সাতক্ষীরা থেকে দিলীপ কুমার দেব
৬৫ বছর বয়সী রজব আলী বাড়িতে অক্সিজেনের অভাবে শ্বাসকষ্টে ছটফট করছিলেন। খবর শুনে সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ সদস্য মোঃ আল ফেরদাউস আলফা বিনামূল্যে দিয়েছিলেন অক্সিজেন সিলিন্ডার। মুমূর্ষু পিতাকে বাঁচাতে সেই অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন ছেলে ওলিউল ইসলাম। কিন্তু পথে বাঁধা দেয় সাতক্ষীরা ইটাগাছা পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই সুভাষ চন্দ্র শিকদার।
দাবি করা এক হাজার টাকা। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় দুই ঘন্টা আটকে রাখা হয় ওলিউল ইসলামকে। দুই ঘন্টা পর দুইশত টাকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয় অক্সিজেন বহনকারী ছেলেকে। ছেলে বাড়ি ফিরে দেখে বাবা আর পৃথিবীতে নেই। অক্সিজেনের অভাবে শ্বাসকষ্টে ছটফট করে মৃত্যুবরণ করেছেন বাবা রজব আলী। আলোচিত এই ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) দুপুরে শহরের ইটাগাছা হাটের মোড়ে।
এই ঘটনায় অভিযুক্ত সাতক্ষীরা ইটাগাছা পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই সুভাষ চন্দ্র শিকদারকে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়া ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এএসআই সুভাষ চন্দ্র শিকদারের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ ইকবাল হোসেনকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, ডিএসবি’র এএসপি মোঃ সাইফুল ইসলাম ও ইটাগাছা পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মোঃ ফয়সল তারেক বিন আজিজ। তাঁরা তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করবেন বলে পুলিশ সুপার জানান।
রজব আলীর ছেলে মোঃ ওলিউল ইসলাম জানান, করোনা উপসর্গ নিয়ে বাড়িতে চিকিৎসাধীন ছিলেন অসুস্থ তাঁর পিতা। শ্বাসকষ্টে ছটফট করতে থাকলে বিষয়টি জেলা পরিষদ সদস্য মোঃ আল ফেরদাউস আলফাকে জানানো হলে তিনি একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার প্রদান করেন। সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোল এলাকার মোঃ আল ফেরদৌস আলফার কাছ থেকে একটি অক্সিজেন সিলিন্ডারটি নিয়ে বাড়িতে যাওয়ার সময় বৃহস্পতিবার বেলা এগারটার দিকে ইটাগাছা হাটের মোড়ে পৌঁছালে তাঁকে আটক করেন ইটাগাছা ফাঁড়ির এএসআই সুভাষ চন্দ্র শিকদার। লকডাউনে বাইরে বেরিয়েছে বলে তাঁর কাছে এক হাজার টাকা দাবি করেন সুভাষ চন্দ্র শিকদার। দাবিকৃত টাকা দিতে না পারায় তাঁকে দুই ঘন্টা সেখানে আটকে রাখা হয়। কারণ তাঁর কাছে ২শ’ টাকার বেশি ছিল না। পরে ইটাগাছা এলাকার জনৈক মোঃ জিয়াউল ইসলামের মধ্যস্থতায় ওই ২০০ টাকা নিয়ে এএসআই সুভাষ চন্দ্র শিকদার তাঁকে ছেড়ে দেন। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে যায়। বাড়িতে গিয়ে দেখেন অক্সিজেনের অভাবে তাঁর পিতা মারা গেছেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, যদি সময় মতো অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে বাড়িতে যেতে পারতাম, তাহলে হয়তো পিতাকে বাঁচানো যেতো। তিনি এই অমানবিক ঘটনার বিচার দাবি করেন।
রজব আলী মোড়লের বড় ছেলে হাফিজুল ইসলাম জানান, আমিও ভাইয়ের সাথে মোটরসাইকেলে ছিলাম। এই ঘটনায় আমি নির্বাক হয়ে গেছি। পুলিশ তো জনগণের বন্ধু ও সেবক। টাকার জন্য পুলিশ এমন করতে পারে, এটা ভাবতেই পারছিনা। তিনি এঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইটাগাছা পুলিশ ফাঁড়ির একাধিক পুলিশ সদস্য বলেন, এএসআই সুভাষ চন্দ্র শিকদারের কারণে পুলিশের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। এলাকার যত জমি-জমার ঝামেলা আছে সেগুলোর মধ্যে সে মাথা দেয়। অনেকে তাঁকে ‘ল্যান্ড সুভাষ’ নামে চেনেন।