ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে পশ্চিমা দেশগুলো। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নজরে এসেছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস। তবে অনেক ক্ষেত্রেই এসব নিষেধাজ্ঞার সুফল মিলছে না। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো উদাহরণ কয়লা। জ্বালানি পণ্যটি আমদানিতে নিষেধাজ্ঞার পরও রাশিয়া অব্যাহতভাবে কয়লা রফতানি বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। রাশিয়া বিশ্বের চতুর্থ শীর্ষ কয়লা রফতানিকারক দেশ। অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার পরই দেশটির অবস্থান। আটলান্টিক ও প্যাসিফিক ব্যাসিনে কয়লা সরবরাহের সক্ষমতা রয়েছে রাশিয়ার।
রাশিয়ান কয়লার প্রধান ক্রেতা অঞ্চল ইউরোপ। কিন্তু ব্লকটি সম্প্রতি রাশিয়া থেকে কয়লা আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। যদিও এ নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়ন হয়নি এখনো। অন্যদিকে আরেক শীর্ষ ক্রেতা দেশ জাপানও রাশিয়া থেকে কয়লা আমদানি বন্ধ করে দেয়ার পরিকল্পনা করছে। দক্ষিণ কোরিয়া এখনো রুশ কয়লা আমদানির ওপর আনুষ্ঠানিকভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি। তবে দেশটি জানিয়েছে, শিগগিরই মস্কোর সঙ্গে কয়লা বাণিজ্যের ইতি টানতে যাচ্ছে কোরিয়া।
এ পরিস্থিতিতে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কয়লা আমদানিকারক দেশ ভারত ও চীন রুশ কয়লার ওপর এখনো কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি। বরং দেশ দুটি রাশিয়া থেকে তুলনামূলকভাবে কয়লা আমদানি বাড়াচ্ছে। কারণ একের পর এক নিষেধাজ্ঞার কারণে বিপাকে পড়েছে রাশিয়ার অর্থনীতি। ফলে দেশটি জ্বালানি পণ্যের বাজার ধরে রাখতে ভারত ও চীনের কাছে আকর্ষণীয় মূল্যছাড়ে কয়লা বিক্রি করে দিচ্ছে। আর স্বাভাবিকভাবেই মূল্যছাড়ের সুবিধা থাকায় ঊর্ধ্বমুখী চাহিদা মেটাতে রাশিয়ার কাছ থেকেই কয়লা আমদানি করছে ভারত ও চীন।
এক বিশ্লেষক জানান, ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর থেকে রাশিয়া শুধু কয়লার প্রবাহ স্বাভাবিকই রাখেনি, বরং বাড়িয়েছে। কিছু ক্রেতা দেশ এরই মধ্যে বাজার বদলেছেন। ফলে ইউরোপের কিংবা জাপানের মতো দেশে বাজার হারালেও সে ক্ষতি পুষিয়ে দিয়েছে ভারত ও তুরস্কের মতো ক্রেতাদের ঊর্ধ্বমুখী আমদানি।
পণ্যবাজার বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান কেপলারের দেয়া তথ্য বলছে, গত মাসে রাশিয়া সমুদ্রপথে সব মিলিয়ে ১ কোটি ৬৪ লাখ ৫০ হাজার টন কয়লা রফতানি করে। মে মাসে রফতানির পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৬৫ লাখ ৬০ হাজার টন। অর্থাৎ রফতানি এক মাসের ব্যবধানে সামন্য কমেছে। তবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রফতানি ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং গত বছরের মে মাসের তুলনায় ৩ দশমিক ৮০ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে যুদ্ধের আগের সময়ের তুলনায়ও রফতানি বেড়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে রাশিয়া ১ কোটি ৩৪ লাখ ৩০ হাজার টন, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ১ কোটি ২২ লাখ ৮০ হাজার টন ও ফেব্রুয়ারিতে ১ কোটি ৩০ লাখ ৮০ হাজার টন কয়লা রফতানি করে। সর্বশেষ তথ্য বলছে, চীন সাম্প্রতিক মাসগুলোয় রাশিয়া থেকে বিপুল পরিমাণ কয়লা আমদানি করেছে। তবে এটি দেশটির মোট আমদানির আংশিক প্রতিফলন মাত্র।