মুদি দোকানে অনেক টাকা বকেয়া পরে গেছে। বাসা ভাড়ার দেওয়া হয়নি কয়েক মাস।
এরই মধ্যে স্বামী নিরুদ্দেশ। চার সন্তানকে নিয়ে অথৈ সাগরে মা শিল্পী বেগম।
প্রতিবেশী এসে পরামর্শ দিল সদ্যভূমিষ্ঠ ছেলে সন্তানকে বিক্রি করে দেওয়ার। উপায় অন্তর না দেখে সেই কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হলো মাকে। অল্প টাকায় বিক্রি করে দিলো নাড়িছেঁড়া ধনকে। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে হৃদয়বিদারক এ ঘটনা ঘটে। মা শিল্পী বেগম জেলার গোয়ালপাড়া এলাকার রায়হানের স্ত্রী।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় এক যুগ আগে বিয়ে হয় তাদের। সংসারে আরও দুই
ছেলে ও একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। সংসারের অভাব আর শিল্পীর গর্ভে চতুর্থ সন্তান আসায়
আকস্মিকভাবে বাড়ি ছেড়ে চলে যায় স্বামী রায়হান। এতে তিন ছেলে-মেয়ের ভরন পোষণ আর বাসা
ভাড়ার টাকা জোগাড় নিয়ে বিপাকে পরেন ওই মা।
সন্তান গর্ভে থাকা অবস্থায় মানুষের বাসায় কাজ করে কোনোরকম দিনযাপন করতেন। এভাবে বাড়িওয়ালা ও মুদি দোকানে অনেক টাকা বকেয়া জমে যায়। তার কষ্ট দেখে প্রতিবেশীরা নানান পরামর্শ দেয়। কেউ একজন তাকে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য ভিন্ন পরামর্শ দেয়। কেউ দেয় সন্তান বিক্রির।
উপায়ন্তর খুঁজে ফিরেন মা শিল্পী। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার সদ্যভূমিষ্ঠ
চতুর্থ সন্তান অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে তাকে ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এদিকে, খবর পেয়ে নিঃসন্তান জসিম হাসপাতালে ছুটে আসেন। সামান্য অর্থে শিল্পীর
সন্তানকে নিয়ে নেন। এসময় একটি স্ট্যাম্পে লেখালেখি করে নেন উভয় পক্ষ। এর এ কাজে সন্তান
মানুষ করতে কষ্ট হবে ভেবেই সায় দেন মা।
জসিম জানান, তার বিয়ের বয়স ১৫ বছর। এখনও কোনো সন্তান হয়নি। চিকিৎসক
বলেছেন, তাদের সংসারে সন্তান হবে না।
নবজাতক বিক্রি করার কারণ জানতে চাইলে ওই মা বলেন, গেল আট মাসে বাড়ি ভাড়া
আর মুদি দোকানে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার টাকা বাকি বকেয়া জমেছে। এই টাকা দিতে পারছি না।
সন্তান বিক্রির সে অর্থ দিয়ে চাল-ডাল কিনেছি।
এ বিষয়টি অবগত নয় জানিয়ে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)
বেলায়েত হোসেন জানান, নবজাতক ক্রয়-বিক্রয়ের কোনো সুযোগ নেই। এটা অপরাধ। এমন কোনো
ঘটনা ঘটলে খতিয়ে দেখে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।