খুব সকালে উঠে
রান্না করা লাগে, মরার গেস সকালডা হইলেই মরা মরে। পোলাপানগুলারে নাস্তা বাইরে থেইক্যা
কিন্না দেই। স্বামী সকালে খাওন খাইতে পারলেও দুপুরে ঠাণ্ডা খাবার খায়। রাইতে তো বাসি
খাবারও খাইতে হয় মাঝে মইধ্যে।’ গ্যাস সংকট নিয়ে
এমন অভিযোগ নগরীর গলাচিপা এলাকার গৃহবধূ আসমা বেগমের। তার মতোই নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন
ও আশপাশের বাসিন্দাদের একই অভিজ্ঞতা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের বাবুরাইল, পাক্কারোড, দেওভোগ আখড়া, পালপাড়া, ভূইয়ারবাগ, নন্দীপাড়া, আমলাপাড়া, গলাচিপা, কলেজ রোড, জামতলা, উত্তর চাষাঢ়া, মাসদাইড়, মিশনপাড়া, খানপুর, মেট্টো হল, তল্লাসহ বিভিন্ন এলাকায় তীব্র গ্যাসের সংকট। এলাকাবাসীর অভিযোগ পূর্ণ বিল পরিশোধ করেও পর্যাপ্ত গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না।
আমলাপাড়া এলাকার
বাসিন্দা গৃহবধূ পপি রাণি সরকার বলেন, আজকে ১৫দিন যাবত আমাদের গ্যাসের তীব্র সংকটের
মধ্যে আছি। আগে দুপুরে কিছুটা গ্যাস পাওয়া যেতো কিন্তু এখন সেটাও পাওয়া যায় না। ভোর
৪টা অথবা ৫টায় না উঠলে আমাদের বাসায় রান্নাই করা হয় না। বিকালে সাড়ে ৫টা পর কিছুটা
গ্যাস থাকলেও সন্ধ্যার পর পর এটা একেবারেই কমে যায়।
রাত ১১টার আগের গ্যাসের কোনো খোঁজ পাই না। ৩-৪ বছর আগেও আমরা একই ধরনের সংকট ভোগ করেছি। গ্যাস না থাকলেও আমাদের গ্যাসের বিল দিতে হয়েছে। আমার কাছে মনে হয় এই গ্যাস কৃত্রিমভাবে দেওয়া, যাতে করে মানুষ সিলিন্ডার গ্যাসের দিকে চলে যায়। রাতে আমাদের ঘুমাতে ঘুমাতে সাড়ে ১২টা-১টা বেজে যায়। আমাদের আবার উঠতে হয় ভোর ৪টা-৫টায়। এতে করে শরীরে অতিরিক্ত চাপ পরে। এতে করে স্বাস্থ্য ঝুঁকির আশঙ্কা করছে তিনি ও তার পরিবার।
গ্যাসের তীব্র
সংকটের কথা জিজ্ঞাসা করলে নারায়ণগঞ্জ তিতাস গ্যাসের আঞ্চলিক বিপণন বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক
প্রকৌ. মো. মামুনার রশিদ জানান, বর্তমানে আমাদের যে পরিমাণ গ্যাসের চাহিদা, সে পরিমাণ
গ্যাসের সাপ্লাই আমরা দিতে পারছি না। সাময়িকভাবে এমন গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। তবে আমরা
আশা করছি, প্রধানমন্ত্রী রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন করেছেন। যদি এটা চালু হয়ে যায়
তাহলে গ্যাস চালিত যে পাওয়ার প্লান্ট আছে সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে। এতে গ্যাস সংকট
কিছুটা কমবে। আর আমাদের এই সংকটটা যে শুধু নারায়ণগঞ্জে, তা কিন্তু নয়। এটা সারাদেশেই
চলছে।
তিনি আরও বলেন,
‘নারায়ণগঞ্জে মানুষের
কাছে আমার আহ্বান, আপনারা একটু ধৈর্য ধারণ করুন, আপনারা সরকারকে একটু সহায়তা করুন।
আশা করি আমরা খুব শিগগিরই এই সংকট কাটিয়ে উঠবো।
স্বাস্থ্য ঝুঁকি
নিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. গোলাম মোস্তফা জানান,
রাতে কম ঘুমানোর কারণে অবশ্যই স্বাস্থ্যর মধ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। ঘুম যদি আমাদের
কম হয় তাহলে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। যাদের হাইপার টেনশন ও ডায়বেটিকসের মতো সমস্যা আছে
তাদের অবস্থা আরও খারাপ হবে। আর যারা সুস্থ আছে তারাও অসুস্থ হয়ে পড়বে।
তিনি আরও বলেন,
যদিও এখন নারীদের ক্ষেত্রে এটা খুব একটা সমস্যা। তাই আমাদের পরামর্শ থাকবে সকালে নাস্তা
খাওয়ার পর ঘুমিয়ে সেটি পুশিয়ে নেওয়া সম্ভব। যে কোন মানুষের ৬ থেকে ৮ঘণ্টা ঘুম খ্বুব
প্রয়োজন। কোন মানুষের ৬ ঘণ্টায় পুষিয়ে যায়, আবার কারো ৮ঘন্টা লাগে। তাই আমরা বলবো আপনার
যখন ক্লান্তি লাগবে, তখনই আপনি একটু ঘুমিয়ে নিন।