লালমনিরহাট প্রতিনিধি:
কালের আবর্তে ঐতিহ্য হারাতে বসেছে লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তা নদীর তীর ঘেঁষা শুটকির বন্দর তিস্তা। নেই আগের মত হাঁকডাক ক্রেতাশূন্য মোকামে একপ্রকার অলস সময় পার করছেন পাইকাররা। বংশপরম্পরায় ধরে যারা এই ব্যবসা চালিয়ে আসছেন তাদের অবস্থাও এখন শোচনীয়।
এই শুটকি বন্দরটি গড়ে উঠেছিল প্রায় আড়াই শত বছর আগে ব্রিটিশ আমলে। সেই সময়ে চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বড় বড় নৌকা বিভিন্ন জাতের শুটকি নিয়ে ভিড়ত এই বন্দরে। আর আসাম, পশ্চিমবঙ্গসহ অবিভক্ত বাংলার বিভিন্ন শহরে চলে যেত এই শুটকি। সেই সময় ক্রেতা ও বিক্রেতাদের আনাগোনায় মুখরিত থাকত এই বন্দরটি। বন্দরটিকে ঘিরেও তাই গড়ে উঠেছিল অন্যান্য ব্যবসা।
শুটকি ব্যবসায়ী রমজান আলী(৫৭) জানান এই শুটকি বন্দরটি তিনি ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছেন। তার বাপ দাদারা এখানেই ব্যবসা করতেন। তখন এখানে অনেক বড় বড় পাইকার আসত, বিভিন্ন জাতের শুটকি কেনাবেচা হত। সেগুলো দেশে এবং দেশের বাইরে বিভিন্ন স্থানে চলে যেত। বর্তমানে সৈয়দপুরের শুঁটকি বন্দর হওয়াতে আগের মতো কেনাবেচা এখনো হয় না। ব্যবসার অবস্থা ভালো না থাকায় অনেকেই পেশার পরিবর্তন করে অন্য জায়গায় চলে গেছেন।
আরেক ব্যবসায়ী শফিক মিয়া (৪৫) জানান, বর্তমানে এই বন্দরে নেই তেমন বেঁচা কেনা, তাই বাপ-দাদার ব্যবসা টিকিয়ে রাখাটাই এখন তার কাছে কষ্টসাধ্য হয়েছে পড়েছে। ব্যবসার পুঁজিও নেই তেমনটা।
তিস্তা শুটকি বন্দর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দিলীপ রায়(৬৩) বলেন, সরকার যদি এই ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য স্বল্প সুদে বা সুদমুক্ত ঋণ দিত তাহলে আমরা হয়তো পূর্বপুরুষের ব্যবসাটি টিকিয়ে রাখতে পারতাম।
সময়ের সাথে সাথে বন্দরটিও যেন হারিয়েছে তার যৌবন। নেই আগের মত চাহিদা, অনেকে আবার পুঁজি খুইয়ে চলে গেছে অন্যত্র, করেছেন পেশার পরিবর্তন। যারা বর্তমানে হাতেগোনা কয়একজন এই ব্যবসা করছেন তারাও নেই ভালো। পুঁজির অভাবে তাদের ব্যবসা দিন দিন ছোট হয়েই চলেছে। সরকারের একটু সহযোগিতায় আবারও হয়তো ফেরানো যাবে প্রাচীন এই ব্যবসার প্রাণ। এমনটাই দাবি শুটকির ব্যবসার সাথে জড়িত সংশ্লিষ্টদের।