২০২১ সালের নভেম্বরে র্যাব অভিযান চালিয়ে নারী এবং মাদক মামলায় গ্রেফতার করেছিল নাফিজ মো. আলমকে। এর আগে ও পরে আরো একাধিকবার মাদক সংক্রান্ত মামলায় গ্রেফতার হলেও জামিনে বের হয়ে এসে পুনরায় ফিরে যেত মাদক ব্যবসায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ এড়িয়ে অনলাইনে ঝাঁকিয়ে বসেছে মাদক ও নারী ব্যবসা।
ফেসবুকে বিচারপতির ছেলে পরিচয় দেয়া নাফিজ মো. আলম সম্প্রতি জার্মানভিত্তিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলেতে র্যাবকে নিয়ে একটি সাক্ষাৎকার দেয়। যেখানে নাফিজ মো. আলম এলিট ফোর্স র্যাবকে নিয়ে মনগড়া-মিথ্যা তথ্য প্রদান করেছে। এরপর একটি পুরাতন মামলায় গত ৯ এপ্রিল রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে গ্রেফতার করে ভাটারা থানা পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
আরো পড়ুন : ডয়েচে ভেলে সাক্ষাৎকার দেওয়া নাফিজ মাদকসহ গ্রেফতার
জানাগেছে নাফিজ কখনো ফেসবুক পেজ খুলে, আবার কখনো নিজের আইডি থেকে প্রকাশ্যে মদ এবং অন্যান্য মাদক বিক্রি করে আসছিলেন। কাউকে তোয়াক্কা না করেই চালিয়ে যেতেন অনলাইনে মাদকের কারবার। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় হোম ডেলিভারি দিচ্ছিলেন বিজ্ঞাপন দিয়ে। ফেসবুক এবং টেলিগ্রামে গ্রুপ খুলে গড়ে তুলেছেন বিশাল ক্রেতা।
তার পরিচালিত মাদক কারবারের ফেসবুক গ্রুপের নাম ‘সিন্ডিকেট ইন্টারন্যাশনাল, ঢাকা।’ এ ছাড়াও ‘সিন্ডিকেট প্রাইস আপডেট’ নামে টেলিগ্রামে রয়েছে একটি ক্লোজড গ্রুপ। যেখানে প্রতিদিনই দেওয়া হচ্ছে মাদকের হোম ডেলিভারির আপডেট। এমনকি রমজান মাসে মদ বিক্রির ওপর ডিসকাউন্টও দেন এই নাফিজ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নাফিজ তার সিন্ডিকেট গ্রুপের মাধ্যমে রাজধানীর গুলশান, বনানী, বসুন্ধরা আবাসিক, মহাখালী, মিরপুর ১০ নাম্বার, ইসিবি চত্বর, বারিধারা, নিকেতন, নিকুঞ্জ, খিলক্ষেত, উত্তরা, ধানমন্ডি, মগবাজার, শ্যামলী, ইস্কাটন, ফার্মগেট, খিলগাঁও, বনশ্রী এবং রামপুরা টিভি ভবন এলাকায় মাদক ডেলিভারি দেন। অন্যান্য এলাকার লোকজন এসব এলাকা থেকে ডেলিভারি নেন। নাফিজ তার ফেসবুক আইডিতে লাইভে এসে মাদকের বিষয়ে বর্ণনা করে সেগুলো বিক্রি করেন। বিভিন্ন ব্যান্ডের বিদেশি মদ, বিয়ার, গাঁজা এবং মাদক ব্রাউনি বিক্রি করেন তিনি। এসবের বিভিন্ন দাম এবং হোম ডেলিভারি কীভাবে দিতে হবে সে বিষয়ে লাইভে এসে ব্যাখ্যা করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই সিন্ডিকেটের একটি টেলিগ্রাম গ্রুপ রয়েছে। যেটি নিয়ন্ত্রণ করেন নাফিজ নিজেই। এই গ্রুপে প্রায় ৪ হাজার সদস্য রয়েছেন, যারা নাফিজের নিয়মিত ক্রেতা।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ঢাকা মেট্রো দক্ষিণ) সহকারী পরিচালক সুব্রত সরকার শুভ বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮ এর বিধান অনুসারে অনলাইনে কিংবা অফলাইনে আলকোহল বিক্রির কোনো প্রচেষ্টা অথবা উদ্যোগ গ্রহণ, অর্থ বিনিয়োগ, কোনো প্রতিষ্ঠান স্থাপন, পরিচালনা, তার পৃষ্ঠপোষকতা, কিংবা মিথ্যা ঘোষণা আইনত দণ্ডনীয়। অনলাইনে মদ বিক্রির সিন্ডিকেট সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই চলমান। কয়েকজনের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, বাকিদের আইনের আওতায় আনা হবে।