ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি:
পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের মারমী-সুলতানপুর গ্রামে পৌঁছালেই চোখে পড়বে রাস্তার দুই পাশে বিশাল দুটি বিল। একটির নাম আঠারোখাদা অপরটি পদ্মবিল। এ দুই বিলজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে প্রায় ৩৫০ এর অধিক পুকুর। প্রতিটি পুকুরেই হচ্ছে মাছ চাষ। আর এতেই ভাগ্য ফিরেছে মারমী-সুলতানপুর, হাতিগাড়া, বয়রা, বাড়াহুসিয়া ও খালিশপুরসহ বিভিন্ন গ্রামাবাসীর।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ ও দুই কিলোমিটার প্রস্থ এ দুই বিলে একসময় সারা বছরই জলাবদ্ধতা থাকতো। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় শুধুমাত্র শীতকালে বিলের চার ভাগের এক ভাগ জমিতে ধান চাষ হতো। বাকি সময় জলবদ্ধতার কারণে অনাবাদি থাকতো এসব জমি। প্রায় ১৬-১৭ বছর আগে এ বিলের জমির মালিকরা পুকুর খনন শুরু করে। খননের মাটি পুকুরের চার পাশের পাড় প্রশস্ত করে ভরাট করে। পুকুরের পাড় উচুঁ হওয়ায় বিভিন্ন প্রকার সবজি, কলার গাছ ও ফলমূলের আবাদও করে থাকেন মালিকরা। এক সময় জলাবদ্ধতায় ডুবে থাকা শত শত একর জমিজুড়ে এখন শুধু পুকুর আর পুকুর। প্রতি বছরই বেড়েই চলেছে পুকুরের সংখ্যা।
সুলতানপুর এলাকাবাসী জানান, মারমী-সুলতানপুর, হাতিগাড়া, খালিশপুর গ্রামজুড়ে রয়েছে আঠারোকাদা ও পদ্ম বিলের বিশাল অংশ। পাশাপাশি বয়রা, খালিশপুর, শ্যামপুর ও দিয়াড়পাড়া গ্রামেও রয়েছে বিলের সীমানা। বিলের পার্শ্ববর্তী গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ এক সময় দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করতো। তবে মাছ চাষ বদলে দিয়েছে এখানকার অর্থনীতি। এখানে মাছ চাষে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।
সুলতানপুর গ্রামের মাছচাষী সাবেক মেম্বার মজিবর রহমান আজকের দর্পণকে জানান, এক সময় বিলের অধিকাংশ জমি অনাবাদি ছিল। বছর বেশিরভাগ সময়ই জলাবদ্ধতা থাকতো। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বছরের একবারের বেশি ফসল হতো না। এসব অনাবাদি জমিতে পুকুর খনন করে মালিকরা যেমন লাভবান হয়েছে, তেমনি পুকুর লিজ নিয়ে মাছচাষ করেও অনেকে স্বাবলম্বী হয়েছেন। এখানকার হাজারও মানুষ মাছ চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। মাছের পাশাপাশি পুকুর পাড়ে সবজি ও ফলমূল চাষের সুযোগ হয়েছে। তিনি বলেন, আমার সুলতানপুর ও সুলতানপুরের আঠারোকাদা বিলে ৩০ বিঘার ৩ টি পুকুর রয়েছে। আমি মাছ চাষ করে লাভবান হয়েছি। আমার মত এলাকার অনেক যুবক মাছ চাষে স্বাবলম্বী হয়েছে।
সুলতানপুর গ্রামের মৎস্য হ্যাচারীর মালিক আব্দুল কাদের জানান, আমার ৩০ বিঘা পুকুরে মাছ চাষ করি। তাছাড়া আমার নিজস্ব হ্যাচারী রয়েছে । আমার হ্যাচারীতে রুই, সিলভার, মৃগেল, শরপুঁটি, কাতল বিভিন্ন প্রজাতির মাছ এখানে উৎপাদন করি। এসব মাছের পোনা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন থানা ও জেলাতে সরবরাহ করে থাকি।
মাড়মী পদ্মবিল এলাকার মাছচাষী মঞ্জুর রহমান আজকের দর্পণকে জানান, বিলের সবচেয়ে বড় ৩০ বিঘার পাশাপাশি মোট ৫ পুকুরে মাছ চাষ করি। বছরে শেষে আয় থাকে ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা। এছাড়াও পাবনার জৈনক মাছ চাষী পদ্মবিলে প্রায় ৫০ বিঘার বেশ কয়েকটি পুকুরে মাছ চাষ করেন।
উপজেলা মৎস্য সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, ঈশ্বরদীতে মোট ২৪৭৬ পুকুর রয়েছে। এর মধ্যে দাশুড়িয়া ও মুলাডুলি ইউনিয়নে পুকুর সংখ্যা বেশি। দাশুড়িয়া ইউনিয়নের মারমী ও সুলতানপুর, খালিশপুর, হাতিগাড়াসহ পাশ্ববর্তী গ্রামে মাছের ব্যাপক চাষাবাদ হয়। এখানকার মৎস্যচাষীরা দেশি জাতের পাশাপাশি বিদেশী কার্ভ জাতীয় মাছ চাষ করে ব্যাপক লাভবান হয়েছে।