আজঃ বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪
শিরোনাম

নীরব ‘ঘাতক’ তামাক, মুক্তিতে প্রয়োজন কার্যকর আইন

প্রকাশিত:রবিবার ২৯ মে ২০২২ | হালনাগাদ:রবিবার ২৯ মে ২০২২ | অনলাইন সংস্করণ
দর্পণ নিউজ ডেস্ক

Image

ধূমপান ও তামাক সেবনের ফলে হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যানসার, ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে প্রতি বছরে ৮০ লক্ষাধিক মানুষ মারা যাচ্ছে। এর মধ্যে পরোক্ষ ধূমপানের কারণে পৃথিবীতে প্রতি বছর ১২ লক্ষাধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করে। বাংলাদেশে বছরে এক লাখ ৬১ হাজারের অধিক মানুষ তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে মারা যায়। পঙ্গুত্ব বরণ করে আরও কয়েক লাখ মানুষ

হায়দার আলী (২৭) গাজীপুরের একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন। ঠাকুরগাঁওয়ে তাদের প্রতিবেশী তানিয়ার (২২) সঙ্গে তিন মাস আগে বিয়ে হয়। বিয়ের দুই মাস পর তানিয়াকে গাজীপুরে নিয়ে আসেন হায়দার। একটি বাসা নিয়ে সেখানে তারা বসবাস শুরু করেন। সংসারজীবন প্রথমে ভালোই চলছিল। হায়দার প্রথম দিকে ধূমপান করতেন, সেটা তেমন পছন্দ করতেন না তানিয়া। তবু মানিয়ে চলছিলেন। এর মধ্যে একদিন তানিয়া দেখতে পান, তার স্বামী ঘরের ভেতরে কিছু একটা লুকোছাপা করে সেবন করছেন। তানিয়া জানতে চান, সেটা কী। হায়দার প্রথমে ইনিয়ে-বিনিয়ে কথা ঘোরাতে চাইলেও পরে স্বীকার করে নেন, তার হাতে গাঁজা। তানিয়া এটা ছুড়ে ফেলে দিতে চাইলে হায়দার তাকে বাধা দেন। পরদিন একইভাবে হায়দার ঘরে গাঁজা সেবনে মত্ত হন। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। এক পর্যায়ে হায়দার তার স্ত্রীকে কিল-ঘুষি মেরে বাসা থেকে বের করে দেন। তানিয়া নিরূপায় হয়ে তার গ্রামের বাড়িতে চলে যান। ঘটনার তিনদিন পর হায়দার ঠাকুরগাঁওয়ে যান তানিয়াকে আনতে। তখন তানিয়ার পরিবার সায় না দিলে হায়দার তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে শুরু করেন। তানিয়ার বাবা হায়দারের পরিবারকে বিষয়টি ফোনে জানান। হায়দারের বাবা এলাকার চেয়ারম্যানসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে তাদের বাড়িতে আসেন। তখন দুপক্ষ সালিশে বসে। সালিশে হায়দারের গাঁজা সেবনের বিষয়টি জানানো হয়। এ নিয়ে দুপক্ষেরই তুমুল যুক্তি-তর্ক হলেও সিদ্ধান্ত হয় বিচ্ছেদের।

বর্তমানে যে আইন রয়েছে তা যথেষ্ট শক্তিশালী নয়। আমরা ২০৪০ সালের আগে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জন করতে চাই। তাহলে বর্তমানে যে আইন রয়েছে তাকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। আইন শক্তিশালী করলে আমরা তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জন করতে পারবো

তামাকজনিত রোগে বছরে এক লাখ ৬১ হাজার মৃত্যু: মাদকের বিরুদ্ধে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অবস্থান জিরো টলারেন্স। আর মাদকের প্রথম ধাপ হিসেবে ধূমপানকেই দায়ী করেন বিশেষজ্ঞরা। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে জাতীয় সংসদে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের দেওয়া তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে বছরে এক লাখ ৬১ হাজারের অধিক মানুষ তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে মারা যান। পঙ্গুত্ব বরণ করেন আরও কয়েক লাখ মানুষ। এখনো দেশের ৩৫ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠী তামাক ব্যবহার করেন। ধূমপান না করেও প্রায় তিন কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ বিভিন্ন পাবলিক প্লেস, কর্মক্ষেত্র ও পাবলিক পরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির (চিকিৎসা ব্যয় ও উৎপাদনশীলতা হারানো) পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা।

