দ্বাদশ জাতীয়
সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আগামী ১৮ ডিসেম্বর থেকে নির্বাচনী প্রচারণা ছাড়া সব ধরনের সভা-সমাবেশ
বন্ধে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দেওয়া নির্দেশনা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন
করবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। আজ বুধবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র
মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
নির্বাচনের প্রচার শুরুর পর থেকে ভোটের আগে পর্যন্ত যে কোনো দলের সভা, সমাবেশ ও রাজনৈতিক কর্মসূচির অনুমতি না দিতে বলেছে ইসি। গণতান্ত্রিক দেশে এটা সঠিক কি না, এটা সংবিধান পরিপন্থী হচ্ছে কি না- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটা তো অতি সাধারণ বিষয়। একটা বিশেষ সময়, একটা নির্বাচন হতে যাচ্ছে। প্রত্যেকটি দল যার যার প্রার্থী নিয়ে তাদের প্রচার-প্রচারণা করবে, সেই সময় এই দল, সেই দল মুখোমুখি হতেই পারে যাতায়াতের পথে। সেখানে যদি আবার আরেকটা নতুন দল নির্বাচন ছাড়া অন্য কথা বলে, সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন যেটা বলেছে, ব্যাঘাত হতেই পারে।
আরও পড়ুন>> ট্রেনে নাশকতা নির্বাচন বন্ধের ষড়যন্ত্র: ওবায়দুল কাদের
আসাদুজ্জামান
খান বলেন, ‘নির্বাচনে যাতে ব্যাঘাত না হয়, সেজন্য নির্বাচন কমিশন তার অর্পিত দায়িত্ব
যথাযথভাবে পালন করবেন এটাই আমরা বুঝি। তার (প্রধান নির্বাচন কমিশনার) অর্পিত দায়িত্ব
পালন করতে গিয়ে তিনি যেটা মনে করেছেন, আমি মনে করি সেটা যথার্থই মনে করেছেন। সুষ্ঠু,
সুন্দর ও স্বাভাবিকভাবে যাতে নির্বাচনটি হয় আমার মনে হয় এজন্যই নির্দেশনাটা দিয়েছেন।
সঠিক, সুন্দর ও নিরপেক্ষভাবে একটি নির্বাচন হতে দেওয়ার জন্য উনি (সিইসি) যা যা বলছেন,
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর সেগুলো করবেন।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
হিসেবে এই নির্দেশনাকে সংবিধান পরিপন্থী মনে করছেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি
বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন তো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তারা যখন একটি নির্দেশনা দিয়েছেন,
তারা তো সংবিধান দেখেই দিয়েছেন। এখানে সংবিধান লঙ্ঘন হওয়ার কিছু নেই, এখানে তো নির্বাচন
কীভাবে হবে সেটা তিনি জানেন।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে...আমি মনে করি সংবিধান ভালোভাবে
জেনে, সেটা দেখেশুনেই তারা নির্দেশনাটা দিয়েছেন। এখানে সংবিধান লঙ্ঘনের কিছু হয়েছে
বলে আমার মনে হয় না। আপনি এ বিষয়ে আইনমন্ত্রীর কাছ থেকে আরও ভালো ব্যাখ্যা নিতে পারেন।’
এর আগের সংসদ
নির্বাচনগুলোতে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়নি- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আসাদুজ্জামান
খান বলেন, ‘এখন হয়তো উনি (সিইসি) চিন্তা করছেন এ রকম হতে পারে, সেজন্য উনি বলেছেন।’
এবার নির্বাচন
ঘিরে আইনশৃঙ্খলার অনেক বেশি অবনতি হতে পারে বলে মনে করছেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মোটেই অবনতি হবে না। অবনতি করার জন্য প্রচেষ্টা চলছে সেটাও আপনারা দেখছেন।
জায়গায় জায়গায় বাস পুড়িয়ে দিচ্ছে, জায়গায় জায়গায় রেললাইন উঠিয়ে দিচ্ছে।
সেখানে এগুলোকে স্বাভাবিক করার জন্য নির্বাচন কমিশন তাদের দৃষ্টিতে যেটা মনে হয়েছে
সেটা তারা ঘোষণা দিয়েছেন।’
ইসির নির্দেশনা
বাস্তবায়নে কি আপনারা মাঠপর্যায়ে নির্দেশনা দেবেন- এ প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান
খান বলেন, ‘নির্দেশনা পালনের জন্য যাদের যাদের দায়িত্ব, আমার মনে হয় চিঠি অনুযায়ী
তারা দায়িত্ব পালন করবেন।’
বিএনপি যাতে
আগামী ১৮ ডিসেম্বরের পর সভা-সমাবেশ না করতে পারে সেজন্য কি এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে-
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এটা আপনি নির্বাচন কমিশনকে জিজ্ঞাসা করবেন। নির্বাচন কমিশন তো স্পষ্টই
বুঝতে পারছে, তারা (বিএনপি) নির্বাচনে না এসে ধ্বংসের খেলায় নেমেছে। সেই জায়গাটিতে
যাতে ধ্বংস করতে না পারে, নির্বাচন জাতীয় সুষ্ঠুভাবে হয়, এদেশের জনগণ যাতে সুন্দরভাবে
ভোট দিতে পারে। আমার মনে হয় সেজন্য এই ঘটনাটা ঘটছে।’
এর আগে গতকাল
মঙ্গলবার ইসি সচিবালয়ের উপসচিব মো. আতিয়ার রহমানের সই করা এ সংক্রান্ত একটি চিঠি
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে পাঠানো হয়।
ইসির চিঠিতে ইসি বলেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের দিন আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি ধার্য করা রয়েছে। আগামী ১৮ ডিসেম্বর থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা শুরু হবে। ১৮ ডিসেম্বর থেকে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ছাড়া নির্বাচনী কাজে বাধা হতে পারে বা ভোটাররা ভোটদানে নিরুৎসাহিত হতে পারেন, এরূপ কোনো সভা, সমাবেশ বা অন্য কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা থেকে সবাইকে বিরত রাখা বাঞ্ছনীয়।
আরও পড়ুন>> এক লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পাবে নিহতের পরিবার: রেলওয়ে মহাপরিচালক
এতে বলা হয়,
এ অবস্থায়, আগামী ১৮ ডিসেম্বর থেকে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা
ছাড়া অন্য কোনো সভা, সমাবেশ বা অন্য সব রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা
থেকে সবাইকে বিরত রাখার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশিত হয়ে
অনুরোধ করা হলো।