ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি:
ঠাকুরগাঁওয়ে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনায় রানীশংকৈল থানায় পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে।
শনিবার (৩০ জুলাই) বিকালে বাচোর ইউনিয়নের ভাংবাড়ি ভি.এফ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে দায়িত্বরত প্রিসাইডিং কর্মকর্তা খতিবর রহমান ও থানার দুই সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) বিলাশ চন্দ্র রায় ও আহাদুজ্জামান বাদী হয়ে মামলা তিনটি করেন। মামলাগুলোয় অজ্ঞাতনামা ৬৫০ থেকে ৮০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বুধবার (২৭ জুলাই) ঐ উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। বাচোর ইউনিয়ন পরিষদের ভাংবাড়ি ভি. এফ নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট গণনা শেষে প্রথমে জয়ী ইউপি সদস্যদের নাম ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ওই ফল প্রত্যাখ্যান করে পরাজিত ইউপি সদস্য-প্রার্থীর সমর্থকেরা লাঠিসোঁটা নিয়ে ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা নির্বাচনী কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সেখান থেকে বের হতে বাধা দেন। এ সময় পুলিশের কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। এতে কাজ না হওয়ায় হামলাকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে পুলিশ।
এ সময় মীরডাঙ্গী আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা মো. বাদশাহর আট মাসের শিশু কন্যা সুরাইয়া আক্তার আশা মায়ের কোলে থাকা অবস্থায় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। এ ঘটনায় ভাংবাড়ি ভিএফ নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা খতিবর রহমান একটি মামলা করেছেন। এতে অজ্ঞাতনামা ৩০০ থেকে ৩৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। ওই দিন রাতে ভোট গ্রহণের দায়িত্ব শেষে ফেরার সময় মীরডাঙ্গী বাজারের ১০০ গজ দক্ষিণে পুলিশের ওপর হামলা হয়। এ ঘটনায় ঠাকুরগাঁও সদর থানার এএসআই বিলাশ চন্দ্র রায় একটি মামলা করেন। মামলায় ১৫০ থেকে ২০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
শিশু সুরাইয়ার মৃত্যুর ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে লাশ নিয়ে বিক্ষোভ করেন স্থানীয়রা। ওই সময় তাঁরা রানীশংকৈল আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করেন ও রানীশংকৈল থানা ঘোরাও করে রাখেন। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ ঘটনায় রানীশংকৈল থানার এএসআই আহাদুল জামান বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় অজ্ঞাতনামা ২০০ থেকে ২৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এদিকে মামলার কথা শুনে অনেকেই গ্রেপ্তার আতঙ্কে এলাকা ছেড়েছেন। হাতে গোনা কয়েকটি দোকান ছাড়া গ্রামের প্রায় সব দোকান বন্ধ রয়েছে।
এ ঘটনায় ওই দিন রাতেই ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মাহবুবুর রহমান ও পুলিশ সুপার (এসপি) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিহতের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেন। এদিকে এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রামকৃষ্ণ বর্মণকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর আইনি প্রক্রিয়া শেষে বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) দুপুরে মরদেহটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে জানাজা শেষে তাকে স্থানীয় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
অন্যদিকে, নির্বাচনী সহিংসতায় শিশু সুরাইয়া আক্তার আশার (৮ মাস) মৃত্যু ভারী কোনো বস্তু বা বুলেটের আঘাতে হতে পারে বলে জানিয়েছে ফরেনসিক বিভাগ।
দিনাজপুর এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, সুরাইয়ার মাথার আঘাত গুরুতর ছিল। ভারী কোনো বস্তু বা বুলেটের আঘাতে সুরাইয়ার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে গুলিতে নিহত সুরাইয়ার বাবা মো. বাদশা বলেন, ‘সুরাইয়ার মতো আর কারও সন্তান যেন এভাবে মারা না যায়। এসব মামলায় যেন সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা না হয়, সেটা আপনারা দেখবেন।
মামলার বিষয়ে রাণীশংকৈল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম জাহিদ ইকবাল বলেন, নির্বাচনী সহিংসতায় অজ্ঞাতনামা ছয় শতাধিক জনের নামে থানায় তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। কোন সাধারণ মানুষ এতে হয়রানি হবেনা। শুধু মাত্র দোষীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে। এসব হামলার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার কাজ চলছে।