কোরবানির ঈদের
আগে গরম হয়ে উঠেছে মসলার বাজার। দেশি পেঁয়াজ, রসুন, হলুদ, শুকনা মরিচ, আদাসহ বহু মসলার
দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় অবাক হয়েছেন ক্রেতারা। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে জিরার দাম। কয়েকদিনের
ব্যবধানে মসলাটির দাম বেড়ে হাজার টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ক্রেতারা বলছেন, এবার জিরা কিনতে
গিয়ে হাত পুড়ছে।
গতকাল যাত্রাবাড়ী বাজার থেকে জিরা না কিনেই ফিরে যাচ্ছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী মো. আলতাফ হোসেন। কোরবানির জন্য প্রয়োজনীয় মসলা কেনার পর তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানের জিরার দামই চাইছে ৮৯০ টাকা। আর ভালো মানেরটার কেজি এক হাজার টাকা। রাতারাতি এত দাম বাড়লে পকেটে কুলায় কী করে, তাই জিরা না কিনেই চলে যাচ্ছি।’
আরও পড়ুন: সাইবার হামলার ব্যাপারে সতর্কতা জারি
গতবারের তুলনায়
এই বছর দাম আরও বেশি বেড়েছে বলে জানান খুচরা বিক্রেতা মো. হানিফ সরকার। তিনি বলেন,
‘চাহিদার
তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় জিরাসহ কয়েকটি মসলার দাম বেশি বেড়েছে।’ হিলি স্থলবন্দরেই মঙ্গলবার জিরা
বিক্রি হয়েছে এক হাজার টাকা কেজি। আমদানিকারকরা বলছেন, এবার ভারতেই জিরার দাম বেশি।
এর সঙ্গে সরকারি শুল্ক, পরিবহন খরচও বেড়েছে। সব মিলে জিরার দাম অনেক বেড়েছে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত বছরের চেয়ে এবার বেশির ভাগ মসলার দাম অত্যধিক বেড়েছে। সংস্থাটির হিসাব অনুযায়ী, গতবার কোরবানির আগমুহূর্তের বাজারের তুলনায় এবার প্রায় ১৩৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। আর দারুচিনিতে ১৪ শতাংশ, লবঙ্গে ৩৪ দশমিক ৭৮, ধনে ৮২ দশমিক ৭৬ শতাংশ পর্যন্ত দাম বেড়েছে।
আরও পড়ুন: কমলাপুর রেল স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে মানুষের ঢল
টিসিবির এ হিসাব
থেকেই বোঝা যাচ্ছে, এবার কোরবানির বাজারে মসলা কিনতে গতবারের চেয়ে অনেক বেশি অর্থ গুনতে
হচ্ছে। পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, মসলার বাজারে সরবরাহে ঘাটতি নেই। আন্তর্জাতিক বাজারেই
দাম চড়া রয়েছে।
রাজধানীর মৌলভীবাজারের
পাইকারি বাজারের উপহার স্টোরের ব্যবসায়ী মো. স্বপন বলেন, ‘বাজারে পণ্যের সংকট নেই। মূলত আমদানিকারকরা
দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। ডলার সংকটের কারণে এখনো এলসি খুলতে সমস্যা হচ্ছে। যারা আমদানি
করতে পেরেছেন, তারাই মূলত দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। খুচরায় গিয়ে দাম আরও বেড়েছে।’
হিলি বন্দরের
আমদানিকারক শাহিনুর রেজা শাহিন জানান, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে হিলি বন্দর দিয়ে গত
সোমবার পর্যন্ত মসলাজাত পণ্য আমদানি হয়েছে। ইতোমধ্যে পেঁয়াজের দাম ক্রেতাদের নাগালের
মধ্যে চলে এসেছে। তবে জিরার দাম একটু বেশি। পানামা হিলি পোর্ট লিংক লিমিটেডের জনসংযোগ
কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন মল্লিক প্রতাপ জানান, গতকাল সোমবার (২৬ জুন) পর্যন্ত হিলি বন্দর
দিয়ে মসলাজাত পণ্য আমদানি হয়েছে।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিকেজি লবঙ্গ ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকা পর্যন্ত, দারুচিনি ৪২০ থেকে ৫০০ টাকা, ধনিয়া ১৭০ টাকা থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। জয়ত্রিকের দামও বেড়ে ৩ হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত ঠেকেছে। তবে এবার এলাচের দাম তুলনামূলক কম বেড়েছে। বাজার ও মানভেদে এলাচের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০০ থেকে ২৬০০ টাকা পর্যন্ত। যদিও এর বেশি দামেও বিক্রি হচ্ছে কোথাও কোথাও।
আরও পড়ুন: ঈদে সার্বক্ষণিক চালু থাকছে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯
কদমতলী সাদ্দাম
মার্কেট বাজারের মসলা বিক্রেতা মো. মিলন হোসেন বলেন, বরাবরই কোরবানির আগে মসলার চাহিদা
অতিরিক্ত বেড়ে যায়। তবে এবার আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় দাম আরও বেড়েছে। যেমন মোকামে জিরার
কেজি পড়ছে ৮৩০ থেকে ৮৪০ টাকা পর্যন্ত।
এদিকে খুচরায়
দেশি পেঁয়াজের কেজি এখনো ৮০ টাকায় রয়েছে। একইভাবে রসুনের দামও ১৬০ থেকে ১৮০ টাকার মধ্যে
রয়েছে। এক কোয়া রসুনের দাম আরও বেশি। আদার কেজি ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন দামে
বিক্রি হচ্ছে। এক বছর আগে দেশি শুকনা মরিচ যেখানে ২২০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে,
তা এখন শ্যামবাজারেই বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৪০ টাকা পর্যন্ত। আমদানিকৃত শুকনা মরিচের
কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ টাকা পর্যন্ত। খুচরা বাজারে তা ৪৮০ টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন
দামে বিক্রি হচ্ছে।