প্রথমবারের আইপিএলে অংশ নিয়েই ফাইনালে উঠে চমকে দিয়েছিল
গুজরাট টাইটান্স। আর ফাইনালে তারা রাজস্থান রয়্যালসের মতো পুরনো ও অভিজ্ঞ দলকে হারিয়ে
জিতে নিল শিরোপাও।
অর্থাৎ প্রথমবারেই বাজিমাত করলো গুজরাট। আর দলটির এই
সাফল্যে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেন অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া।
পঞ্চদশ আইপিএলের গ্র্যান্ড ফাইনালে আজ রাজস্থানকে ৭
উইকেট হারিয়ে চ্যাম্পিয়নের তকমা জিতেছে গুজরাট। আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে
অনুষ্ঠিত ম্যাচে শুরুতে ব্যাট করে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৩১ রানের লক্ষ্য ছুড়ে দিয়েছিল রাজস্থান,
যা ৩ উইকেট হারিয়ে ১১ বল হাতে রেখেই পেরিয়ে যায় গুজরাট।
এবারই প্রথম আইপিএলে যাত্রা শুরু করা গুজরাট শীর্ষে
থেকেই লিগ শেষ করেছিল। এই রাজস্থানকেই প্রথম কোয়ালিফায়ারে হারিয়ে তারা উঠেছিল ফাইনালে।
অন্যদিকে রাজস্থান ১৪ বছর পর ফাইনালে উঠেছিল। দলটির স্বপ্ন ছিল দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপাটি
ঘরে তোলার। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন গুঁড়িয়ে দিল গুজরাট। ফাইনালসহ এবারের আসরে মুখোমুখি
হওয়া ৩ ম্যাচেই গুজরাটের কাছে হেরেছে রাজস্থান। ফাইনালেও তার অন্যথা হয়নি।
রাজস্থানের দেওয়া লক্ষ্য তাড়ায় গুজরাট অবশ্য শুরুর
দিকেই ধাক্কা খেয়েছিল। ওপেনার ঋদ্ধিমান সাহা মাত্র ৫ রান করেই বিদায় নেন। এরপর ম্যাথু
ওয়েডও ফেরেন অল্প রানেই (৮)। কিন্তু এরপর আরেক ওপেনার শুভমান গিল ও অধিনায়ক হার্দিক
মিলে ৬৩ রানের জুটি গড়ে ম্যাচের চাকা ঘুরিয়ে দেন। দেখেশুনে খেলতে থাকা হার্দিক অবশ্য
দলকে জয়ের পথে রেখে যুজবেন্দ্র চাহালের শিকার হয়ে ফেরেন। তার ব্যাট থেকে আসে ৩০ বলে
৩৪ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস। এরপর বাকি পথ কোনো বিপদ হতে দেননি গিল ও ডেভিড মিলার।
এর মধ্যে গিল ৪৩ বলে ৪৫* রানের ধৈর্যশীল ইনিংস খেলেন। অন্যদিকে মিলার আরও একবার বিধ্বংসী
ব্যাটিং প্রদর্শনীতে 'ফিনিশারের' ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। মাত্র ১৯ বলে ৩২ রান করে অপরাজিত
থাকার পথে এই প্রোটিয়া বাঁহাতি ব্যাটার ৩টি চার ও ১টি ছক্কা হাঁকান।
বল হাতে রাজস্থানের প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা, ট্রেন্ট বোল্ট
এবং চাহাল ১টি করে উইকেট নেন। এর মধ্যে কিউই পেসার বোল্ট ৪ ওভারে খরচ করেন মাত্র ১৪
বল। কিন্তু বাকি বোলারদের অনিয়ন্ত্রিত বোলিং ও 'কিলার' মিলারের তাণ্ডবে হেরে যায় তারা।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে গুজরাটের বোলারদের সামনে
হাঁসফাঁস অবস্থায় পড়েন রাজস্থানের ব্যাটাররা। বিশেষ করে গুজরাটের অধিনায়ক হার্দিকা
পান্ডিয়া দুর্দান্ত বোলিং করেছেন।
পান্ডিয়াবাহিনীর নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের কারণেই দেখেশুনে
শুরু করে রাজস্থান। দুই ওপেনার যশস্বী জসওয়াল এবং জস বাটলার ধীরে ধীরে রানের গতি বাড়ানোর
চেষ্টা করছিলেন। চতুর্থ ওভারের শেষ বলে যশস্বীকে (১৬ বলে ২২) ফেরান জশ দয়াল। এরপর নবম
ওভারে গুজরাট অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়ার শিকার হন রাজস্থান অধিনায়ক সঞ্জু স্যামসন
(১১ বলে ১৪)। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা জস বাটলার ছিলেন সাবধানী। প্রথম ১০ ওভারে আসে তাদের
রান মাত্র ৭১।
বাটলার তবু সুযোগ পেলে হাত খুলছিলেন, কিন্তু দেবদূত
পাডিক্কাল রানই তুলতে পারছিলেন না। ১০ বলে ২ রান করে দেবদূত মোহাম্মদ শামির তালুবন্দি
হন রশিদ খান। এরপর সবচেয়ে বড় উইকেটটি শিকার করেন হার্দিক। ৩৫ বলে পাঁচ বাউন্ডারিতে
৩৯ রান করা জস বাটলার ধরা পড়েন উইকেটকিপার ঋদ্ধিমান সাহার গ্লাভসে। ৭৯ রানে ৪ উইকেট
হারিয়ে রাজস্থান তখন দিশেহারা। বল হাতে আগুন ঝরাচ্ছিলেন হার্দিক।
১২ বলে ১১ করা শিমরন হেটমায়ারকে কট অ্যান্ড বোল্ড করে
রাজস্থানের বিপদ আরও বাড়িয়ে তোলেন হার্দিক পান্ডিয়া। এরপর রাজস্থানকে ৯৮ রানে রেখে
ফেরেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। শেষদিকে রায়ান পরাগের ১৫ বলে ১৫* এবং ওবেদ ম্যাকয়ের ৫ বলে
৮ রানের ছোট ইনিংসে ভর করে মান বাঁচানো সংগ্রহ পায় রাজস্থান।
বল হাতে হার্দিক পান্ডিয়া ৪ ওভারে মাত্র ১৭ রানে নেন
৩ উইকেট। সাই কিশোর নেন ২ উইকেট। আফগান লেগ স্পিনার রশিদ খান ৪ ওভারে মাত্র ১৮ রান
খরচে নেন ১ উইকেট। এছাড়া ১টি করে উইকেট গেছে শামি, যশ দয়ালের ঝুলিতে।
আইপিএলের ইতিহাসে মাত্র তৃতীয় অধিনায়ক হিসেবে ফাইনালের
ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হয়েছেন হার্দিক পান্ডিয়া (৩৪ রান ও ১৭ রানে ৩ উইকেট)। এর আগে
২০০৯ সালে ডেকান চার্জার্সের বিপক্ষে ১৬ রানে
৪ উইকেট নিয়ে ভারতের কিংবদন্তি স্পিনার অনিল কুম্বলে এবং ২০১৫ সালে চেন্নাই সুপার কিংসের
বিপক্ষে ২৬ বলে ৫০ রান করে ভারতীয় ওপেনার রোহিত শর্মা ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন।