নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধি:
শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে নানা কাজে পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি অনেক নারী শ্রমিকরা শ্রম বিক্রি করেন। এসব নারী শ্রমিকের অংশ গ্রহণে পাথর ভাঙা, মাটি কাটা, চাতালে ধানের কাজ, ধান রোপন, পরিচর্যা ও ধান কাটাসহ অন্যান্য রবি শস্য বপনে কৃষিকাজ করা হয়। পুরুষ শ্রমিকের তুলনায় নারী শ্রমিকের মজুরি কম হওয়াতে কদর বেড়েছে। নারী শ্রমিকরা পুরুষের সমান কাজ করেও ন্যায্য মূল্য পান না বলে আক্ষেপ তাদের।
একাধিক নারী শ্রমিকরা জানান, প্রতিটি জায়গায় তারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের নারী শ্রমিকরা আরও বেশি এই বৈষম্যের শিকার। দেখা গেছে এক সময় যারা ঝিয়ের কাজ করতেন, এখন তারা মাঠে-ঘাটে কাজ করছেন। অনেকেই আবার পুরুষ শ্রমিকের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করছেন।
উপজেলার পানিহাটা এলাকার নারী শ্রমিক রুজিনা চিছাম বলেন, স্বামী সন্তান নিয়ে বসবাস করছি। বন্যহাতির অত্যাচারে কোন বছরই আবাদ ঠিকমতো ঘরে তুলতে পারি না। অনেক অর্থ কষ্টে জীবনযাপন করতে হয়। তাই বাধ্য হয়ে এই কৃষিকাজ করতে হচ্ছে। পুরুষদের সঙ্গে কাজ করতে সমস্যা নাই। তবে মজুরি নিয়ে কথা থেকে যায়। তিনি বলেন, কৃষিকাজ করে পুরুষের সমান হাজিরা পেলে আরো অনেক নারী কৃষিকাজে আগ্রহী হবেন। সুতরাং নারীদের কৃষিকাজে আগ্রহী হওয়ার জন্য মজুরি পুরুষের সমান করতে হবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভূমিকা রাখতে হবে।
অপর নারী শ্রমিক প্রেমা হাগিদক বলেন, স্বামী সন্তান নিয়ে বসবাস করছি। সামান্য বাড়ী-ভিটে ছাড়া আবাদি জমি বলতে কিছু নেই। সংসারের খরচ যোগাতে বাধ্য হয়ে অন্যের জমিতে নারী শ্রমিক হিসেবে কাজ করি।
উপজেলার আন্ধারুপাড়া এলাকার পাথর ভাঙার কাজ করা শ্রমিক সরুফা বেগম বলেন, আমরা তো মইরি গেছি, সব জিনিসের দাম বেশি। সারাদিন পাথর ভেঙে ৩০০ টেহা মজুরি পাই। তা দিয়ে চলাডা কষ্ট সাধ্য। কম মজুরি পেলেও কিছুই করার থাকেনা। এ জন্য যা পাই তা দিয়ে কোনো মতে সংসারের হাল ধরি।
কলসপাড় এলাকার মাটি কাটার শ্রমিক হনুফা বেগম বলেন, আমি সহাল (সকাল) ৭টার সময় মাটি কাটবার (কাটতে) যাই, বিহার (বিকাল) ৫টা পর্যন্ত মাটি কাটি। আমার বেতন পুরুষের চেয়ে কম। কাজ না করলে খামু কী, চলমু কী করে, পোলাপান (সন্তান) আছে।
পৌরশহরের চাতাল শ্রমিক খোদেজা বেগম বলেন, পুরুষের সমান কাজ করেও সমান মজুরি পাই না। নারী শ্রমিক বলে মালিকরা টাকা কম দেয়।
পানিহাটা এলাকার কৃষক হাসমত আলী বলেন, নারী শ্রমিকের মজুরি কম। এজন্য দিনদিন নারী শ্রমিকের চাহিদা বাড়ছে।
নিম্ন আয়ের এসব নারী শ্রমিকদের ভাষ্য, বছর ঘুরে নারী দিবস আসে আর তখন নারী শ্রমিকদের মজুরি-বৈষম্যের শিকার হওয়ার বিষয়টি সামনে আসলেও তাদের মজুরির কোনো পরিবর্তন হয় না। তাই নারীর অধিকার, মজুরিসহ নানা বিষয়ে সম অধিকার নিশ্চিত করার দাবি তাদের।
জাতীয় মহিলা সংস্থার শেরপুর জেলার চেয়ারম্যান নাসরিন রহমান বলেন, একজন পুরুষের সমান কাজ করেও একজন নারী সমান বেতন পান না। এটা খুবই দুঃখজনক। দীর্ঘদিন এমন অবস্থা থাকলেও বিশ্ব নারী দিবসে বিষয়টি সামনে আসে। যাই হোক আমরা চাই, এ ধরনের মানসিকতা থেকে সমাজ মুক্তি পাক। সমাজে নারী ও পুরুষের মজুরি বৈষম্য দূর হয়ে নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হোক সেই প্রত্যাশা করি।