আজঃ শুক্রবার ২৪ মার্চ ২০২৩
শিরোনাম

অপ্রয়োজনীয় টেস্ট নিয়ে রোগীদের হয়রানি করবেন না: রাষ্ট্রপতি

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ১৪ মার্চ ২০২৩ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ১৪ মার্চ ২০২৩ | ৩০০জন দেখেছেন
নিজস্ব প্রতিবেদক


Image

দেশে স্বনামধন্য চিকিৎসক ও প্রতিষ্ঠান থাকার পরও মানুষ চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাচ্ছে কেন তা খতিয়ে দেখার ওপর জোর দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিয়ে রোগীদের হয়রানি না করার আহ্বানও জানিয়ছেন।

সোমবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চতুর্থ সমাবর্তনে এ কথা বলেন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য আবদুল হামিদ।

সমাবর্তনে তিনজনকে সম্মানসূচক (পিএইচডি) ডিগ্রি প্রদান করা হয়। তারা হলেন সূচনা ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ, বিএসএমএমইউর সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর ও বিশিস্ট ভাইরোলজিষ্ট অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম এবং বিশিস্ট অর্থোপেডিক সার্জন অধ্যাপক ডা. কাজী শহিদুল আলম। চতুর্থ সমাবর্তনে ৩৫ জনকে চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়।

রাষ্ট্রপতি তার বক্তব্যে বলেন, রোগীর আস্থা অর্জনে একজন ডাক্তারকে সবার আগে ভালো শ্রোতা হতে হবে। অনেক কথা অপ্রাসঙ্গিক মনে হলেও রোগীর কাছে তা মানসিক সন্তুষ্টির বিষয়। তাই রোগীকে পর্যাপ্ত সময় নিয়ে দেখতে হবে। রোগীকে ওষুধ প্রদানের ক্ষেত্রে ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক চিকিৎসককে বিভিন্নভাবে প্রলুব্ধ করার রিপোর্ট প্রায়ই পত্রিকায় আসে। এই অসুস্থ ও অসৎ প্রতিযোগিতা পরিহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিদেশের মতো ট্রেডনেমের পরিবর্তে জেনেরিক নেম চালু করার বিষয়টি ভাবতে হবে।

সমাবর্তনে ডিগ্রি পাওয়া চিকিৎসকদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, আজ আপনারা যারা বিভিন্ন বিষয়ে ডিগ্রিপ্রাপ্ত হলেন তার পেছনে আপনাদের মা-বাবা, অভিভাবক ও শিক্ষকদের যেমন অবদান রয়েছে, তেমনি রয়েছে এ দেশের খেটে খাওয়া মানুষেরও বড় অবদান। প্রতিটি হাসপাতাল তাদের ঘাম ঝরানো পয়সায় পরিচালিত হয়। তাই কর্মক্ষেত্রে ও পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় এ কথাটি মনে রাখবেন। রোগী আছে বলেই চিকিৎসা পেশা আছে। তাই যাদের কারণে আপনাদের রুটিরুজি তাদের প্রতি আপনাদের আরো যত্নবান হওয়া উচিত। বড়ো ডাক্তার হয়ে অপ্রয়োজনীয় বড়ো বড়ো টেস্ট দিয়ে রোগীদের হয়রানি করবেন না।

আবদুল হামিদ বলেন, পত্রপত্রিকায় প্রায়ই দেখি যে, ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলো রোগীদের জিম্মি করে ব্যবসা করে। অনেক সময় দালালদের খপ্পরে পড়েও রোগীরা বিশেষ করে গ্রাম থেকে আসা রোগীরা চরম হয়রানির শিকার হন। প্রয়োজনের তুলনায় সরকারি হাসপাতালে সেবার সুযোগ অপ্রতুল। তাই বেসরকারি খাতে হাসপাতাল-ক্লিনিক থাকা খুবই জরুরি। তবে এসব হাসপাতাল-ক্লিনিক অবশ্যই গুণে-মানে সমৃদ্ধ হতে হবে। চিকিৎসার প্রয়োজনীয় সকল সুযোগ-সুবিধা থাকতে হবে। চিকিৎসার নামে সাইনবোর্ডসর্বস্ব ও দালান-নির্ভর এসব প্রতারণা বন্ধ করতে প্রশাসনিক উদ্যোগের সাথে চিকিৎসকদেরও এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, কিছুসংখ্যক অসাধু ও প্রতারক চিকিৎসকদের জন্য যাতে গোটা চিকিৎসক সমাজের সুনাম ক্ষুণ্ন না হয় সেদিকেও সচেতন থাকতে হবে।

রোগীর স্বজনদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, আবার রোগী ও তাদের আত্মীয়-স্বজনদেরও মনে রাখতে হবে ডাক্তাররা আল্লাহ বা ভগবান নন। তারাও মানুষ। কেবল চিকিৎসা সেবা দিতে পারেন। তাই রোগীর কিছু হলেই ডাক্তারদের দায়ী করবেন আর হাসপাতাল ভাংচুর করবেন এটাও কাম্য নয়। তাই ডাক্তার, রোগী ও আত্মীয়স্বজনদের আরও বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে। এমন অবস্থা কারোরই কাম্য নয় যার ফলে সাধারণ মানুষ ও রোগীরা অসহনীয় দুর্ভোগের শিকার হন।

সমাবর্তনে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন ভারতীয় ইউনিভার্সিটি সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রাজ বর্ধন আজাদ।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. মোশাররফ হোসেন, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, ও প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান খান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান ও প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল।


আরও খবর