মিজানুর রহমান
বাহার ভালুকা প্রতিনিধি:
ময়মনসিংহের ভালুকা
উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে গাছে গাছে ঝুলছে গ্রীষ্মকালের রসালো ও পুষ্টিগুণ সম্পন্ন
জাতীয় ফল কাঁঠাল। যদিও পুরো পাকা-পুক্ত কাঁঠাল হওয়ার সময় বাকী রয়েছে আরও মাস দেড়েক।
বর্তমানে গ্রামাঞ্চলের গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে রসালো এই ফল। বাড়ির পাশে, রাস্তার ধারে,
জঙ্গলের ভেতরে থাকা গাছে ধরেছে প্রচুর পরিমাণে কাঁঠাল।
উপজেলার গোবুদিয়া
গ্রামের যুবক আবুল হাসেম জানায়, এই উপজেলার মানুষের অতি প্রিয় ফল ও তরকারি হিসেবে কাঁঠাল
যুগ যুগ ধরে কদর পেয়ে আসছে। কাঁঠালের বিচি এখানকার মানুষের একটি মজাদার তরকারি। বিশেষ
করে কাঁঠালের বিচি দিয়ে তৈরি করা শুটকি ভর্তা দারুন সুস্বাদু। বিভিন্ন ধরনের শাক ও
কাঁঠালের বিচির সমন্বয়ে রান্না করা তরকারি এখানকার মানুষ তৃপ্তির সঙ্গে ভাত খেতে পারেন।
তাছাড়া গবাদিপশুর জন্যও কাঁঠালের ছাল উন্নতমানের গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এক প্রকারের
সবুজ রঙের সুমিষ্ট গ্রীষ্মকালিন ফল। বাংলাদেশের সর্বত্র কাঁঠাল গাছ পরিদৃষ্ট হয়। কাঁঠাল
গাছের কাঠ আসবাবপত্র তৈরির জন্য সমাদৃত। কাঁঠাল পাতা বিভিন্ন প্রাণির পছন্দের খাদ্য।
তুলনামূলকভাবে বিশালাকার এই ফলের বহির্ভাগ পুরু এবং কান্টকাকীর্ণ, অন্যদিকে অন্তরভাগে
একটি কান্ড ঘিরে থাকে অসংখ্য রসালো কোয়া (গলা)। কাঁঠালের বৃহদাকার বিচি কোয়ার অভ্যন্তর
ভাগে অবস্থিত।
ভালুকা মডেল প্রেসক্লাবের
সভাপতি সোহাগ রহমান বলেন, কাঁঠাল আমার একটি
প্রিয় ফল। এটি অত্যাধিক পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। কাঁঠালের কোনো অংশই পরিত্যক্ত থাকেনা। কাঁঠাল
যেমন জনপ্রিয়, কাঁঠালের বিচিও দারুন সুস্বাদু খাবার। বিভিন্ন সবজির সাথে কাঁঠালের বিচি
মিশিয়ে ছোট মাছ দিয়ে রান্না করা তরকারি, শুটকি মাছের সাথে কাঁঠালের বিচি আর ডাঁটার
তরকারি, কাঁঠালের বিচি ভর্তা এ রকম অসাধারণ সব স্বাদের খাবার তৈরিতে কাঁঠাল বিচি আলুর
বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
এ ছাড়া কাঁঠালের
কদর ও বহুগুণের এমন কথা জানালেন কাঁঠাল প্রিয় প্রবীণ ব্যক্তিরাও। বহুগুণ সমৃদ্ধ এ কাঁঠাল
উপজেলার হাট-বাজারে এখনও উঠতে শুরু করেনি। তবে জ্যৈষ্ঠের শেষ ও আষাঢ় মাসের শুরু থেকে
এখানকার হাট-বাজারে কাঁঠাল কেনাবেচা শুরু হবে এমনটি কাঁঠাল ব্যবসায়ীদের ধারণা।
উপজেলার উপ-সহকারী
কৃষি কর্মকর্তা ছাইদুল ইসলাম বলেন, গাছে গাছে ঝুলছে প্রচুর কাঁঠাল। ফলন ভালো হয়েছে।
তবে অনেক কৃষকরাই কাঁঠালগাছ কেটে ফেলায় দিনকে দিন গাছের সংখ্যাও কমতে থাকে। এরপরেও
আমার এরিয়ায় যে পরিমাণে কাঁঠালগাছ রয়েছে তাতে করে এলাকার চাহিদা পূরণ করেও বিভিন্ন
বাজারে প্রচুর পরিমাণে কাঁঠাল বিক্রি করতে পারবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জেসমিন জাহান বলেন, বিগত সময়ে কাঁঠালের মূল্য হ্রাস পাওয়ার অনেক কৃষক তাদের কাঁঠালগাছ কেটে ফেলে। কয়েক বছর ধরে আবারও কাঁঠালের চাহিদা বেড়েছে এবং মূল্যও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কাঁঠালের ফলন বৃদ্ধি, গাছ সংরক্ষন এবং চারা রোপন ব্যাপারে গতবছর আমরা কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে গতবছরের চেয়ে এবার কাঁঠালের ফলন বাড়ার আশা করছি।