তামাকবিরোধী সংগঠকরা বলছেন, গণপরিবহন, পার্ক, সরকারি-বেসরকারি অফিস, গ্রন্থাগার, রেস্তোরাঁ, শপিংমল, পাবলিক টয়লেটসহ বিভিন্ন জনসমাগমস্থলে হরহামেশাই লোকজনকে ধূমপান করতে দেখা যায়। অথচ জনসমাগমস্থলে ধূমপান বন্ধে ২০০৫ সালে প্রণয়ন করা হয়েছিল একটি আইন। আইন অনুযায়ী প্রকাশ্যে ধূমপানের জরিমানা ধরা হয়েছিল ৫০ টাকা। কিন্তু পরে ২০১৩ সালে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনের সংশোধনী এনে জনসমাগমস্থলে ধূমপানের শাস্তির অর্থ ৫০ থেকে বাড়িয়ে ৩শ টাকা করা হয়। কিন্তু আইন না জানা ও ভাঙায় অভ্যস্ত লোকজনের অবস্থা তাতে বদলায়নি এতটুকু।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। ২০১৬ সালে ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন শীর্ষক সাউথ এশিয়ান স্পিকারস সামিটের সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এ ঘোষণা দেন। এই লক্ষ্য অর্জনে বর্তমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে এফসিটিসির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে সংশোধন করার ঘোষণাও দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর তামাকবিরোধী সংগঠন থেকে আইন সংশোধন করে শক্তিশালীকরণের দাবি ওঠে। শতভাগ ধূমপান বন্ধ নিশ্চিতে তামাকবিরোধী বিভিন্ন সংগঠন থেকে বেশকিছু প্রস্তাবও দেওয়া হয়। এসব প্রস্তাবের বিষয়ে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল চূড়ান্ত সভা করে। সেখানে ছয়টি প্রস্তাবনার প্রাথমিক অনুমোদন দেওয়া হয়। সেসব প্রস্তাবনার খসড়া এরই মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পেশ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ে এটা পাস হলে পাঠানো হবে সংসদে। সেখানে পাস হলেই তা শক্তিশালী আইন হিসেবে রূপান্তরিত হবে। এর মধ্য দিয়েই ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্য পূরণ হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

শতভাগ ধূমপান বন্ধ নিশ্চিতে যে ছয়টি প্রস্তাবনার খসড়া মন্ত্রণালয়ে পেশ হয়েছে, সেগুলো হলো- উন্মুক্ত স্থানে (পাবলিক প্লেস) ধূমপান নিষিদ্ধ করা, বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা বিক্রি বন্ধ করা, ই-সিগারেট বাজারজাত বন্ধ করা, তামাকজাত পণ্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণীর আকার বাড়ানো, সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচির (সিএসআর) নামে সিগারেট কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করা এবং বিক্রির স্থানে তামাকজাত দ্রব্যের প্রদর্শন বন্ধ করা।

১. উন্মুক্ত স্থানে (পাবলিক প্লেস) ধূমপান নিষিদ্ধ করা

খসড়া প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, অধূমপায়ীদের রক্ষায় বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বা ডেজিগনেটেড স্মোকিং জোন বিলুপ্ত করতে হবে। চতুর্দিকে দেয়াল আবদ্ধ নয় এমন রেস্তোরাঁসহ সব ধরনের হোটেল, পাবলিক প্লেস, কর্মক্ষেত্র এবং একাধিক কামরা বিশিষ্ট যান্ত্রিক পরিবহন ও সব অযান্ত্রিক গণপরিবহনে ধূমপান সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করতে হবে। পাশাপাশি ধূমপানমুক্ত ভবন বলতে সেই ভবনের বারান্দাসহ সব আচ্ছাদিত স্থানকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে আইনে। শতভাগ ধূমপানমুক্ত আইন জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন সহায়ক উল্লেখ করে প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, এটি একই সঙ্গে করোনাভাইরাসের মতো যে কোনো ভবিষ্যৎ মহামারিতে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করবে। কারণ গবেষণায় দেখা গেছে, কর্মক্ষেত্র, রেস্তোরাঁসহ সব ধরনের পাবলিক প্লেসকে শতভাগ ধূমপানমুক্ত করা গেলে কর্মীদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৮৫ শতাংশ হ্রাস পায়, শ্বাসতন্ত্র ভালো থাকে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকিও কমে যায়। অন্য এক গবেষণায় দেখা গেছে, ধূমপানমুক্ত পরিবেশে ধূমপায়ী কর্মীর সিগারেট সেবনের মাত্রা দিনে গড়ে দুই থেকে চারটি পর্যন্ত কমেছে।

