অবসরপ্রাপ্ত ও নেশা গ্রস্থ দিয়ে চলছে রেলওয়ে শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি। এ ছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ। ফলে সাধারণ শ্রমিকদের মধ্যে চলছে চরম অসন্তোষ।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিক কর্মচারীগণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসনিা'র কাছে নেশাগ্রস্থ এবং অবসর মুক্ত রেলওয়ে শ্রমিক লীগ গঠনের দাবি জানান।
জানা যায়, বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. হাবিবুর রহমান আকন্দের ঢাকার শান্তিনগর রূপায়ন টাওয়ারের নিজ ফ্ল্যাটে গত বৃহস্পতিবার ডিবি পুলিশ অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ ফেনসিডিলসহ মাদকদ্রব্য জব্দ করে। এসময় মো. হাবিবুর রহমানের পুত্রবধূ পাভেলের স্ত্রী ও পুত্র সাজ্জাদুর রহমানকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ নিয়ে যায়। পরবর্তীতে মুসলিকার মাধ্যমে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়ার কথা জানান রূপায়ন টাওয়ারে বসবাসরত ফ্ল্যাটের মালিক, নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
মো. হাবিবুর রহমান আকন্দের ছেলে টিএক্স আর হিসেবে দাদা কর্মরত বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান পাভেল সর্বদা নেশাগ্রস্ত থাকে। চাকরিতে দায়িত্ব পালন না করাসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ক্ষমতার অপব্যবহার, উৎশৃংখল ভাবে চলাফেরা করে থাকেন তিনি।
জানা যায় বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়া এবং সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, কার্যকরী সভাপতি দুইজন, অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক একজন, সহ-সভাপতি দুই জনসহ ৬-৭ জন সংগঠনের মূল পদধারী ইতিমধ্যে চাকরি হতে অবসরে চলে গেছেন।
বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিক লীগের গঠনতন্ত্র ও শ্রম আইন অনুসারে বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিক লীগের কোনো অবসরপ্রাপ্ত বা বহিরাগত ব্যক্তির ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ নাই। শুধুমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ টি শিল্প প্রতিষ্ঠানে বহিরাগত ব্যক্তিরা ট্রেড ইউনিয়ন করতে পারবেন, উক্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ৬টি শিল্প প্রতিষ্ঠানের তালিকায় বাংলাদেশ রেলওয়ের নাম অন্তর্ভুক্ত নাই। সুতরাং কোন অবসরপ্রাপ্ত অথবা বহিরাগত ব্যক্তি বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিক লীগে থাকতে পারেন না।
ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যাক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য শ্রম আইন ও শ্রম বিধিমালা এবং বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিক লীগের গঠনতন্ত্রকে উপেক্ষা করে ২০০৯ সালে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. হাবিবুর রহমান আকন্দ, ২০১৪ সালে সভাপতি মোঃ হুমায়ুন কবীর অবসরে গেলেও অবৈধভাবে ক্ষমতা ও সংগঠনের পদ পদবী দখল করে আছেন। রেলওয়ের ছয় কোটি টাকা আত্মসাৎ, দূর্নীতির অভিযোগে দুদকে মামলা সহ চাকরি দেওয়ার নামে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়াও অবৈধভাবে রেলওয়ের বাসা দখল করে ভাড়া দেওয়া, দলীয় ক্ষমতা প্রয়োগ করে ছেলের নামে বাসা বরাদ্দ নিয়ে পাবলিককে ভাড়া দেওয়া, ঢাকা কমলাপুর বিমানবন্দর টঙ্গী-জয়দেবপুরসহ বিভিন্ন স্টেশনে নামে-বেনামে দোকান, ঢাকা শান্তিনগরে রূপায়ন টাওয়ারে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, গাজীপুরে দুই ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রীর নামে ফ্ল্যাট ও প্লট রয়েছে। ঢাকায় খালাসী পদে কর্মরত তার আপন ভাগ্নে মোঃ কামাল হোসেনের জয়দেবপুর স্টেশন সংলগ্ন হারিনাল লাগালিয়া রোডে বিলাসবহুল বাড়ি, গাজীপুরের কাপাসিয়ায় "রাওনাট আধুনিক হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার", গ্রামে আধুনিক বাড়ি, নামে বেনামে কয়েক একর জমি ক্রয় করেছেন বলে জানা গেছে। এছাড়াও রয়েছে বিলাসবহুল কয়েকটি গাড়ি। মোঃ হাবিবুর রহমান আকন্দের অবৈধ কর্মকান্ড ও দলীয় ক্ষমতার দাপটে রেলওয়েতে কর্মরত সর্বস্তরের কর্মকর্তা কর্মচারী ও রেলওয়ে শ্রমিক লীগের সাধারণ সদস্যগণের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিক কর্মচারীগণ দলীয় প্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ কামনা করেন এবং অবসর মুক্ত রেলওয়ে শ্রমিক লীগ গঠনের জোর দাবি জানান।