গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব এবং ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের সমালোচনায় সরাসরি মাঠে নেমেছে তারই দলের বিভিন্ন পদে থাকা নেতাকর্মীরা। এরই মধ্যে নুরের সঙ্গে মেন্দি এন সাফাদির সাক্ষাতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্বয়ং মেন্দি এন সাফাদি। পাশাপাশি বিদেশে সফরকালে গণ অধিকার পরিষদ পরিচালনার খরচের জন্য প্রবাসীদের থেকে অর্থ সংগ্রহ ও তার হিসেবে না দিয়ে আত্মসাৎ, স্বেচ্ছাচারিতা এবং দলের বয়স্ক নেতাদের সঙ্গে অশ্লীল ভাষায় কথা বলার অভিযোগও রয়েছে নুরের সঙ্গে। নুর যখন বিভিন্ন সমালোচনার জালে বন্দি, তখন নুর-মেন্দির বৈঠকের অবস্থানের গুগল ম্যাপ পজিশন ও ছবি নিজ ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে প্রকাশ করলেন আওয়ামী লীগের ওয়েব টিমের সমন্বয়ক তন্ময় আহমেদ।
আরও পড়ুন: নুরের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে মামলার আবেদন
শুধু এই সকল অভিযোগ নয়, এর পাশাপাশি নতুন
করে সামনে এসেছে কুকি চীনের সঙ্গে নুরের যোগাযোগের বিষয়টি। কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টকে
(কেএনএফ) তার অস্ত্র সরবরাহের স্বীকারোক্তিমূলক একটি হোয়াটসঅ্যাপ কথোপকথনও সামাজিক
মাধ্যমে ফাঁস হয়েছে। তবে এসব অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেছেন নুর। অজ্ঞাত এক ব্যক্তির
সঙ্গে ফাঁস হওয়া নূরের হোয়াটসঅ্যাপ কথোপকথনে কয়েকটি স্ক্রিনশট ফাঁস হয়েছে। তাতে সেই
অজ্ঞাত ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে নুর বলেন, ‘ভাই, আপনি চিন্তা
করবেন না, সকল সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। সরকার আর থাকছে না। ভাই, এক লাখ কার্তুজের
গুলি পাঠিয়েছি।’
পরবর্তীতে স্ক্রিনশটের নম্বর মিলিয়ে দেখা
যায় তা নুরুল হক নুরের মোবাইল নম্বর।
এদিকে মেন্দি এন সাফাদি এবং নুরের নিজ
দলের একাধিক নেতাকর্মীর বক্তব্যে নুর-মেন্দি বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত হলেও শুরুতে ছবি
ফাঁস হওয়ার পর থেকে বিষয়টি অস্বীকার করে আসছেন গণ অধিকার পরিষদের এই সদস্য সচিব। এর
আগে মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে নুরের বৈঠকের ছবিটি ফেসবুকে প্রকাশের পর তা 'ভুয়া' বলে
প্রচার শুরু করে নুরের সমর্থকেরা। কিন্তু নুরের এই ছবিটি সে সময় ফেসবুকে প্রকাশ করে
তা যে সঠিক বিষয়টি বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাখ্যা করেন তন্ময় আহমেদ। এ সময় তন্ময় আহমেদকে কখনও
'শিবির' আবার কখনও 'সরকারের দালাল' সহ আরও বিভিন্নভাবে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেন নুর ও
তার সহযোগীরা।
আরও পড়ুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নুরের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা
নুরের ব্যক্তিগত আক্রমণের জবাবে বক্তব্যের
স্বপক্ষে প্রমাণ প্রদানের আহ্বান করেন তন্ময় আহমেদ। কিন্তু কোন প্রমাণ প্রদান না করে
বরাবরই চুপ থেকেছেন নুর।
সম্প্রতি সময়ে গণ অধিকার পরিষদের অনেকের
