আর যা-ই হোক না
হোক, কাতার বিশ্বকাপই যে লিওনেল মেসির শেষ বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে, তা নিশ্চিত। আগামী
২৪ জুনই ৩৫তম জন্মদিনের কেক কাটবেন, আগামী নভেম্বরে শুরু হতে যাওয়া বিশ্বকাপই মেসির
শিরোপা নিয়ে বিশ্বমঞ্চ ছেড়ে যাওয়ার শেষ সুযোগ। সে পথে এবার কি আত্মবিশ্বাসের জোরও একটু
বেশি আর্জেন্টিনার?
হওয়ারই কথা। গত
বছরের জুলাইয়ে ২৮ বছরের শিরোপাখরা ঘুচিয়ে কোপা আমেরিকা জিতেছেন মেসিরা, তা-ও ব্রাজিলের
ফুটবলতীর্থ মারাকানায় নেইমারের ব্রাজিলকেই হারিয়ে। এর ১১ মাস পর গত পরশু ইংল্যান্ডের
ফুটবল-তীর্থ ওয়েম্বলিতে আবার আর্জেন্টিনার শিরোপার উল্লাস, এবার ইউরোপ আর দক্ষিণ আমেরিকার
আন্তঃমহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বসূচক ‘লা ফিনালিসিমা’
জয়ের পথে হারিয়েছে গত বছরের জুলাইয়ে একই দিনে ইউরো জেতা ইতালিকে।
তবে মেসির বিশ্বকাপ
স্বপ্নে সবচেয়ে বড় শক্তি সম্ভবত তাঁর সতীর্থরাই। একে তো আর্জেন্টিনা দল হিসেবে অনেকটা
গুছিয়ে উঠেছে, তার ওপর এই দলটার সবাই-ই যেন মেসিকে কিছু এনে দিতে চোয়ালবদ্ধ। গোলকিপার
এমিলিয়ানো মার্তিনেজের কথায়ও তা পরিষ্কার। তাঁর সোজা কথা, মেসির জন্য আর্জেন্টিনার
সবাই সিংহের মতো লড়বে।
২০১৮ বিশ্বকাপে
কিলিয়ান এমবাপ্পের ফ্রান্সের কাছে ৪-৩ গোলে শেষ ষোলোতে যখন বিদায় নেন মেসি, ধরে নেওয়া
হয়েছিল, হয়তো সেটিই তাঁর শেষ বিশ্বকাপ। কিন্তু এরপর লিওনেল স্কালোনি দায়িত্ব নিয়ে আস্তে
আস্তে আর্জেন্টিনা দলের খোলনলচেই বদলে ফেলেছেন।
মেসি-দি মারিয়াদের
মতো তারকাদের সঙ্গে লো সেলসো, দি পলদের মতো তরুণ প্রতিভাবানদের নিয়ে আর্জেন্টিনা এখন
ভারসাম্যপূর্ণ একটা দল। তার চেয়েও আর্জেন্টাইনদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্ভবত
এটি যে এই আর্জেন্টিনা আগের মতো পুরোপুরি ‘মেসিনির্ভর’ কৌশলে খেলে না।
তবে মেসির জন্য
খেলে। দি পল, লো সেলসোদের কথায় সেটি এর আগেও অনেকবার উঠে এসেছে। নতুন করে একটু অন্যভাবে
কথাটা বলেছেন এমিলিয়ানো মার্তিনেজও, ‘এক বছর আগেও আমরা কিছুই ছিলাম না। এখন শিরোপা জিতেছি বলেই
সবাই ভাবতে শুরু করেছে, আমরা বিশ্বকাপের অন্যতম ফেবারিট হয়ে গেছি। তবে আমরা সব সময়ই
বিশ্বকাপের জন্য ফেবারিটদের তালিকায় থাকব, কারণ আমাদের দলে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় (মেসি)
আছে। ওর জন্য আমরা সবাই সিংহের মতো লড়ব।’
স্কালোনির অধীনে ধীরে ধীরে গুছিয়ে উঠতে থাকার পথচলায় আর্জেন্টিনার গত ১১ মাসে দুই শিরোপার পেছনে এমিলিয়ানো মার্তিনেজেরও বড় অবদান। গোলপোস্ট তো আর্জেন্টিনার সোনালি প্রজন্মের দলেরও বড় দুর্বলতা ছিল, গত জুনে আকাশি-সাদা জার্সিতে অভিষেকের পর থেকে গোলপোস্টে মার্তিনেজ বড় ভরসার নামই হয়ে উঠেছেন।
প্রতিপক্ষ বল
কেড়ে নিতে চাপ তৈরি করলে তিনি কীভাবে সামলাবেন, সেটি নিয়ে এখনো সংশয় আছে, তবে গোল ঠেকানোতে
এমিলিয়ানো এই সময়ে আলোচিত গোলকিপারদের একজন। কোপা আমেরিকা জয়ের পথে কলম্বিয়ার বিপক্ষে
সেমিফাইনালে টাইব্রেকারে দুটি শট ঠেকিয়ে সেই যে পাদপ্রদীপের আলোয় এসেছেন, এর পর থেকে
এমিলিয়ানো এই আর্জেন্টিনা দলের অপরিহার্য অংশ।
সেই এমিলিয়ানো
মার্তিনেজের কথা তো গুরুত্বের সঙ্গে নিতেই হয়! তবে এমিলিয়ানোর পরের কথাটা আর্জেন্টিনার
প্রতিদ্বন্দ্বীরা হয়তো ভালো চোখে নেবেন না।
আর্জেন্টিনার
লা ফিনালিসিমা জয়কে বড় শিরোপা হিসেবে দেখা হবে কি না, সে নিয়ে অনেকের সংশয় আছে। ইউরোপের
ক্লাব ফুটবলে ‘উয়েফা সুপার কাপের’
মতোই টুর্নামেন্টটা, দুই শিরোপাজয়ীর মধ্যে সেরা নির্ধারণী। কিন্তু এক ম্যাচের টুর্নামেন্ট
বলে অনেকে এটিকে তত গুরুত্ব দিতে রাজি নন। আর্জেন্টিনার প্রতিদ্বন্দ্বীরা তো মোটেই
রাজি নন।
তবে এ নিয়ে প্রশ্নে
এমিলিয়ানো মার্তিনেজের যুক্তি, ‘আমাদের কাছে এটা
একটা ফাইনালই, আনুষ্ঠানিকভাবে উয়েফার স্বীকৃতি পাওয়া ফাইনাল হিসেবেই দেখছি এটিকে। আর
এই শিরোপা আমাদের আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।’
ফিনালিসিমায় আর্জেন্টিনার
প্রতিপক্ষ ইতালি বিশ্বকাপে সুযোগ পায়নি, এ নিয়েও আর্জেন্টিনার শিরোপা জয় নিয়ে ফোঁড়ন
কাটেন অনেকে। তবে এখানেও এমিলিয়ানো মার্তিনেজের যুক্তি, ‘মানুষ হয়তো বলে যে আমরা ইউরোপের অসাধারণ
কোনো দলের বিপক্ষে খেলিনি। তবে ওরা ইউরো জিতেছে। আমরা দেখিয়েছি আমরা যে কারও সঙ্গে
লড়াই করতে পারি।’