০ টাকা কেজি। কিন্তু সেটা বিক্রি হচ্ছে ৫৪ থেকে ৫৮ টাকায়। গত সপ্তাহে এই দামই ছিল। মিনিকেট আর ব্রি-২৮ চাল বেশি চলে। এই দুটিরই দাম বেড়েছে।
এদিন কারওয়ান বাজারে চাল আর সবজি কিনতে আসা মগবাজারের বাসিন্দা রায়হানুল আলম বলেন, ‘দেখেন, রোজার আগেই চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। আমাদের মজুদ করা চাল কি শেষ হয়ে গেছে? না, হয়নি। তাহলে এখন চালের দাম বেশি কেন? আমরা কোথায় যাব? কার কাছে অভিযোগ দেব। মিলার, পাইকাররা কারসাজি করে দাম বাড়ায়। প্রশাসন অভিযান চালাচ্ছে। কিন্তু কিছুই করতে পারছে না। মানে, আমাদের এভাবেই বেশি দামে সব পণ্য কিনে খেতে হবে। কিছু করার নেই।’
গুলশানের কালাচাঁদপুর বউ বাজারের ব্যবসায়ী মো হান্নান শেখ জানান, মোটা চাল ৫৫ টাকা কেজি, ব্রি-২৮ চাল ৫৫ টাকা কেজি, পাইজাম ৫৮ টাকা কেজি, নাজিরশাইল ৭৫ টাকা কেজি বিক্রি করছেন। ডালের দাম আগের মতোই রয়েছে। ভারতীয় মসুর ডাল ১১০ টাকা কেজি, দেশি ডাল ১৪০ টাকা কেজি।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার রাজশাহীতে এক মতবিনিময় সভায় বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের চালের দাম বাড়ানোর কোনো যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। অনেক মিলে ঘাস গজিয়ে উঠেছে, বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। এমন মিলেও অবৈধ মজুদ পাওয়া যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। আমরাও কঠোর অবস্থানে আছি। অবৈধ মজুদদারি যারা করে তারা যে দলের হোক, যত শক্তিশালী লোকের আত্মীয় হোক, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। হঠাৎ দাম বাড়িয়ে বাজার অস্থির করলে কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। মিলগেটে বিক্রি করা চালের বস্তায় তারিখ ও দাম উল্লেখ করতে হবে। সারা দেশে মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে।’
সবজির বাজারেও একই অবস্থা, বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে সবজি-
রাজধানীতে কিছু সবজির দাম সামান্য কমলেও বেশির ভাগের দাম চড়া। গুলশানের কালাচাঁদপুর বাজারের সবজি ব্যবসায়ী মো. আরিফুল জানান, টমেটো গত সপ্তাহে বিক্রি করেছেন ৬০ টাকা কেজি, এ সপ্তাহেও একই দাম। শিম ৬০ টাকা, আলু ৫০-৬০ টাকা কেজি, বেগুনের দাম বেড়েছে। গত সপ্তাহে ছিল ৬০ টাকা, এ সপ্তাহে বিক্রি করছেন ৮০ টাকা কেজি। গাজরের দাম কমেছে। গত সপ্তাহে গাজর ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি, এ সপ্তাহে ৪০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৮০ টাকা কেজি, চিচিঙ্গা গত সপ্তাহে ছিল ৬০ টাকা কেজি, এ সপ্তাহে ৮০ টাকা কেজি, ফুলকপি আকারভেদে গত সপ্তাহে ৫০ টাকা, এখন ৬০ টাকা।
অবশ্য দাম কমেছে শালগমের। গত সপ্তাহে ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি, এ সপ্তাহে ৪০ টাকা কেজি। আর ধুন্দল বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা, বাঁধাকপি ৩৫ টাকা, লাউ প্রতিটি ৮০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা কেজিতে।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে এলাকাভেদে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২১০ টাকা কেজি, সোনালি মুরগি ৩০০ থেকে ৩১০ টাকা কেজি। গরুর মাংস ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা কেজি, মুগডাল ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা কেজি, অ্যাংকর ৬৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি, ছোলা ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।