ব্রাজিলের একটি গবেষণায় উঠে এসেছে, দেশটিতে শতভাগ ধূমপানমুক্ত আইন বাস্তবায়ন করা গেলে ১৬ বছরে ১৫ হাজার নবজাতক শিশুর মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব হতো। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে জনসাধারণকে রক্ষার্থে প্যারাগুয়ে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে সব আচ্ছাদিত পাবলিক প্লেস, কর্মক্ষেত্র ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপান শতভাগ নিষিদ্ধ করে। বর্তমানে থাইল্যান্ড, নেপাল, পাকিস্তান, তুরস্ক, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের ৬৭টি দেশ পূর্ণাঙ্গ ধূমপানমুক্ত আইন প্রণয়ন (ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান রাখার বিধান বাতিলসহ) ও বাস্তবায়ন করছে।

২. বিক্রির স্থানে তামাকজাত দ্রব্যের প্রদর্শন বন্ধ করা

প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, তামাকজাত দ্রব্য বিপণনে কোম্পানিগুলোর আগ্রাসী কৌশল মোকাবিলার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) এর ধারা ১৩ ও এ সংক্রান্ত গাইডলাইন অনুযায়ী বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন, বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা এবং পৃষ্ঠপোষকতা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে। বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করতে হবে। এক্ষেত্রে তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়স্থলে যে কোনো উপায়ে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচার হিসেবে গণ্য করা হবে মর্মে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এক গবেষণায় ৭৭টি দেশের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা হলে দৈনিক ধূমপানের প্রবণতা প্রায় ৭ শতাংশ কমে। তামাকপণ্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ- ইউরোপের এমন ছয়টি দেশে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, কিশোর বয়সীদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা হ্রাসে তামাকপণ্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করার কার্যকর প্রভাব রয়েছে। বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন নিষিদ্ধের পর আইসল্যান্ড ও কানাডায় প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ধূমপানের হার ১০ শতাংশ কমেছে। নেপাল, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব, থাইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, ফিনল্যান্ড এবং নরওয়েসহ বিশ্বের ৫০টি দেশ এরই মধ্যে পয়েন্ট অব সেল বা বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করেছে।

৩. সিএসআরের নামে সিগারেট কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করা

খসড়া প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, বিদ্যমান ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫-এ সামগ্রিকভাবে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা নিষিদ্ধ করা হলেও তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি বা সিএসআর কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়নি। ফলে তামাক কোম্পানিগুলো সিএসআর কার্যক্রমের অজুহাতে নীতিপ্রণেতাদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সার্বিক তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করছে। কাজেই তামাক কোম্পানির সিএসআর কার্যক্রম বন্ধ করতে এফসিটিসির আলোকে বিদ্যমান ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ সংশোধন করে তামাক কোম্পানির সিএসআর কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে। এটি করা গেলে তামাক কোম্পানিগুলো প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নিজেদের প্রচার এবং নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অন গ্লোবাল টোব্যাকো ইপিডেমিক ২০২১ অনুযায়ী নেপাল, ইরান, উরুগুয়ে, নাইজেরিয়া, স্পেন, রাশিয়াসহ বিশ্বের ৬২টি দেশ তামাক কোম্পানির সিএসআর কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে।

৪. বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা ও খোলা ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য বিক্রি বন্ধ করা

তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের খসড়া প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, বিদ্যমান ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ সংশোধন করে বিড়ি-সিগারেটের সিঙ্গেল স্টিক বা খুচরা শলাকা এবং প্যাকেট ছাড়া বা খোলা ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য বিক্রি নিষিদ্ধ করতে হবে। এটি করা গেলে জনগণের মধ্যে বিশেষ করে কিশোর, তরুণ, নারী ও স্বল্প আয়ের মানুষের মধ্যে এসব পণ্যের সহজলভ্যতা ও ব্যবহার কমে। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, পাকিস্তানসহ বিশ্বের ১১৮টি দেশ সিঙ্গেল সিগারেট স্টিক বা ছোট প্যাকেট বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে। পাশের দেশ ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্য ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে বিড়ি-সিগারেটে খুচরা বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে। এছাড়া শ্রীলঙ্কায় সিগারেটের খুচরা শলাকা বিক্রি নিষিদ্ধ করার উদ্যোগটি প্রক্রিয়াধীন।

