নারায়গঞ্জ প্রতিনিধি:
নারায়গঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, ত্বকী হত্যার বিচার কেন হচ্ছে না, তা সারা দেশের মানুষ বুঝতে পারে। এখানে এমন প্রভাবশালী লোকজন জড়িত, রাষ্ট্রের ছত্রছায়ায় যাদের বেড়ে ওঠা। নিজেদের তারা এমনই মনে করে যে রাষ্ট্রকেই মানতে চায় না। রাষ্ট্র তাদের ভয় পায় কি না জানি না।
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্য ও শান্তি ধ্বংস করার জন্য ত্বকীকে হত্যা করা হয়েছে। এ দুর্বৃত্ত শক্তি নারায়ণগঞ্জের মানুষকে ভয় দেখিয়ে দমিয়ে রাখতে চায়, যা আর কখনো সম্ভব না।
গতকাল তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীর ২৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে “সপ্তম জাতীয় ত্বকী চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা’ ২১” এর পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান গতকাল বিকেলে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে তিনি এসব কথা বলেন। সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক, নিহত ত্বকীর পিতা রফিউর রাব্বি’র সভাপতিত্বে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক শওকতআরা হোসেন, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্য সচিব কবি হালিম আজাদ, সপ্তম জাতীয় ত্বকী চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা ’২১ এর আহ্বায়ক জাহিদুল হক দীপু ও ত্বকীকে নিয়ে রচনা লেখায় ‘ত্বকী পদক’ পাওয়া বিজয়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়োর শিক্ষার্থী ঈশিতা ফারজানা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীর মা রওনক রেহানা।
অনুষ্ঠানে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ত্বকীর অনুষ্ঠানে এলে আমাদের এক অপরাধের অনুভুতি তৈরী হয়, যে আমরা ত্বকীকে বাঁচাতে পারিনি। ত্বকী বাংলাদেশের সকল কিশোরদের প্রতীক। যে স্বপ্ন দেখে, লাইব্রেরিতে যায়, মিছিলে যায়, সমাজটাকে বদলে দিতে চায়, অন্ধকার থেকে মানুষকে আলোয়ে নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু তা হলো না। সর্বত্র এখন অন্ধকারে ছেয়ে আছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এ রাষ্ট্রে অন্ধকার না আলো জয়ী হবে। চারদিকে হতাশা, বিচারহীনতার সংস্কৃতি। টিসিবির গাড়ির পেছনে ছুটছে গোটা বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ এখন বাংলাদেশের প্রতীক। যেখানে মানুষের নিরাপত্তা নেই, আবার এ থেকে পরিত্রাণ পেতে মানুষ সংগ্রাম করছে, দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। তিনি বলেন, সমাজটাকে মানবিক করে গড়ে তুলতে হবে, মুক্তিযুদ্ধটা এ জন্যই হয়েছিল। যে রাষ্ট্রে আমরা বসবাস করছি তা কতটা অকার্যকর তার প্রতীক ও উদাহরণ হচ্ছে ত্বকী। এ রাষ্ট্রকে ভেতর থেকে বদলানো নাগেলে ত্বকীদের নিরাপত্তা ও বিকাশ সম্ভব নয়।
সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ত্বকী অশেষ সম্বাবনার প্রতীক। তিনি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, আপনি একটি পরিবারের পক্ষ নিতে পারেন না, আপনি সতেরো কোটি মানুষের অভিভাবক। আপনার অবশ্যই কর্তব্য ত্বকী হত্যার বিচার করা। ক্ষমতায় থাকাই সব নয়। হাশরের ময়দানে দাঁড়াতে হবে। কী জবাব দেবেন সেখানে? এমন বাংলাদেশ আমরা চাইনি। আমরা সোচ্চার কণ্ঠে দাবি করছি ত্বকী হত্যার বিচার চাই। আগামী বছর যেন আর বলতে না হয় “ত্বকী হত্যার বিচার চাই”।
রফিউর রাব্বি বলেন, রাষ্ট্র কতটা নিষ্ঠুর ও বর্বর হতে পারে তার উদাহরণ এই ত্বকী হত্যা ও এর পরবর্তী বিভিন্ন কার্যক্রম। ১৪৬ বার ত্বকী হত্যার তারিখ ঘুরেছে, কিন্তু তৈরী করে রাখা অভিযোগপত্র আদালদে জমা দেয়ার জন্য। কিন্তু দেয়া হয়নি। দুর্বৃত্ত রক্ষার রাজনীতি থেকে পরিত্রাণের জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, কিন্তু আমরা তা থেকে মুক্ত হতে পারিনি।
অনুষ্ঠানে সারা দেশের বিজয়ী ৬০ জনকে পুরস্কার প্রদান করা হয়। ছয়টি বিভাগে শ্রেষ্ঠ ছয়জনকে “ত্বকী পদক” প্রদান করা হয়। সেরা দশজননের লেখা ও আঁকা নিয়ে প্রকাশিত হয় স্মারক “ত্বকী”।