ময়মনসিংহের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম
বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহার বিরুদ্ধে
একই বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সৈয়দা সানজানা আহসান যৌন হয়রানির অভিযোগ
ওঠেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ওই শিক্ষকের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে বিভিন্ন প্রতিবাদ
কর্মসূচি পালন করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
গত রোববার (৩ মার্চ) সাজন সাহার অনৈতিক
প্রস্তাবের একাধিক স্ক্রিনশট সামাজিক মাধ্যমে তুলে ধরেন ওই শিক্ষার্থী।
যৌন হয়রানির বিষয়ে ওই শিক্ষার্থী জানান,
২০১৯ সাল থেকেই ঐ শিক্ষক তাকে নানা ধরনের হয়রানি করাসহ বিভিন্ন কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছেন।
সেখানে তিনি সাড়া না দিলে তাকে নানা দিক থেকে হেনস্থা করে আসছে সাজন সাহা। অনুপস্থিত
দেখিয়ে পরীক্ষায় বসতে জরিমানা নেওয়া, পরীক্ষার খাতায় নম্বর কমে যাওয়া, থিসিস পেপার
আটকে দেয়া সহ নানা ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয় ওই শিক্ষার্থীকে। এসব বিষয়ে বিভাগীয়
প্রধান রেজুয়ান আহমেদ শুভ্রকে মৌখিকভাবে ওই শিক্ষার্থী অভিযোগ দিলে তিনি সমাধানের নামে
একাধিক শর্ত বেঁধে দেন, যার মধ্যে অন্য দুই সহকর্মী সহকারী অধ্যাপক রিমন সরকার ও সহকারী
অধ্যাপক ফাহমিদা সুলতানার বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করে দেওয়া অন্যতম।
এসব বিষয়ে জানাজানি হলে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা
বিভাগীয় প্রধান রেজুয়ান আহমেদ শুভ্র এবং অভিযুক্ত শিক্ষক সাজন সাহাকে দীর্ঘক্ষণ অবরুদ্ধ
করে রাখে। পরে প্রক্টর সঞ্জয় কুমার মুখার্জি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত
শিক্ষকেরা বিভাগে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। এ সময় শিক্ষার্থীরা বিভাগের নামফলক কালো
কাপড়ে ঢেকে দেয়াসহ অভিযুক্ত শিক্ষকের নামফলক পুড়িয়ে দেয়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সঞ্জয়
কুমার মুখার্জি বলেন, খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে আমরা রেজুয়ান আহমেদের কাছে যাই। বিষয়টি
আসলে অবরুদ্ধ করে রাখার মতো নয়। আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি। পরে রেজুয়ান আহমেদকে
কক্ষ থেকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়।
বিভাগীয় প্রধান রেজুয়ান আহমেদ শুভ্রর
কাছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের যে অভিযোগ তারা এটি
বিভাগীয় প্রধান বরাবর জানালে ব্যবস্থা নিতাম। কিন্তু তারা সেটা করেনি। আর আমার বিরুদ্ধে
যে অভিযোগ নিয়ে আসা হয়েছে এ বিষয়ে কোন তথ্যপ্রমাণ থাকলে সবাই জানতো। অভিযোগ করলেই
হবে না শুধু, সত্যতা প্রমাণ করতে হবে।
এর আগে গত মঙ্গলবার ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীর স্বাক্ষর সম্বলিত একটি লিখিত
অভিযোগ দায়ের করেন। পরে প্রশাসনিক ভবনের সামনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তার হয়রানির ঘটনা
বর্ণনা করেন। পরে বুধবার দিনব্যাপী মানববন্ধন করে এবং ছয় দফা দাবি পেশ করে সাধারণ
শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ওই দিনই ট্রেজারার
অধ্যাপক ড. আতাউর রহমানকে আহ্বায়ক করে শক্তিশালী তদন্ত কমিটি গঠন করে। পরবর্তীতে মোমবাতি
প্রজ্জ্বলন, মৌন মিছিল সহ শুক্রবার বাদ জুম্মা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে সাধারণ
শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.
সৌমিত্র শেখর বলেন, এটি খুবই বিব্রতকর ব্যাপার। আমার কাছে ছেলেমেয়েরা এসেছে। ভুক্তভোগীর
সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর অভিযোগের পর
একে একে আরো ত্রিশোর্ধ শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাজন সাহার বিরুদ্ধে একই
অভিযোগ করেন। অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচার নিশ্চিতের দাবি নিয়ে বিভাগের প্রধান ফটকে তালা
লাগিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য পাঠ্য কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।