৫. ই-সিগারেট ও হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্টস বাজারজাত বন্ধ করা

প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বিদ্যমান পরিস্থিতি বিবেচনায় ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্ট অর্থাৎ ই-সিগারেটসহ সব ভ্যাপিং এবং হিটেড তামাকপণ্যের উৎপাদন, আমদানি, বিক্রি ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করতে হবে। এই পদক্ষেপ নেওয়া গেলে তরুণ ও কিশোর বয়সীদের ধূমপানে আসক্ত হওয়া থেকে বিরত রাখা যাবে, যা ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে সহায়তা করবে। পাশের দেশ ভারত এরই মধ্যে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করেছে। এছাড়া শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ ৩২টি দেশে এসব পণ্য বিক্রি নিষিদ্ধ।

৬. তামাকজাত পণ্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণীর আওতা বাড়ানো

প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়েছে, সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করতে হবে এবং সব ধরনের তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট, মোড়ক, কার্টন বা কৌটার আকার/আয়তন এবং এগুলোর মধ্যে ন্যূনতম কী পরিমাণ তামাকজাত দ্রব্য থাকবে তা নির্ধারণ করে দিতে হবে। বড় আকারের সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা সহজেই তরুণ ও ব্যবহারকারীদের তামাকের ব্যবহার ছাড়তে উৎসাহিত করে।

উরুগুয়ে ও অস্ট্রেলিয়ায় পরিচালিত গবেষণায় দেখা যায়, সচিত্র সতর্কবার্তার আওতা বাড়ানো হলে ব্যবহারকারী স্বাস্থ্যক্ষতির বিষয়ে ভাবতে বাধ্য হয় এবং তামাক ছাড়তে উৎসাহিত হয়। মেক্সিকোতে এক গবেষণায় দেখা যায়, বৃহদাকার সচিত্র সতর্কবার্তা অল্প বয়সীদের (১২-১৪ বছর) মধ্যে সিগারেটের প্রতি আকর্ষণ কমায়। তামাক কোম্পানি নির্ধারিত/নির্দিষ্ট আকারের মোড়কে তামাকপণ্য বাজারজাতকরণে বাধ্য হলে মোড়কে মুদ্রিত সচিত্র সতর্কবার্তার কার্যকারিতা বাড়ে। বিশ্বের ৮৩টি দেশ তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে ৫০ শতাংশের অধিক জায়গাজুড়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণ করছে, যার মধ্যে নেপাল (৯০%), ভারত (৮৫%), থাইল্যান্ড (৮৫%), মালদ্বীপ (৯০%), শ্রীলঙ্কা (৮০%), অস্ট্রেলিয়া (৮২.৫%), উরুগুয়ে (৮০%) ও তুরস্ক (৯২.৫%) অন্যতম। অন্যদিকে বিশ্বের ১৮টি দেশে প্লেইন প্যাকেজিং প্রথা বাস্তবায়ন করছে যার মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া (২০১২), ফ্রান্স (২০১৭), যুক্তরাজ্য (২০১৭), নরওয়ে (২০১৮), আয়ারল্যান্ড (২০১৮), নিউজিল্যান্ড (২০১৮), হাঙ্গেরি (২০১৯), সৌদি আরব (২০১৯), তুরস্ক (২০১৯), থাইল্যান্ড (২০১৯), উরুগুয়ে (২০১৯), স্লোভেনিয়া (২০২০), ইসরায়েল (২০২০), সিঙ্গাপুর (২০২০), কানাডা (২০১৯), বেলজিয়াম (২০২১), নেদারল্যান্ডস (২০২১) এবং ডেনমার্ক (২০২১)।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতামত: ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান প্রফেসর সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, ধূমপান ও তামাক নিয়ন্ত্রণ করা আমাদের দেশের জন্য জরুরি প্রয়োজন। ধূমপান ও তামাক সেবনের ফলে হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যানসার, ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে প্রতি বছরে ৮০ লক্ষাধিক মানুষ মারা যাচ্ছে। এর মধ্যে পরোক্ষ ধূমপানের কারণে পৃথিবীতে প্রতি বছর ১২ লক্ষাধিক মানুষ মারা যায়। বাংলাদেশে বছরে এক লাখ ৬১ হাজারের অধিক মানুষ তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে মারা যায়। পঙ্গুত্ব বরণ করে আরও কয়েক লাখ মানুষ। এছাড়া তামাকের কারণে অনেক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। সুস্থ ও সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে চাইলে তামাককে না বলতে হবে। দূরে থাকতে হবে তামাকের ব্যবহার থেকেও। শিশুদের ফুসফুস পরিণত হতে দেরি হয় বিধায় সিগারেটের ধোঁয়া তাদের জন্য বড় হুমকির। তাদের ফুসফুস ছোট্ট হলেও পরিণত ফুসফুসের চেয়ে অনেক বেশিবার বাতাস টেনে নেয়। তাই বাতাসের সঙ্গে ক্ষতিকর ধোঁয়াটাও শিশুর ফুসফুস ভরে ফেলে দ্রুত। পরোক্ষভাবে ধূমপানে শিশুর ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, দীর্ঘদিন কাশি, অ্যাজমা, গলাব্যথা, নাক দিয়ে পানি ঝরারও কারণ। একই সঙ্গে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে ফেলে। শিশুর স্বাস্থ্যেরও অবনতি ঘটায় পরোক্ষ ধূমপান।

