সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে গত মঙ্গলবার থেকে নোয়াখালীর সোনাপুর-চরজব্বর-চেয়ারম্যান ঘাট রুটে চালু হয় ৪টি বিআরটিসি বাস। জেলা প্রশাসক, জেলা আওয়ামী লীগে আহ্বায়কসহ দলের নেতারা উপস্থিত থেকে এ বাস সার্ভিসের উদ্বোধন করেন। কিন্তু স্থানীয় বাস মালিক সমিতির বাধার মুখে উদ্বোধনের মাত্র ২৪ ঘন্টার মধ্যে বন্ধ হয়ে গিয়েছে বাস সার্ভিসটি।
একাধিক সূত্র জানা যায়, সোনাপুর থেকে সুবর্ণচর হয়ে হাতিয়া চেয়ারম্যান ঘাট পর্যন্ত প্রায় ৬০ কিলিমিটার সড়কে কোন ভালো মানের বাস সার্ভিস নেই। বিশাল এ জনপদের মানুষ জেলা শহরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাওয়ার জন্য নির্ভর হতে হয় সিএনজিচালিত অটোরিকশা এবং ভাঙাচোরা ব্যক্তি মালিকানাধীন বাসের উপর। এতে অতিরিক্ত ভাড়া প্রদানসহ নানা দুর্ভোগে পড়তে হয় যাত্রীদের। বিভিন্ন সময় অতিরিক্ত ভাড়া নিয়েও বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকদের সঙ্গে বিরোধ ও হামলার শিকার হতে হয়েছে সাধারণ যাত্রীদের।
জানা গেছে, এ রুটে যাত্রীদের কথা চিন্তা করে বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ চারটি বাস সার্ভিস শুরু করে। যার ভাড়া সোনাপুর থেকে চেয়ারম্যান ঘাট পর্যন্ত ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এদিকে, ব্যক্তি মালিকানাধীন বাসে ৬০ টাকা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ১২০ টাকা গুনতে হতো যাত্রীদের।
গত মঙ্গলবার জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ খায়রুল আনম সেলিম, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সামছুদ্দিন জেহান, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ পিন্টুসহ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রশাসনের কর্মকর্তা ছাড়াও রাজনৈতিক নেতারা উপস্থিত ছিল।
বিআরটিসি জানিয়েছে, উদ্বোধনের পর ওই রুটে দুটি বাস চালু করা হয়। যা সোনাপুর থেকে চেয়ারম্যান ঘাট পর্যন্ত যায়। পরদিন বাস দুটির মধ্যে একটি সোনাপুর বিআরটিসি ডিপো থেকে বের হয়ে সোনাপুর জিরোপয়েন্ট পর্যন্ত গেলেই সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও বাস মালিক সমিতির শ্রমিকদের তোপের মুখে পড়ে। কোনোভাবে সোনাপুর থেকে চরজব্বার পর্যন্ত গেলে সেখানে শ্রমিকরা পুনরায় বাধায় দেয়, বাধা ঠেলে একবার গেলেও ওই দিনই বাধ্য হয়ে বাস সার্ভিস বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ।
বিআরটিসি সোনাপুর বাস ডিপোর ম্যানেজার (ব্যবস্থাপক) মো. রাজু মোল্লা বলেন, সোনাপুর বাস মালিক সমিতির লোকজনের বাধার মুখে নিরাপত্তার স্বার্থে বাধ্য হয়ে বাস সার্ভিস বন্ধ করা হয়েছে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
বাধার দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে সোনাপুর বাস মালিক সমিতির সভাপতি মো. সামছুল হক সোহেল বলেন,‘এ রুটে বর্তমানে ২০-২৫টি বাস চালু রয়েছে। পর্যাপ্ত বাস চালু থাকা সর্ত্বেও তাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই বিআরটিসি বাস চালু করা হয়েছে। এতে লোকসানের মুখে পড়তে হবে তাদের। শুধু বাস মালিকরাই নয়, এখানে সিএনজি ও বাসের দুই হাজারের বেশি শ্রমিক বেকার হয়ে যাবে। তাই শ্রমিকরা বিআরটিসির বাস সার্ভিসে বাধা দিয়েছে।’
জেলা প্রশাসক (ডিসি) দেওয়ান মাহাবুবুর রহমান বলেন, বিষয়টি জানার পর বাস মালিক সমিতির নেতাদের ডাকা হয়েছে। তারা আসার পর বৈঠক করা হবে। সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।