বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় হামুন আরও শক্তি সঞ্চয় করে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে বাংলাদেশের উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর সবশেষ বুলেটিনে জানিয়েছে, মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) রাত ১০টার দিকে ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলে আঘাত হানতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে ১১ জেলায় ৭ নম্বর ও ৩ জেলায় ৫ নম্বর বিপদ সংকেত জারি করেছে আবহাওয়া অফিস। এরই মধ্যে ঘূর্ণিঝড় প্রবণ ১০ জেলার ১৫ লাখ মানুষদেরকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে আনার কাজ শুরু করেছে প্রশাসন।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ঘূর্ণিঝড় ট্র্যাকার সংস্থা উইন্ডিতে দেখা গেছে, ঘূর্ণিঝড় হামুনের অগ্রভাগ উপকূলের কাছাকাছি রয়েছে। সংস্থাটির পূর্বাভাসে দেখা গেছে, হামুন যতই উপকূলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ততই দুর্বল হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় হামুন পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ২১৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৩০ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ২৯৫ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আজ দিবাগত শেষ রাত থেকে সকাল নাগাদ মেঘনার মোহনা দিয়ে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও আশপাশের উপকূলীয় এলাকায় দমকা, ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।
১১তম বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, হামুনের প্রভাবে কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার; যা দমকা বা ঝড়োহাওয়ার আকারে ১৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে কেন্দ্রের নিকট সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে। এর প্রভাবে পায়রা ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে কক্সবাজারকে ৬ নম্বর ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৫ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী চাঁনপুর, ভোলাসহ ১১ জেলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। তা ছাড়া বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলায় ৫ নম্বর বিপদ সংকেত জারি করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, হামুনের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে তিন-পাঁচ ফুটের বেশি বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে ভারী (৪৪-৮৮ মিমি) থেকে অতি ভারি (৮৯ মিমি) বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারী বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ী অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমি ধ্স হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে। এটি আরও শক্তি সঞ্চয় করবে। এর প্রভাবে দেশের বিভিন্ন বিভাগে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। হামুন যখন আঘাত হানবে তখন বাতাসের গতি কোথাও ৮০ কিলোমিটার, কোথাও ৯০ থেকে ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। তিন থেকে পাঁচ ফুট জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। তাছাড়া প্রচুর বৃষ্টিপাতের ফলে কক্সবাজার, বান্দরবানে পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে।