ঠাকুরগাঁওয়ে ভূমিষ্ঠ হওয়ার এক দিনের মাথায় মাত্র ৩০ হাজার টাকায় সন্তান বিক্রি করে দিলেন মা। অভাব আর সন্তানদের খাবার জোটাতেই এই পথ বেছে নিয়েছে বলে দাবি ওই গর্ভধারণীর। আজকের দর্পণ পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি নজরে আসে ঠাকুরগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বেলায়েত হোসেনের। এরপর অসহায় শিল্পীকে একটি ঘর ব্যবস্থা করে দেন তিনি।
শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) বেলা ১১টায় সদরের সালান্দর ইউনিয়নের বাতেন মোড় এলাকায় শিল্পীর হাতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের চাবি তুলে দেন ইউএনও। সেই সাথে শিল্পীর শিশু সন্তানকে তার কোলে ফিরিয়ে দিতে সকল প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করছে উপজেলা প্রশাসন।
এর আগে গতকাল বৃস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) বিকেলে বাড়ি ভাড়া ও মুদি দোকানের বকেয়া পরিশোধের জন্য সদ্য ভূমিষ্ঠ ছেলে সন্তানকে মাত্র ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন ঠাকুরগাঁও শহরস্থ গোয়ালপাড়ার স্বামী পরিত্যাক্তা শিল্পী বেগম।
শিল্পী বেগম জানান, প্রায় এক যুগ আগে বিয়ে হয় তার। সংসারে আরও দুই ছেলে ও একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। তবে চতুর্থ সন্তান গর্ভে আসার পরই তার স্বামী রায়হান হঠাৎ বাড়ি থেকে কোথায় চলে যায়। এরপর সংসার চালাতে বিপাকে পরে যান শিল্পী বেগম। সন্তান গর্ভে থাকা অবস্থায় মানুষের বাসায় কাজ করে কোনোরকম দিনযাপন করতেন। এভাবে বাড়িওয়ালা ও মুদি দোকানে অনেক টাকা বকেয়া জমে যায়। স্বামীর অনুপস্থিতি বিষয়টি জানতে পেরে গর্ভের সন্তান বিক্রির পরামর্শ দেয় স্থানীয় একটি দালাল চক্র। উপায়ন্তর না দেখে বাড়িভাড়া ও দোকানের বাকি পরিশোধ করতে নবজাতক সন্তান বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন তিনি। পরে নাম মাত্র মূল্যে বিক্রি করেন সন্তানকে।
শিল্পী বেগম আরও জানান, সন্তান বিক্রি করে সামান্য কিছু টাকা পেয়েছেন তিনি। সে অর্থ দিয়ে চাল-ডাল কিনেছেন। সন্তান মানুষ করতে কষ্ট হবে ভেবেই জসিম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছে সন্তান বিক্রির সিন্ধান্ত নেন তিনি।
গোয়ালপাড়া এলাকার বাসিন্দা আরিফ বলেন, গত বুধবার (২৫ অক্টোবর) ভাড়া বাসায় ছেলেসন্তানের জন্ম দেয় শিল্পী বেগম। পরদিন অসুস্থ হলে ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান। শুনেছি সেখানে জসিম উদ্দিন নামে এক ব্যক্তির কাছে ৩০ হাজার টাকায় সন্তান বিক্রি করে দেয় শিল্পী বেগম। তিনি খুব অসহায়। স্বামী নেই। হয়তো অনেকটা বাধ্য হয়েছেন এ কাজ করতে। না হলে কোনো মা এমন কাজ করতে পারে না।
কথা হয় একই গ্রামের শামিম এর সাথে। তিনি বলেন, স্বামী ছাড়া একটা মেয়ে বড় অসহায়। শিল্পী বেগম স্বামী চলে যাওয়ার পর অনেক কষ্টে দিন যাপন করছিলেন। তিন সন্তানকে ঠিকভাবে খাওয়াতে পারছিলেন না। তার ওপর আরও এক সন্তান তিনি কীভাবে মানুষ করবেন? তাই হয়তো তিনি সন্তানকে অন্যের হাতে তুলে দিয়েছেন। এতে দোষের কিছু দেখি না।
জসিম জানান, তার বিয়ের বয়স ১৫ বছর। এখনও কোনো সন্তান হয়নি। চিকিৎসক বলেছেন, তাদের সংসারে সন্তান হবে না। খোঁজ পেয়ে সামান্য অর্থে শিশুটিকে নিজের সন্তান হিসেবে নিয়েছেন।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, ঘটনাটা আমি শুনেছি। আজ সকালে শিল্পী বেগমকে সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘর দেওয়া হয়েছে। তার আর্থিক অনটন যেভাবে দূর করা যায়, এটার জন্য যা যা করা লাগে আমি তা করব। দ্রুতই মায়ের কোলে শিশুকে ফিরিয়ে দেয়ার পাশাপাশি দালাল চক্রকে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।