ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার বিরুদ্ধে
ইউরোপের নিষেধাজ্ঞায় ওই মহাদেশে মস্কোর জ্বালানি রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে। তবে পেছন দরজা
ব্যবহার করে রাশিয়ার জ্বালানিই কিনছে ইউরোপের দেশগুলো। আর এতে প্রধান ভূমিকা পালন করছে
ভারতের জ্বালানি পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলো।
শিপ-ট্র্যাকিং ডাটার বরাত দিয়ে বলা হয় ২০২২-২৩ অর্থবছরে
রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেলের রেকর্ড উচ্চ আমদানি ভারতের পরিশোধনকারীদের ইউরোপে ডিজেল
এবং জেট ফুয়েলের রপ্তানি বাড়াতে সাহায্য করেছে।
সস্তায় রাশিয়ার অপরিশোধিত জ্বালানি ক্রয়ের
সুবিধা ভারতীয় পরিশোধনকারীদের উৎপাদন ও মুনাফা বৃদ্ধি করেছে। একই সঙ্গে ভারতীয় কোম্পানিগুলো
ইউরোপে পরিশোধিত জ্বালানির রপ্তানি এবং বাজারে হিস্যা বাড়িয়েছে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার আগে ইউরোপ সাধারণত
ভারত থেকে প্রতিদিন গড়ে ১ লাখ ৫৪ হাজার ব্যারেল ডিজেল এবং জেট ফুয়েল আমদানি করত।
কেপলারের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ৫ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার তেল আমদানি
নিষিদ্ধ করার পর ইউরোপে ভারতের জ্বালানি রপ্তানি বেড়ে দৈনিক ২ লাখ ব্যারেল হয়েছে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত মার্চ মাসে ভারতের
রাশিয়ান অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আমদানি টানা সপ্তম মাসের মতো বেড়েছে। এর ফলে প্রথমবারের
মতো ইউরোপে শীর্ষ সরবরাহকারীর স্থান থেকে ইরাককে পেছনে ফেলেছে ভারত।
কেপলার এবং ভর্টেক্সারের তথ্য অনুযায়ী,
ভারতীয় পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলো উচ্চ পরিবহন ব্যয়ের কারণে আগে অত্যন্ত কম পরিমাণে
রাশিয়ার তেল ক্রয় করত। কিন্তু ২০২২-২৩ অর্থবছরে তারা দৈনিক গড়ে ৯ লাখ ৭০ হাজার থেকে
৯ লাখ ৮১ হাজার ব্যারেল পর্যন্ত রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছে। যা ভারতের মোট
৪৬ থেকে ৪৬ লাখ ব্যারেল তেল আমদানির এক পঞ্চমাংশেরও বেশি।
তথ্য-উপাত্তে দেখা যায়, ইরাক থেকে ভারতের
তেল আমদানি ২০২১-২২ সালে দৈনিক গড়ে প্রায় ১০ লাখ ব্যারেল হলেও বর্তমানে তা কমে ৯ লাখ
৩৬ হাজার থেকে ৯ লাখ ৬১ হাজার ব্যারেল হয়েছে।
সম্প্রতি রাশিয়ার বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী
রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রোজনেফট এবং ভারতের শীর্ষ পরিশোধনকারী কোম্পানি ইন্ডিয়ান
অয়েল কর্পোরেশন (আইওসি) ভারতে সরবরাহকৃত তেলের গ্রেড উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি এবং
বৈচিত্র্য আনতে একটি দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
কেপলার এবং ভর্টেক্সারের পরিসংখ্যান বলছে,
নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার জ্বালানি তেলের রপ্তানি ইউরোপে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই মহাদেশে
ভারতের ডিজেল রপ্তানি গত অর্থবছরে ১২ থেকে ১৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দৈনিক দেড় লাখ থেকে
১ লাখ ৬৭ হাজার ব্যারেল হয়েছে।
যা ভারতের মোট ডিজেল রপ্তানির প্রায় ৩০
শতাংশ এবং ইউরোপে ভারতের ডিজেল রপ্তানির এই পরিমাণ এক বছর আগের তুলনায় ২১ থেকে ২৪ শতাংশ
বেশি। ভারতীয় ডিজেলের প্রধান ইউরোপীয় ক্রেতা হল— ফ্রান্স, তুরস্ক,
বেলজিয়াম এবং নেদারল্যান্ডস বলে কেপলারের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে।
ভারতের জেট ফুয়েল রপ্তানির প্রায় ৫০ শতাংশই ইউরোপে যায়। অর্থাৎ ২০২২-২৩ সালে ইউরোপে ভারত দৈনিক গড়ে ৭০ থেকে ৭৫ হাজার ব্যারেল জেট ফুয়েল রপ্তানি করেছে। যা আগের বছরের ৪০ থেকে ৪২ হাজার ব্যারেলের তুলনায় বেশি।