ময়মনসিংহের ফুলপুর
উপজেলায় বস্তাবন্দি অবস্থায় উদ্ধার নারীর লাশের পরিচয় নিশ্চিত হতে মা দাবি করা খুলনার
মরিয়ম মান্নানের ডিএনএ পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
রবিবার (২৫ সেপ্টেম্বর)
দুপুরে ফুলপুরের ৬ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক একেএম রওশন জাহান এ নির্দেশ দেন। বিষয়টি
নিশ্চিত করেছেন ময়মনসিংহ আদালতের পরিদর্শক মো. জসিম উদ্দিন।
তিনি বলেন, শনিবার
ফুলপুর থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন ওই লাশের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য রহিমা বেগমের
মেয়ে মরিয়ম মান্নানের ডিএনএ পরীক্ষার অনুমতি চেয়ে আদালতে আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে
রবিবার দুপুরে মরিয়মের ডিএনএ পরীক্ষার আদেশ দেন বিচারক।
এ বিষয়ে ফুলপুর
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এখনও আদালতের আদেশের কপি
হাতে পাইনি। আদেশের কপি হাতে পাওয়ার পর আমরা আদালতকে জানাবো, রহিমা বেগমকে জীবিত অবস্থায়
উদ্ধার করা হয়েছে। এজন্য ডিএনএ পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। এরপরও যদি আদালত চায় তাহলে ডিএনএ
পরীক্ষা করা হবে।
গত শুক্রবার মরিয়ম
ফুলপুর থানায় গিয়ে মায়ের লাশ শনাক্ত করতে ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন করেন। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে
শনিবার আদালতে ডিএনএ পরীক্ষার অনুমতি চেয়ে আবেদন জমা দেওয়া হয়।
এদিকে, মরিয়মের
দাবির একদিন পরই রহিমা বেগমকে (৫২) জীবিত অবস্থায় ফরিদপুরের বোয়ালমারী ইউনিয়নের সৈয়দপুর
গ্রামের কুদ্দুস মোল্লার বাড়ি থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে
তাকে উদ্ধার করা হয়। এখন প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে ফুলপুর উপজেলার লাশটি কার?
এ ব্যাপারে জানতে
চাইলে ফুলপুর থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ১০ সেপ্টেম্বর উপজেলার বওলা গ্রামের
পূর্বপাড়ার দারোগাবাড়ির পারিবারিক কবরস্থানের জঙ্গল থেকে প্লাস্টিকের বস্তাবন্দি
অবস্থায় ওই নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার ওই লাশের বয়স ৩২ বলে রেজিস্টার খাতায়
উল্লেখ করেছে পুলিশ। লাশটি অর্ধগলিত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। গলায় ওড়না পেঁচানো
অবস্থায় পা দুটি ভেঙে কোমরের ওপরের দিকে উঠিয়ে বস্তার ভেতরে ঢোকানো হয়েছিল। গলায়
ওড়না দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে আমাদের ধারণা। ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ
হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে ময়নাতদন্ত শেষে ১২ সেপ্টেম্বর লাশ দাফন করা হয়।
ওই নারী ধর্ষণের
শিকার হয়েছিল কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত হতে ময়নাতদন্তকালে
লাশের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠিয়েছেন চিকিৎসকরা। প্রতিবেদন এলে ধর্ষণ
ও হত্যার বিষয়টি জানা যাবে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি আমরা। কীভাবে ওই নারী
হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন এবং তার নাম-পরিচয় জানার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আমরা।
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল
কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের মেডিক্যাল অফিসার চিকিৎসক শোয়েব নাহিয়ান বলেন, ওই
নারীর লাশটি অর্ধগলিত অবস্থায় ছিল। কেমিক্যাল ও ভিসেরা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ
করা হয়েছে। ধর্ষণের শিকার হয়েছেন কিনা তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো
হয়েছে। একইসঙ্গে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব নমুনা ঢাকায় পরীক্ষার
জন্য পাঠানো হয়েছে। ওড়না পেঁচানো থাকায় গলায় দাগ ছিল। লাশ অর্ধগলিত থাকায় ধর্ষণের
আলামত বোঝা যায়নি। তবে পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়ার পর সবকিছু নিশ্চিত হওয়া যাবে।
কীভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল এবং ধর্ষণের শিকার হয়েছিল কিনা সব তখন জানা যাবে। এজন্য
প্রতিবেদনের অপেক্ষা করতে হবে।
ফুলপুর উপজেলার
বওলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলম তালুকদার ডালিম বলেন, ওই নারীর লাশ
পাওয়ার বিষয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। তবে মরিয়ম লাশটি তার মায়ের দাবি
করায় এলাকার মানুষজন আশা করেছিল, হত্যার রহস্য উদঘাটন হবে। কিন্তু রহিমা বেগমকে জীবিত
অবস্থায় উদ্ধার করায় আবারও সংশয় দেখা দিয়েছে। এলাকার মানুষ বলছে, তাহলে ওই লাশটি
কার? এটি জানার জন্য আমাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে। পুলিশের তদন্তের পরই আসল রহস্য জানা
যাবে।
তিনি বলেন, আমার
ধারণা অন্য এলাকায় হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে ওই নারীকে বস্তাবন্দি করে বওলা পূর্বপাড়ার গোরস্থানের
জঙ্গলে ফেলে যাওয়া হয়েছে। এ ঘটনার রহস্য দ্রুত উদঘাটনের জন্য পুলিশের কাছে দাবি জানাই।