বৈরী আবহাওয়ার কারণে সাগর উত্তাল থাকায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে ৫ দিনেও সাগরে মাছ শিকারে যেতে পারছেন না কক্সবাজার উপকূলের ১০ হাজার জেলে। গত ২২ জুলাই রাতে বৃষ্টি শুরু হয়ে টানা ৭ দিন বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ার সাথে বঙ্গোপসাগর উত্তাল রয়েছে।
জানা যায়, মৎস্য প্রজনন ও সংরক্ষণে এই বছরের ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত দীর্ঘ ৬৫ দিনের সাগরে সব ধরনের মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মৎস্য বিভাগ। গত বছর জুড়ে মাছের আকাল আর করোনার প্রাদুর্ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে কক্সবাজারের জেলেরা। এছাড়া এসময়ে সরকার এর পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা নিয়েও রয়েছে জেলেদের মধ্যে ক্ষোভ। দীর্ঘ নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেরা প্রচুর মাছ আহরণ করবে। আবার প্রাণচাঞ্চল্যতা ফিরে আসবে মৎস্যবন্দরে এমনটি আশা করছেন, জেলে এবং মৎস্য ব্যবসায়ীরা। কিন্তু বাধাঁ হয়ে দাঁড়িয়েছে বৈরী আবহাওয়া।
এদিকে দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ থাকা বরফ কল গুলোও বরফ উৎপাদনের জন্য চালু করা হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া শুরু হওয়ায় ৬৫ দিনের অপেক্ষার মধ্যে নতুন করে কালো ছায়ার প্রভাব পড়েছে।
বোট মালিক শেখ কামাল জানান, তার দুটি বোট রয়েছে, গত শুক্রবার রাতে ৬৫ দিনের অবরোধের সময় শেষ হওয়ায় তিনি তার বোট দুটিকে সাগরে মাছ আহরণের উদ্দ্যেশ্য প্রস্তুত করেছিলেন ১০ দিনের বাজার বরফ সহ প্রয়োজনীয় সকল জিনিসপত্র দিয়ে। প্রতিটি বোটে কমপক্ষে ৩১ জন থেকে ৩৪ লোকের প্রয়োজন হয়, প্রতিটি বোটের জন্য ৩০০টি বরফ ক্যানও লোড দেয়া হয়েছে। কিন্তু সাগর উত্তাল থাকায় ঘাটেই অপেক্ষা করতে হচ্ছে, যার ফলে বাজার সহ অন্যান্য খরচ বেড়ে যাচ্ছে তাদের। ঘাটে বসে থাকলে একদিনে প্রতিটি বোটে ৫০০০ টাকা খরচ হয়।
ওমর আলী মাঝি নামে এক জেলে জানান, গতবছরে সাগরে মাছ কম ধরা পড়ায় অনেক বোট মালিক তাদের বোট বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। এ বছরে ৬৫ দিনের অবরোধ শেষে যখন বোট মালিকরা জেলেদের প্রস্তুত করেছেন তাদের প্রয়োজনীয় বাজার সদাই নিয়ে সাগরে মাছ শিকার করতে তখনই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া শুরু হয়েছে, যার কারণে তাঁরা আবারও হতাশ হয়ে পড়েছে।
কক্সবাজারের আলী আইস্ বরফকলের ম্যানেজার ফারহান উদ্দিন রুবেল বলেন, র্দীঘ সময় বরফকল বন্ধ থাকার পর আবার চালু করা হয়েছে। বরফ উৎপাদন করে বিক্রি করতে না পারলে আমাদের লোকসানে পড়তে হয়। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া থাকলে বরফ বিক্রি হয় না। একদিনে বিদ্যুৎ বিল, স্টাফ এর বেতনসহ সব মিলিয়ে দৈনিক ৫০ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হয়।
নাজিরারটেক মৎস্য ব্যবসায়ী ও বহুমূখী সমিতির সভাপতি ও বোট মালিক আতিক উল্লাহ কোম্পানি বলেন, বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করায় কক্সবাজারের বোট গুলি ৬৫ দিনের অবরোধের সময় শেষ হওয়ার পরও সাগরে মাছ ধরতে যেতে পারছেন না। প্রতিটি বড় ফিশিং বোটে কমপক্ষে সাড়ে চার থেকে ৫ লাখ টাকা খরছ হয় প্রথম ট্রিপে সাগরে মাছ ধরতে যেতে।
সমিতি পাড়া এলাকার জেলে আজিজ বলেন, সাগরে ৬৫ দিন মাছ ধরা বন্ধ উপলক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে যে খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়। তা প্রকৃত জেলেরা পায় না। বেশিরভাগ ভুয়া জেলেরা পায়।
কক্সবাজার সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তারাপদ চৌহান বলেন, সদর উপজেলায় প্রায় ৯ থেকে ১০ হাজার জেলে তালিকাভুক্ত রয়েছেন। এদের মধ্যে কিছু ভুয়া জেলে থাকতে পারে। যাচাই বাছাই হচ্ছে, প্রকৃত জেলেদেরকে তালিকা তৈরী করে নিবন্ধিত করা হবে। আবহাওয়া ভালো হলেই তারা সাগরে মাছ শিকারে নেমে যাবে।