স্পট মার্কেটে রাশিয়ার অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের নতুন বৃহৎ গন্তব্য হতে পারে এশিয়ার দেশগুলো। এ সময় দেশটির সঙ্গে করা কয়েকটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিও সই করতে পারে অঞ্চলটির বিভিন্ন দেশ। সম্প্রতি রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি কমিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে ইউরোপীয় দেশগুলো। ফলে ওপেক প্লাসের দেশটির জন্য জ্বালানি বিক্রয়ের নতুন উৎস খুঁজতে হচ্ছে। খবর এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল প্লাটস।
চলতি সপ্তাহে সমুদ্রপথে রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি আগের তুলনায় দুই-তৃতীয়াংশ কমিয়ে আনার ব্যাপারে সম্মত হয় ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো। ফলে অঞ্চলটিতে রুশ জ্বালানি রফতানির পথ অনেকটাই সংকুচিত হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় এশিয়ার ক্রেতাদের ওপর বৃহদাংশে নির্ভর করতে হবে ওপেকবহির্ভূত সর্ববৃহৎ জ্বালানি তেল রফতানিকারক দেশটির।
এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল কমোডিটি ইনসাইটের প্লাটস অ্যানালিটিকসের তেল বাজারবিষয়ক উপদেষ্টা লিম জিত ইয়াং বলেন, এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র রুশ জ্বালানি তেল আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনয়নও একই পদক্ষেপ নেয়ার পথে। এতে দেশটির কাছে নিজেদের অপরিশোধিত জ্বালানি তেল বিক্রির জন্য এশিয়ার ক্রেতারাই বাকি। প্লাটস অ্যানালিটিকসের তথ্যানুসারে, চলতি বছর আন্তঃমহাদেশীয় অপরিশোধিত তেল বাণিজ্যের ৪০ শতাংশ এশিয়া অঞ্চলের দখলে থাকবে। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের দখলে থাকবে ৩০ শতাংশ ও ইউরোপীয় অঞ্চলে ১৮ শতাংশ।
এরই মধ্যে অপরিশোধিত তেল বাণিজ্যের জন্য অনেকাংশেই এশিয়ার ওপর নির্ভর শুরু করেছে রাশিয়া। কোভিড-১৯-এর কারণে আরোপিত সবশেষ লকডাউনের আগে রুশ জ্বালানি তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ছিল চীন। এপ্রিলে রাশিয়া থেকে প্রতিদিন ৮ লাখ ৩৬ হাজার ব্যারেল তেল আমদানি করেছে ভারত। মার্চে ভারতের রুশ তেল আমদানির পরিমাণ ছিল প্রতিদিন ২ লাখ ৭৪ হাজার ব্যারেল। ফেব্রুয়ারিতে দেশটি থেকে ন্যূনতম অপরিশোধিত তেলও আমদানি করেনি ভারতীয় ক্রেতারা। কমোডিটি ইন্টিলিজেন্স ফার্ম কেপলারের দেয়া তথ্যে এমনটা দেখা যায়।
সিনার্জি কনসালটিংয়ের তেল, গ্যাস ও রাসায়নিক বিভাগের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজাত কাপুর বলেন, রুশ অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের জন্য ভারতের চাহিদা নিরবচ্ছিন্নভাবে বাড়ছে। ভারতীয় আমদানিকারকরা সস্তা মূল্যে তেল আমদানির জন্য অনেকটাই উৎসাহিত। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বর্তমান বাজার মূল্যের চেয়ে ৩৫ শতাংশ কম দামে রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল সংগ্রহ করছে ভারত।
সম্প্রতি ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নিষেধাজ্ঞায় দেশটি থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করা থেকে বিরত থাকে চীন। ফলে তেল শোধনাগারগুলো এ ঘাটতি পূরণে রুশ জ্বালানি তেলের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। চীনের শ্যাংডংয়ের শোধনাগারগুলো রাশিয়ার অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির জন্য বেশ কয়েকটি সচল চুক্তি নবায়ন করেছে। গত বছরের নভেম্বরে প্রথম অপরিশোধিত তেলবাহী কার্গোর জন্য চুক্তি নবায়ন করা হয়, যা চলতি মাসের প্রথম দিকে এসে পৌঁছানোর কথা এবং মাসের শেষ দিকে আরো আটটি কার্গো চীনে পৌঁছবে বলে জানা গিয়েছে।
রুশ তেল উৎপাদকরা ইউরালস ব্লেন্ড, ফার ইস্ট রাশিয়ান ইএসপিও, শকর ও শাখালিন ব্লেন্ডজাতীয় অপরিশোধিত তেল বিক্রির জন্য পূর্ব এশিয়ার শোধনাগার ও তেল কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে। এ সময় রুশ উৎপাদকরা মিডিয়াম সোর ও লাইট সুইট গ্রেড তেল মূল্যছাড় দিয়ে বিক্রয়ের প্রস্তাব দেন। জাপান, সিঙ্গাপুর, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও থাইল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যবসায়িক সূত্রে এমনটা জানা যায়। তবে ঠিক কী পরিমাণ মূল্যছাড় প্রস্তাব করা হয়েছে, এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানায় এসব ব্যবসায়ী। এ সময় বাজারে প্রচলিত মূল্যের চেয়ে অনেকাংশে কম দামে এসব তেল বিক্রির প্রস্তাব দেয়া হয়েছে বলে ইঙ্গিত দেয় তারা।