সংগঠকরা যা বলছেন: তামাকবিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞার (প্রগতির জন্য জ্ঞান) নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের  বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের আগে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় করছেন। এজন্য ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী একটা নির্দেশনা দেন তামাক নিয়ে আমাদের বিদ্যমান আইন আরও শক্তিশালী করতে। সেজন্য আমি মনে করি আমাদের বর্তমানে যে আইন রয়েছে তা যথেষ্ট শক্তিশালী নয়। আমরা ২০৪০ সালের আগে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জন করতে চাই। তাহলে বর্তমানে যে আইন রয়েছে তাকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। আইন শক্তিশালী করলে আমরা তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জন করতে পারবো।

ই-সিগারেটের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে উল্লেখ করে এবিএম জুবায়ের বলেন, পাশের দেশ ভারত এর ব্যবহার বাতিল করে দিয়েছে। আমাদেরও আইন সংশোধন করে এটির ব্যবহার বাতিল করা উচিত। বিক্রয় কেন্দ্রগুলাতে সিগারেটের প্যাকেট সাজিয়ে রেখে যুবকদের আকৃষ্ট করার বিষয়টি আইন করে বন্ধ করতে হবে। বন্ধ করতে হবে সিঙ্গেল স্টিক বিক্রি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এক প্যাকেটের নিচে সিগারেট বিক্রি হয় না, যেন সহজে কিশোর-তরুণরা কিনতে না পারেন। আমরা এ ধরনের ছয়টা দাবি তুলে ধরেছি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এটা আমলে নিয়ে খসড়া করে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এ বছরই আশা করছি এটা সংশোধন হবে। এটা হলেই আমরা আশা করছি তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জন করতে পারবো।

যা বলছেন কর্মকর্তারা: এ বিষয়ে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়কারী ও অতিরিক্ত সচিব হোসেন আলী খন্দকার  বলেন, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণের জন্য ২০০৫ সালে একটি আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল। বর্তমান সরকার জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে ২০১৩ সালে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনটি সংশোধন করে। এরপর বিভিন্ন তামাকবিরোধী সংগঠন থেকে দাবি ওঠে আইনটি সংশোধন করার। আইন সংশোধন করার জন্য ছয়টি প্রস্তাবনা দিয়েছে তামাকবিরোধী সংগঠনগুলো। তাদের দাবি অনুযায়ী আমরা হোমওয়ার্ক করি। আমাদের তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের পক্ষ থেকেও চূড়ান্ত মিটিং করে সচিব মহোদয়কে দেখিয়ে ছয়টি প্রস্তাবনা প্রাথমিক অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। আমরা মন্ত্রণালয়ে চূড়ান্ত খসড়াটা পেশ করেছি। এটা অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় আছে। অনুমোদন হলে আমরা এটা ওয়েবসাইটে দেবো। এরপর আমরা পাঠাবো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে। এরপর মন্ত্রিসভা থেকে সংসদে যাবে। আইনটি সংশোধনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। প্রত্যেকে যদি যার যার জায়গা থেকে তামাক নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন, তাহলে অচিরেই আমাদের দেশ তামাকমুক্ত হবে।

