রাজধানীর মালিবাগে
জে এস হাসপাতালে সুন্নতে খাতনা করাতে গিয়ে শিশু আহনাফ তাহমিদ আইহামের (১০) মৃত্যুর
ঘটনায় করা মামলা তুলে নিতে হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে শিশুটির পরিবার। এছাড়া
মামলার তদন্তে ধীর গতি বলেও অভিযোগ করেন তারা। বুধবার (৬ মার্চ) রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল
স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে মানববন্ধন করে এই অভিযোগ করে আহনাফের সহপাঠী, স্বজন ও প্রতিষ্ঠানটির
অভিভাবকরা।
তাদের অভিযোগ,
চিকিৎসকদের অসাধু চক্র মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে। এতে ভুক্তভোগী পরিবারটিকে সহযোগিতা
করছে না প্রশাসন ও পুলিশ। অন্যদিকে আদালতে এ মামলা পরিচালনায় আইনজীবীরাও পক্ষপাতিত্ব
করে অনিহা দেখাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে সামনে আরও কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা।
এর আগে গত ২০
ফেব্রুয়ারি রাতে মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার জে এস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিকেল চেকআপ সেন্টারে
খাতনা করাতে গিয়ে শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। আহনাফ তাহমিদ মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলে চতুর্থ
শ্রেণিতে পড়ত। এ ঘটনায় শিশুর বাবা মোহাম্মদ ফখরুল আলম বাদী হয়ে রাজধানীর হাতিরঝিল থানায়
মামলা করেন।
মামলায় তিনজনের
নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় ৩-৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত
১৯ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৮টার দিকে আহনাফ তাহমিদকে সুন্নতে খাতনা করানোর জন্য তার বাবা
ফখরুল আলম হাতিরঝিল থানার জেএস হাসপাতালের চিকিৎসক এস এম মুক্তাদিরের কাছে নিয়ে যান।
তিনি ওই সময় কিছু টেস্ট লিখে দেন। ওই হাসপাতালেই টেস্টগুলো করে ছেলেকে নিয়ে বাসায় চলে
যান। রাতে চিকিৎসক ফোন করে জানান, রিপোর্টগুলো ভালো আছে। সুন্নতে খাতনা করতে কোনো সমস্যা
নেই। পরদিন ২০ ফেব্রুয়ারি রাত পৌনে ৮টায় ছেলের সুন্নতে খাতনা করানোর জন্য স্ত্রী খায়রুন
নাহারকে সঙ্গে নিয়ে তিনি হাসপাতালে যান। পরে ছেলেকে অপারেশন থিয়েটার নিয়ে যাওয়া হয়।
আসামিরা জানান,
তাদের ২০-২৫ মিনিট সময় লাগবে। তখন আহনাফের বাবা-মা বাইরে অপেক্ষা করতে থাকেন। ৩০-৩৫
মিনিট পর ওটি রুমের দরজায় নক করলে তাঁরা জানান, আরও কিছুক্ষণ সময় লাগবে। এভাবে এক ঘণ্টা
পার হওয়ার পর আহনাফের বাবা ফখরুল ওটি রুমে প্রবেশ করতে চাইলে তাঁকে নিষেধ করে আরও কিছু
সময় অপেক্ষা করতে বলা হয়।
পরবর্তীতে সন্দেহ
হলে ফখরুল জোর করে ওটি রুমে প্রবেশ করেন। সেখানে দেখতে পান, তাঁর ছেলে অচেতন অবস্থায়
পড়ে আছে। আহনাফের বুকে হাত দিয়ে চাপাচাপি করছে এবং নাকে ও মুখে নল দিয়ে রক্ত বের হওয়া
অবস্থায় দেখেন। তখন চিকিৎসক এস এম মুক্তাদিরকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি সঠিক উত্তর দেননি।
ছেলের এই অবস্থা দেখে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাইলে তারা
কর্ণপাত না করে নিজেরাই তার বুকে চাপাচাপি, হাত-পা মালিশ করতে থাকেন।
তখন জোর করে
তাকে ওটি রুম থেকে বের করে দেন তারা। দুই ঘণ্টা পার হলেও তারা ছেলের বর্তমান শারীরিক
অবস্থা সম্পর্কে সঠিক তথ্য না দিয়ে কালক্ষেপণ করতে থাকেন। পরে আবার জোর করে ওটি রুমে
প্রবেশ করে ফখরুল জানতে পারেন তার ছেলে আহনাফ তাহমিদ মারা গেছে। এরপরই দুই চিকিৎসককে
গ্রেপ্তার করা হয়।