ঝালকাঠির ছত্রকান্দায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ১৭ জনের মৃত্যুর ঘটনায় ঘাতক বাসের চালক মোহন খানকে (৪০) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। বুধবার (২৬ জুলাই) ভোরে ঢাকার আশুলিয়া থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব জানায়, বরিশাল আঞ্চলিক মহাসড়কে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে বাশার-স্মৃতি নামে বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারায়। ওই বাসে যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ছিল ৪৫ জনের। কিন্তু বাসে প্রায় শতাধিক যাত্রী ছিল। অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়ার কারণেই বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারায়। এ ছাড়া বাসের ড্রাইভার মোহন খানের হালকা ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকলেও ভারী যানবাহন চালানোর জন্য তার লাইসেন্স ছিল না।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, গত ২২ জুলাই সকালে পিরোজপুর-বরিশাল আঞ্চলিক মহাসড়কে ঝালকাঠির ছত্রকান্দা নামক স্থানে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইকৃত বাশার-স্মৃতি নামের একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কের পাশে পুকুরে পড়ে দুর্ঘটনায় পতিত হয়। ওই দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত ও ৩৮ জন যাত্রী আহত হয়। মর্মান্তিক এ সড়ক দুর্ঘটনায় এলাকার মানুষ হতভম্ব হয়ে পড়ে। নিহতদের আআত্মীয়-স্বজনের কান্না ও আহাজারীতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ঝালকাঠি সদর থানায় সড়ক পরিবহন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই ঘটনায় র্যাব ঘাতক চালক এবং জড়িততে গ্রেপ্তার গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
কমান্ডার মঈন বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৮ এর আভিযানিক দল বুধবার ভোরে ঢাকার আশুলিয়া এলাকা থেকে সড়ক দুর্ঘটনায় জড়িত ঘাতক বাসচালক মোহন খানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এর আগে বাসের সুপারভাইজার মো. ফয়সাল ওরফে মিজানকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মুখপাত্র বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের চাকল মোহন খান জানায়, গত ২২ জুলাই বাশার-স্মৃতি পরিবহনের বাসটি সকাল ৯ টায় ভান্ডারিয়া থেকে বরিশাল যাওয়ার উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে যাত্রা শুরু করে। ভান্ডারিয়া থেকে বরিশালে যাওয়ার পথে বিভিন্ন স্টপেজ হতে বাসটিতে আরও যাত্রী উঠানো হয়৷ বেপরোয়া গতিতে গাড়িটি চালাতে থাকে। পরবর্তীতে ঝালকাঠির ছত্রকান্দা নামক স্থানে পৌঁছালে গাড়িতে অতিরিক্ত যাত্রী বহন ও অতিরিক্ত গতির কারণে ড্রাইভার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কের পাশের পুকুরে গাড়ি নিয়ে দুর্ঘটনায় পতিত হয়। এ সময় ফায়ার সার্ভিস, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ স্থানীয় জনগণ উক্ত দুর্ঘটনায় পতিত বাসটির ভিতর হতে ৫৫ জন যাত্রীকে উদ্ধার করে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ১৭ জনকে মৃত ঘোষণা করেন। এদের মধ্যে ৮ জন নারী, ৬ জন পুরুষ ও ৩ জন শিশু। অবশিষ্ট ৩৮ জন আহত যাত্রীকে ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল ও বরিশালের শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার মোহন ৩ বছর যাবত বিভিন্ন ধরনের গাড়ি চালাচ্ছিল। তার হালকা যানবাহন চালানোর ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকলেও ভারী যানবাহন চালানোর কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। এ ছাড়াও বাশার-স্মৃতি পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো ব-১১-৬৫৪৯, যাত্রী ধারণ ক্ষমতা-৪৫ সিট) ফিটনেস সার্টিফিকেট থাকলেও গাড়ির ফিটনেস ভালো ছিল না এবং মিটার নষ্ট ছিল। ওই দুর্ঘটনার পর চালক কৌশলে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় ঝালকাঠি, টঙ্গী, গাজীপুর, সাভার ও আশুলিয়া এলাকায় তার বিভিন্ন আত্নীয়ের বাসায় আত্মগোপনে থাকে। আত্মগোপনে থাকাবস্থায় আশুলিয়া থেকে র্যাব তাকে গ্রেপ্তার করে।