নিউজ ট্যাগ: তামাক

আরও খবর



ফের খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতি, রাতেই নেওয়া হচ্ছে হাসপাতালে

প্রকাশিত:বুধবার ২৭ মার্চ ২০২৪ | হালনাগাদ:বুধবার ২৭ মার্চ ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

Image

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের হঠাৎ গুরুতর অবনতি হওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে তাকে ফের হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। বুধবার (২৭ মার্চ) রাতে তার গুলশানের বাসভবন ফিরোজা থেকে বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার কথা রয়েছে।

খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেওয়ার বিষয়ে নিরাপত্তাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সহযোগিতা চেয়ে এরই মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার বরাবর চিঠি দিয়েছেন তার একান্ত সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার।

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বুধবার রাতে এভারকেয়ার হাসপাতালে যেতে পারেন।

এর আগে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে গত ১৩ মার্চ খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে পরদিন ১৪ মার্চ বাসায় ফেরেন তিনি।


আরও খবর



ভিপি নুরের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি

প্রকাশিত:সোমবার ১৫ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:সোমবার ১৫ এপ্রিল ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
আদালত প্রতিবেদক

Image

চট্টগ্রামে সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতার দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন ট্রাইব্যুনাল। সোমবার (১৫ এপ্রিল) চট্টগ্রামের সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক জহিরুল কবীর এই আদেশ দেন।

শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তেব্যর অভিযোগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক আইন সম্পাদক এডভোকেট শাহরিয়ার ইয়াছির আরাফাত তানিম এ মামলা দায়ের করেন।

ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, শিক্ষামন্ত্রীকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ট্রাইব্যুনালে গত ৬ ফেব্রুয়ারি অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। সোমবার মামলার ধার্য তারিখে অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে নুরুল হক নুরের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।

সাইবার ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ১ জুন বাংলাদেশ ছাত্র যুব অধিকার পরিষদের সমাবেশ ডেকে সরকারসহ বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগর বিরুদ্ধে আসামি ছাত্রলীগ ও যুবলীগকে গুণ্ডালীগ বলে আখ্যায়িত করেছেন। এ সময় শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর বিরুদ্ধেও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন।

শিক্ষামন্ত্রী, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করার অভিযোগে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫, ২৯ ও ৩১ ধারায় মামলা করা হয়েছিল। আদালত মামলাটি শুনানি শেষে গ্রহণ করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) চট্টগ্রাম মেট্রো ও জেলাকে তদন্তের জন্য নির্দেশ দেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি চট্টগ্রাম মেট্রো ও জেলার উপরিদর্শক (এসআই) মো. আব্দুল করিম ২০২৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনালে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।


আরও খবর



থাইল্যান্ডের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত:বুধবার ২৪ এপ্রিল 20২৪ | হালনাগাদ:বুধবার ২৪ এপ্রিল 20২৪ | অনলাইন সংস্করণ
কূটনৈতিক প্রতিবেদক

Image

ছয় দিনের সরকারি সফরে থাইল্যান্ডের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিনের আমন্ত্রণে বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকাল ১০টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ব্যাংককের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন তিনি।

স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে ব্যাংককের ডন মুয়াং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমানটির অবতরণের কথা রয়েছে।

তার সফরে থাইল্যান্ডের সঙ্গে সহযোগিতা প্রসারে দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি, তিনটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) ও একটি লেটার অব ইন্টেন্ট (আগ্রহপত্র) স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর থাইল্যান্ড সফর নিয়ে গত সোমবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ জানান, ২৬ এপ্রিল থাইল্যান্ডের গভর্নমেন্ট হাউজে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। একই দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সৌজন্যে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী আয়োজিত রাষ্ট্রীয় মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেবেন। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা অব্যাহতি সংক্রান্ত চুক্তির পাশাপাশি জ্বালানি, পর্যটন ও শুল্ক সংক্রান্ত পারস্পরিক সহযোগিতা বিষয়ক তিনটি সমঝোতা স্মারক এবং মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা শুরুর জন্য একটি লেটার অব ইন্টেন্ট (আগ্রহপত্র) স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থাইল্যান্ডের রাজপ্রাসাদে রাজা মহা ভাজিরালংকর্ন এবং রানি সুথিদার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন।


