এখন আমনের ভরা মৌসুম। প্রতি
বছর মৌসুমের শুরুতে ধান-চালের দাম কম থাকে। কিন্তু এবার উলটো ঘটনা ঘটেছে। দাম বেশি।
ধানের দাম গত মৌসুমের তুলনায় মণপ্রতি দুইশ থেকে আড়াই শ টাকা বেশি। বেশি চালের দামও।
সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং
করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসে সরু চাল নাজিরশাইল/মিনিকেটের
দাম বেড়েছে ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ, মোটা চাল ইরি/স্বর্ণার ১২ দশমিক ৯৪ শতাংশ, আর মাঝারি
মানের চাল পাইজাম/লতার দাম বেড়েছে ১৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের
(ব্রি) এক গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, চলতি আমন মৌসুমে পরপর চার দফা বন্যায় আমনের
উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ১৫ লাখ টন চাল কম উত্পাদন হতে পারে কিন্তু যে পরিমাণ
চাল উত্পাদন হবে তা দিয়ে আগামী জুন পর্যন্ত চাহিদা মিটিয়েও কমপক্ষে ২৮ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত
থাকবে।
এই গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য
অনুযায়ী, গত বছর আমন মৌসুমে ১ কোটি ৫৫ লাখ টনের কিছু বেশি চাল উত্পাদন হয়েছিল। তবে
চলতি আমন মৌসুমে বন্যায় ৩৫টি জেলার আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আমন চালের উত্পাদন প্রায়
১০ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ কমে ১ কোটি ৩৯ লাখ ৮০ হাজার টনে নামতে পারে। কিন্তু তাতে দেশে
খাদ্য ঘাটতির কোনো আশঙ্কা নেই।
তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে,
আমনের উত্পাদন কম ও সরকারের গুদামে খাদ্যশস্যের মজুত গত বছরের তুলনায় অর্ধেকে নেমে
আসায় একটি সিন্ডিকেট চাল নিয়ে কারসাজি শুরু করেছে। তারা সরকারের মজুত খাদ্যের পরিমাণ
কমে যাওয়ার সুযোগ নিচ্ছে।
সূত্র জানিয়েছে, করোনা মহামারি
ও চলতি বছর দেশে চার দফা বন্যার কারণে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে সরকার এ বছর কর্মহীন,
অসহায় মানুষদের প্রচুর পরিমাণে খাদ্যসহায়তা দিয়েছে। ফলে সরকারের মজুত খাদ্যের পরিমাণ
দ্রুত কমেছে। আর সরকারের মজুত খাদ্যের পরিমাণ কমায় এর সুযোগ নিচ্ছে এই সিন্ডিকেট। খাদ্য
মন্ত্রণালয় কারসাজি চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিলেও এই চক্রকে
চালের দাম বাড়ানো থেকে নিবৃত রাখা যায়নি। এখন আমনের ভরা মৌসুমেও তারা চালের দাম বাড়াচ্ছে।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র
মজুমদার বলেন, করোনা মহামারির সুযোগ নিয়ে কয়েক জন অসত্ ব্যবসায়ী কারসাজি করে চালের
দাম বাড়াচ্ছে। আমরা শিগিগরই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব। তাদের অবৈধ ধান-চালের
মজুত জব্দ করে তা সরকারের গুদামে নেওয়া হবে। এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চাল আমদানি
শুরু হয়েছে। চলতি মাসেই আরো ১ লাখ টন চাল বেসরকারিভাবে আমদানির জন্য ক্রয় কমিটি অনুমোদন
দেবে বলে আশা করছি।