আসন্ন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত বলেছেন, নৌকা হচ্ছে স্বাধীনতা ও উন্নয়নের প্রতীক। বরিশাল নগরবাসী নৌকাকে বিজয়ী করলে উন্নয়নের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিজয়ী করা হবে।
কারণ সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বরিশাল নগরবাসীর দীর্ঘদিনের চাঁপা কষ্ট ও দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে প্রধানমন্ত্রী আমার হাতে নৌকা তুলে দিয়ে একজন সেবক হওয়ার জন্য পাঠিয়েছেন। আমিও প্রধানমন্ত্রীকে নগরবাসীর একজন সেবক হওয়ার জন্য ওয়াদা করেছি। নৌকার প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত আরও বলেন, আগামী ১২ জুনের নির্বাচনে নগরবাসী নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করলে এই শহরকে আমি নতুন ও শান্তিময় শহর হিসেবে গড়ে তুলবো। পাশাপাশি দীর্ঘদিনের মুখ থুবড়ে পড়া বিধ্বস্ত নগরীকে তিলোত্তমা নগরী হিসেবে গড়ে আপনাদের উপহার দেবো।
মহানগর শ্রমিক লীগের আয়োজনে মঙ্গলবার রাতে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় দলীয় নেতাকর্মী ও নগরবাসীর উদ্দেশ্যে খোকন সেরনিয়াবাত আরও বলেন, আমার ওপর আস্থা রাখুন। আমি বেঁচে থাকতে কোনোধরনের অন্যায়, অনিয়ম ও অপরাধ হতে দেবোনা। নতুন বরিশাল গড়ারই হচ্ছে আমাদের অঙ্গীকার। প্রতিটি মানুষকে সেবা ও ভালোবাসা দিতে চাই। মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন মহানগর শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. আফতাফ হোসেন। সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন, মহানগর যুবলীগের যুগ্ন আহবায়ক মো. মাহমুদুল হাসান খান মামুন।
এরপূর্বে বরিশাল-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়কালে দলের নেতাকর্মী ও সর্বস্তরের নগরবাসীর উদ্দেশ্যে বলেছেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থী এবং তার আপন ফুফাত ভাই। তাই তাকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করলে প্রধানমন্ত্রী বরিশালকে তিলোত্তমা নগরী গড়ে দেবেন।
তিনি আরও বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থীকে বিজয়ী করা হলে আগামী দিনের নগর ভবন হবে জনগণ ও সর্বসাধারণের নগর ভবন। এজন্য তিনি (প্রতিমন্ত্রী) দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের নগরবাসীকে স্বাধীনতা ও উন্নয়নের প্রতীক নৌকা মার্কাকে বিজয়ী করার জন্য আহবান করেছেন।
ঈদ পরবর্তী দলীয় নেতাকর্মী ও নগরবাসীর সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে নৌকার প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, আপনাদের মূল্যবান ভোটে আমি নির্বাচিত হতে পারলে আর যাই হোক অতীতের মেয়রদের মতো না হয়ে দলমত নির্বিশেষে আমার বাড়ির দরজা আপনাদের জন্য সবসময় খোলা থাকবে। পাশাপাশি নগরবাসীর চাহিদাকে সর্বাত্মক গুরুত্ব দিয়ে সবধরনের উন্নয়নমূলক কাজ করা হবে। অতীতের ন্যায় নগরবাসীর ওপর কোনধরনের অপরাধ ও জুলুমকে প্রশয় দেওয়া হবেনা।
নৌকার প্রার্থী আরও বলেন, দেশের অন্যান্য সিটি করপোরেশনে যে উন্নয়ন হয়েছে, সেইদিক থেকে বরিশাল অনেক পিছিয়ে রয়েছে। তাই পরিকল্পিত উন্নয়ন ও আধুনিক সিটি করপোরেশন গড়ার স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী আমার হাতে নৌকা প্রতীক তুলে দিয়েছেন। আমার শতভাগ বিশ্বাস রয়েছে-বাংলাদেশের উন্নয়নের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার প্রতি যে আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছেন, সেইদিক বিবেচনা করে এবং প্রাধান্য দিয়ে সর্বস্তরের নগরবাসী আধুনিক ও উন্নত নগরী গড়ার লক্ষ্যে নৌকা মার্কায় তাদের মূল্যবান ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন। আগামী ১২ জুনের নির্বাচনে নৌকার বিজয় হলে সেই বিজয় হবে তিলোত্তমা বরিশাল নগরী গড়তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিজয়ী করা।
নির্বাচনে লড়ছেন না মনীষা: বরিশাল সিটি করপোরেশনের ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে দেশব্যাপী আলোচিত নারী নেত্রী বাসদ’র জেলা শাখার সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্তী এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহন করছেন না। বুধবার বেলা ১১টার দিকে নগরীর ফকিরবাড়ি রোডস্থ বাসদের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ডা. মনিষা এ ঘোষণা দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নির্বাচনে কেন লড়বেন না তা জানিয়ে মনীষা চক্রবর্তী বলেন, গত নির্বাচনের দিন সকাল থেকে সমস্ত কেন্দ্রে প্রকাশ্যে ভোট ডাকাতির ঘটনা ঘটেছিল। সাধারণ মানুষ যখন এই দৃশ্য দেখে হতবাক ও হতাশ, তখন এই জঘন্য ভোট ডাকাতির বিরুদ্ধে প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে আমরা রুখে দাঁড়িয়েছিলাম। তখন আমিসহ আমার কর্মী ও এজেন্টরা ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডারদের হামলার শিকার হয়েছিল। নির্বাচনের পর আমাকে নানাভাবে হয়রানি, দলের ওপর নানাধরনের হামলা, আমার মুক্তিযোদ্ধা বাবাকে রাজাকার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