আরও খবর



জনপ্রকাশ্যে ইউপি সদস্যকে গুলি, পরে গলা কেটে হত্যা

প্রকাশিত:সোমবার ১৫ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:সোমবার ১৫ এপ্রিল ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
নরসিংদী প্রতিনিধি

Image

নরসিংদীতে প্রকাশ্য দিবালোকে রুবেল আহম্মেদ নামে এক ইউপি সদস্যকে গুলি করার পর গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। সোমবার (১৫ এপ্রিল) দুপুর পৌনে ২টার দিকে নরসিংদীর আমদিয়া ইউনিয়নের পাকুড়িয়া বাজারে এই ঘটনা ঘটে।

নিহত রুবেল আহম্মেদ ওরফে বডি রুবেল আমদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, আজ দুপুরে রুবেল আহম্মেদ পাকুড়িয়া বাজারে আসেন। কাজ শেষে পৌনে ২টার দিকে মোটরসাইকেলে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় প্রাইভেটকারযোগে আসা একদল দুর্বৃত্ত তাকে লক্ষ্য করে পরপর ছয় রাউন্ড গুলি করে। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর রুবেল মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এ সময় দুর্বৃত্তরা তার শরীরের ওপর বসে গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে চলে যায়।

মাধবদী থানা পুলিশের এসআই ফজলে রাব্বি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, খবর পেয়ে ইউপি সদস্যের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে পুলিশ তদন্ত করছে।

নরসিংদীর গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্রের ধারণা, ইউপি নির্বাচনের সময় তৈরি হওয়া শত্রুতার জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে।

জানা গেছে, সবশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সদস্য পদে রুবেল আহাম্মেদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ইমরুল নামে এক প্রার্থী। ওই সময় দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে একাধিকবার হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। ওই নির্বাচনে কেন্দ্রে প্রভাব খাটিয়ে রুবেল বিজয়ী হন। এ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ইমরুলের সঙ্গে দ্বন্দ্ব আরও ঘনীভূত হয়।


আরও খবর



ওমরাহকারীদের ফেরার তারিখ জানালো সৌদি

প্রকাশিত:শনিবার ২০ এপ্রিল ২০24 | হালনাগাদ:শনিবার ২০ এপ্রিল ২০24 | অনলাইন সংস্করণ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক

Image

আগামী ৬ জুনের মধ্যে বাইরে থেকে আসা সকল ওমরাহকারীকে সৌদি আরব ছাড়তে হবে বলে জানিয়েছে দেশটির হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়। ওইদিন আরবি বর্ষপঞ্জিকার ১১তম মাস জিলকদের ২৯তম দিন থাকবে।

মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজ জানিয়েছে, সৌদি আরব ওমরাহর জন্য যে ভিসা দিয়ে থাকে সেটির মেয়াদ থাকে ৯০ দিন। যাদের কাছে ওমরাহর ভিসা আছে তারা আগামী ১৫ জিলকদ পর্যন্ত সৌদিতে প্রবেশ করতে পারবেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পবিত্র হজের প্রস্তুতি শুরুর অংশ হিসেবে ওমরাহকারীদের সৌদি আরব ছাড়ার তারিখ নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।

দেশটি জানিয়েছে, ভিসা যেদিন ইস্যু করা হয় সেদিন থেকে ৯০ দিনের হিসাব শুরু হয়। যদিও অনেকে মনে করেন যেদিন সৌদিতে প্রবেশ করবেন সেদিন থেকে ভিসার মেয়াদ শুরু হয়। তাদের এ ধারণাটি ভুল। এছাড়া ওমরাহ ভিসার মেয়াদ ৯০ দিনের বেশি কোনোভাবেই বাড়ানো হবে না। এই ভিসা অন্য ভিসা হিসেবেও পরিবর্তন করা হবে না।

জিলক্বদ মাসের পরের মাস জিলহজের ৮ তারিখ থেকে হজ শুরু হয়। শেষ হয় ১৩ তারিখ। প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে লাখ লাখ মুসলমান হজ করার জন্য সৌদিতে সমবেত হন।

হজযাত্রীদের একটা বড় অংশ আসা শুরু করেন জিলক্বদ মাস থেকে। হজের সময় যেন হজ যাত্রীরা নির্বিঘ্নে মক্কা ও মদিনায় পৌঁছাতে পারেন এবং সেখানে অবস্থান করতে পারেন সেজন্য ওমরাহকারীদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সৌদি ছাড়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।


আরও খবর