বক্তব্য অনুসারে দলের বিভিন্ন সদস্যকে সংসদ সদস্য বানানোর ফর্মুলা বিক্রি করে নুরের
অর্থ চাওয়ার বিষয়টি সামনে আসে। সেই সঙ্গে কুকি আর্মির সঙ্গে নুরের যোগাযোগের বিষয়টি
সামনে আসার পর তার বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছেন নিজ দলের সিনিয়র নেতাকর্মীরা। এমনই
এক পরিস্থিতিতে নুরের আরও অনেক তথ্য 'এখনো দেখার বাকি' বলে জানালেন আওয়ামী লীগের ওয়েব
টিমের সমন্বয়ক তন্ময় আহমেদ।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে ভিপি নুরের বিরুদ্ধে মামলা
নিজ ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে গুগল ম্যাপের
লিংক এবং কিছু ছবি শেয়ার করে তিনি লেখেন, 'কিরে নুরু, চেনা চেনা লাগে মার্কেটটা? স্টার
বাকসের যেই স্মোকিং জোনের সোফায় বসে গল্প করছো, ফুকছো মেন্দির সাথে সেই সোফাও দিয়ে
দিলাম। ছাতার পাশেই গেটের বাইরে যেই কোণাটা সেখানেই দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছিলে মেন্দির সাথে।
এবার সবার উদ্দেশ্যে পোস্ট করলাম ম্যাপের লিঙ্ক সহ, যাতে করে কার কার সাথে গেছিলা তাদেরও
একটু মনে পড়ে।'
তিনি আরও বলেন, 'আরেকটা খবর দেই, নুরুর
সেই প্রবাসী বন্ধুরা এখন তার উপর ভীষণ ক্ষ্যাপা। যেকোন সময় যেকোন কিছু বের হয়ে যেতে
পারে। শিপন বসুর লোক এখনও নুরের পাশেই বসে যাকে নিয়ে ভিডিওতে বলেছে ইলিয়াস আর পিনাকী!
এখন দেখার বাকি।'
আরও পড়ুন: নুরসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলার তদন্ত ফের পেছাল
এদিকে নুরের ইসরাইলি সংযোগ ও বাংলাদেশে
নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ এস ওয়াই রামাদানকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে বক্তব্য
প্রদানের প্রেক্ষিতে নেটিজেনরা তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছেন। অনেকেই নুরের এই ধরণের
কার্যক্রমকে 'রাষ্ট্র বিরোধী' ও 'ধর্ম অবমাননা'র সঙ্গে তুলনা করে ফেসবুক পোস্ট ও কমেন্ট
করছেন।
এদিকে গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা
কিবরিয়ার পর দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসানও নুরের সঙ্গে 'মোসাদ' এজেন্ট মেন্দি এন
সাফাদির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে কথা বলেছেন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান,
ইসরাইলের নাগরিক ‘মোসাদ’ এজেন্ট মেন্দি
এন সাফাদির সঙ্গে বৈঠক করেছেন নুরুল হক নুর। গণমাধ্যমে স্বীকার না করলেও দলের একাধিক
অভ্যন্তরীণ বৈঠকে বিষয়টি স্বীকার করেছেন তিনি।
এর আগে গত ১৮ জুন দলের আহ্বায়ক ড. রেজা
কিবরিয়ার বিরুদ্ধে সদস্য সচিব নুরুল হক নুরের কিছু অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রেজা কিবরিয়ার
বাসার ছাদে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির একটি সভা হয়। সেখানে নুর দলের বয়োবৃদ্ধ কয়েকজন
সদস্যকে ব্যক্তিগত আক্রমণমূলক ও অশালীন ভাষা প্রয়োগ করে বলে অভিযোগ পাওয়ায় যায়। ফলে
পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়। তখন রেজা কিবরিয়া সভাস্থল ত্যাগ করেন এবং সভা মুলতবি হয়। এদিকে
নুরের দাবি তিনি অশালীন কোন ভাষা প্রয়োগ করেননি।