মনীষা চক্রবর্তী আরও বলেন, আমাদের দল বাসদ ও আমাদের রাজনৈতিক জোট বর্তমান পরিস্থিতিতে যেখানে জনগণ পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে না, সেই ধরনের প্রহসনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। দলীয় সরকারের অধীনে আওয়ামী লীগের অনুগত দলসমূহকে নিয়ে পাতানো নির্বাচনের যে আয়োজন চলছে, তাতে অংশ নিয়ে আমরা জালিয়াতির নির্বাচনকে বৈধতা দিতে চাই না। ইতোমধ্যে ক্ষমতাসীন দলের লোকজনে আরও একটি গায়ের জোরের নির্বাচন করার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। ফলে যে নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারবে না, সে নির্বাচনে অংশ নিয়ে আমরা জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চাই না। তাই আগামী ১২ জুন হতে যাওয়া বরিশাল সিটি করপোরেশনের পাতানো নির্বাচন আমরা বর্জন করার ঘোষণা করছি। সংবাদ সম্মেলনে বাসদ’র কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য জনার্দন দত্ত নান্টু, জেলা সদস্য মানিক হাওলাদার, গোলাম রসূল, সন্তু মিত্র উপস্থিত ছিলেন।
৩০ ওয়ার্ডে একযোগে মিছিল : বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ডে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা একযোগে তাদের দলের মনোনীত মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেন তাপসের সমর্থনে লাঙ্গল প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহবান জানিয়ে মিছিল করেছেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নগরীর ১ নম্বর ওয়ার্ডে জাপা নেতা নাজমুল হাসান সাকিব, ২ নম্বর ওয়ার্ডে আব্দুল মান্নান, ৩ নম্বর ওয়ার্ডে সোহরাব হোসেন, ৪ নম্বর ওয়ার্ডে সেলিম সিকদার, ৫ নম্বর ওয়ার্ডে আলাউদ্দিন মিয়া, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে হারিছুর রহমান স্বপন, ৭ নম্বর ওয়ার্ডে শেখ মো. আলম, ৮ নম্বর ওয়ার্ডে শাহজাহান মিয়া, ৯ নম্বর ওয়ার্ডে আবুল হোসেন, ১০ নম্বর ওয়ার্ডে আব্দুস সোবহান, ১১ নম্বর ওয়ার্ডে মতি মিয়া, ১২ নম্বর ওয়ার্ডে ফোরকান তালুকদার, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে জাহাঙ্গীর হোসেন, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে সৈয়দ মিজানুর রহমান রতন, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে মঞ্জুরুল আলম খোকন, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে সাইদুল ইসলাম, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে আলহাজ মো. শাহেদ আলী, ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে রফিকুল ইসলাম, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে নুরু খলিফা, ২০ নম্বর ওয়ার্ডে খায়রুল ইসলাম, ২১ নম্বর ওয়ার্ডে কামাল সিকদার, ২২ নম্বর ওয়ার্ডে আবুল কালাম আজাদ, ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে রুস্তুম আলী খান, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে খলিলুর রহমান, ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে সুলতান আহমেদ, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে ইউসুফ হাওলাদার, ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে আরাফাত রহমান তাহির, ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে আবুল বাশার, ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে অ্যাডভোকেট এমএ জলিল এবং ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে ইউনুস মিয়ার নেতৃত্বে লাঙ্গল প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহবান জানিয়ে মিছিল করা হয়।
ইভিএমে ভোট গ্রহণ না করার আহবান : আসন্ন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএমে ভোট গ্রহণ না করার জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহবান জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির মনোনীত মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেন তাপস। ২৫ এপ্রিল দিবাগত রাতে নগরীর অক্সেফোর্ড মিশন রোডস্থ তার প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে জাতীয় পার্টির কর্মীসভায় তিনি এ আহবান করেন।
মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস বলেন, নগরবাসীর ভালোবাসা ও সমর্থনে আমি সিক্ত। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে কেউ যাহাতে হস্তক্ষেপ করতে না পারে, সেজন্য নির্বাচন কমিশনকে এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি ইভিএমে ভোট গ্রহণ না করার জন্য আহবান জানাচ্ছি।
জাতীয় পার্টির মহানগর আহবায়ক অধ্যাপক মহসিন উল ইসলাম হাবুলের সভাপতিত্বে কর্মী সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, পার্টির জেলার সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট এমএ জলিল, মহানগরের যুগ্ম আহবায়ক রফিকুল ইসলাম গফুর, রুস্তুম আলী খান, আকতার রহমান, ফোরকান তালুকদার, জাতীয় যুব সংহতির মহানগরের আহবায়ক অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন, সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম, জাতীয় ছাত্র সমাজের মহানগরের আহবায়ক হাওলাদার মো. জাহিদ, সদস্য সচিব মিরাজ খান প্রমুখ।