
ভোলার মেঘনা নদীতে প্রায় ১১ লাখ লিটার জ্বালানি তেলসহ ডুবে যাওয়া কার্গো জাহাজটি এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। জাহাজটি উদ্ধারের জন্য বিআইডব্লিউটিএ এর একটি জাহাজ আসলেও ধারণ ক্ষমতার অধিক হওয়ায় ও জোয়ার ভাটার স্রোত বেশি থাকায় উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়েছে। এদিকে পদ্মা অয়েল কোম্পানির ২টি জাহাজ ডুবে যাওয়ায় জাহাজটিকে উদ্ধারের জন্য ঘাটে এসে পৌঁছেছে।
আজ মঙ্গলবার উদ্ধার কাজ শুরু করতে পারে বলে জানিয়েছেন পদ্মা অয়েলের এজিম (অপারেশন) মো. আনোয়ার হোসেন।
এদিকে এই ঘটনায় পদ্মা অয়েল কোম্পানির পক্ষে ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী চার দিনের মধ্যে এই কমিটিকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে রোববার ভোরে ভোলার মেঘনার মাঝের চর এলাকা সংলগ্ন এলাকায় চট্টগ্রাম থেকে তেল নিয়ে চাঁদপুরে যাওয়ার পথে ঘন কুয়াশার কবলে পড়ে অপর একটি জাহাজের ধাক্কায় ডুবে যায় লাইটার জাহাজ সাগর নন্দিনী-২। জাহাজটিতে থাকা ১১ লাখ ৩৪ হাজার লিটার অকটেন ও ডিজেলের অনেকটাই ছড়িয়ে পড়েছে মেঘনায়। এতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলেরা। তেলের কারণে তারা নৌকা ও জাল নিয়ে নদীতে টিকতে পারছেন না। ডুবে যাওয়া জাহাজটির আশপাশ এলাকার বহু জেলের মাছ শিকার বন্ধ রয়েছে। তেলের গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে নদী তীরের গ্রামগুলোতেও। এতে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবেশ কর্মীরা।
অন্যদিকে জাহাজ থেকে নদীতে তেলে ছড়িয়ে পড়ার পর কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের পক্ষ থেকে অত্যাধুনিক ল্যামার সংযোজিত বোট ব্যবহার করে প্রায় এক হাজার লিটার ডিজেল উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড। পরে সেই ডিজেল পদ্মা অয়েল কোম্পানিকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
সাগর নন্দিনী-২ মাস্টার মাসুদ বেল্লাল বলেন, বিআইডব্লিউটিএ রোববার বিকেলে একটি উদ্ধার জাহাজ আসলেও ধারণ ক্ষমতা কম থাকায় তারা উদ্ধার কাজ শুরু করতে পারেনি। এতে করে জাহাজটি ফেটে এক তৃতীয়াংশ ডুবে গেছে। আমাদের কোম্পানির পক্ষ থেকে দুটি জাহাজ এসে উদ্ধার করার কথা রয়েছে।
পদ্মা অয়েলের এজিম (অপারেশন) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, এই দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই একটি ৪ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যেই কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে কাজ শুরু করছি। জাহাজটির অর্ধেকের বেশি অংশ নদীতে ডুবে রয়েছে। এটিকে উদ্ধার করার জন্য পদ্মা অয়েল কোম্পানির সাগর বধূ-৩ ও সাগর বধূ-৪ দুটি উদ্ধার জাহাজ এসে পৌঁছেছে। জাহাজটি আগামীকাল উদ্ধার কাজ শুরু করবে।
তিনি আরও বলেন, এই জাহাজটি আসলে কিভাবে দুর্ঘটনা ঘটলো, কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেটি নিরুপম করে দেখছি। জাহাজে থাকা প্রায় ১৩ কোটি টাকার ডিজেল ও অকটেন ছিল।
বিআইডব্লিউটিএ এর যুগ্ম-পরিচালক (উদ্ধার) আব্দুল সালাম বলেন, জোয়ার ভাটার কারণে আমাদের উদ্ধার কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে। যখন ভাটা স্থির হয় তখন কাজ শুরু করবো। তবে জাহাজের নিট ওজন প্রায় সাড়ে তিনশ টন, এর সঙ্গে পানি ও তেল থাকলে এটির ওজন আরও বেশি হবে। আমাদের উদ্ধার জাহাজের ওজন প্রায় আড়াইশ টন। আমাদের জাহাজের ওজন কম থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না। তাই মালিক পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের উদ্ধার জাহাজ দিয়ে ডুবে যাওয়া জাহাজটি উদ্ধার করার জন্য কাজ করা হবে। আমরা সব ধরণের টেকনিক্যাল সহযোগিতা করবো।
ভোলা কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোন স্টাফ অফিসার (অপারেশন) লে. হাসান মেহেদী আরিফ পরিবেশে বিপর্যয় রোধে গতকাল থেকে অত্যাধুনিক মেশিনের সাহায্যে নদীতে থেকে তেল উত্তোলন করেছে। এ পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ লিটার তেল উদ্ধার করেছে। সেই তেল পদ্মা অয়েল কোম্পানিকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক তামিম আল ইয়ামিন বলেন, দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে পাঠানে হয়েছে। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি করা হবে। প্রাথমিকভাবে উদ্ধার অভিযান চলমান রয়েছে।