ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি:
তীব্র গরমে তৃষ্ণা মেটাতে ডাবের চাহিদা এখন তুঙ্গে। তাই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়ও জমজমাট প্রাকৃতিক বিশুদ্ধ এই পানীয়র ব্যবসা। প্রতি মাসে অন্তত ১ কোটি টাকার ডাব বেচাকেনা হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখন সারাবছরই ডাবের চাহিদা থাকে। আর চাহিদার সাথে সাথে ডাব ব্যবসার পরিধিও বাড়ছে। এতে কর্মসংস্থান হচ্ছে অনেকের। চিকিৎসকরাও গ্রীষ্মের এই তাপদাহের সময়টাতে শরীরের পানিশূণ্যতা ও লবনের ঘাটতি পূরণে ডাবের পানি পান করার পরামর্শ দিচ্ছেন সবাইকে।
ডাব ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলায় প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৩ হাজার পিস ডাব বেচাকেনা হয়। শুধুমাত্র জেলা শহরেই বিক্রি হয় অন্তত ২ হাজার পিস ডাব। আকার ভেদে প্রতি পিস ডাব খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকা দামে। তবে ডাবের চাহিদা রয়েছে আরও বেশি। কিন্তু চাহিদার তুলনায় বাজারে ডাবের যোগান কম থাকায় দাম কিছুটা বেশি।
জেলায় ডাব ব্যবসায়ী আছেন প্রায় ১০০ জন। এর মধ্যে জেলা শহরে ব্যবসায়ীর সংখ্যা ২৫-৩০ জন। সবগুলো দোকানই ফুটপাতে বসে। কেউ কেউ আবার ভ্যানগাড়িতে করেও ডাব বিক্রি করেন। এদিকে নোয়াখালী, লহ্মীপুর, সিলেট ও ভোলা জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ডাব আসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। সবচেয়ে বেশি ডাব আসে নোয়াখালী ও লহ্মীপুর থেকে। প্রতি মাসে অন্তত ১ লাখ ৫ হাজার পিস ডাব বিক্রি হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। যার বাজারমূল্য প্রায় ১ কোটি টাকা। ডাব সবচেয়ে বেশি বেচাকেনা হয় হাসপাতালের সামনের দোকানগুলোতে। ডাব ব্যবসার মাধ্যমে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা যেমন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন, তেমনি কর্মসংস্থানেরও সুযোগ তৈরি হয়েছে এ ব্যবসায়। তবে ডাবের দাম নিয়ে ক্রেতাদের মাঝে অসন্তোষও রয়েছে। তারা বলছেন- ১০০ টাকা দিয়ে ডাব কেনার সক্ষমতা সবার নেই। বিশেষ করে দরিদ্র মানুষের জন্য ১০০ টাকা দিয়ে ডাব কিনে খাওয়া দুরূহ ব্যপার।
জেলা শহরের স্টেশন রোড এলাকার বাসিন্দা আশরাফ উদ্দিন জানান, তাপদাহ শুরুর আগে তিনি ৬৫-৭০ টাকায় ডাব কিনে খেয়েছেন। কিন্তু এখন সেই ডাব কিনতে হচ্ছে ৯০-১০০ টাকায়। ডাবের এই দরবৃদ্ধি ব্যবসায়ীদের কারসাজি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের সদর হাসপাতাল সড়কের ডাব ব্যবসায়ী বাছির মিয়া জানান, পান-সিগারেট বিক্রির পাশাপাশি ডাব বিক্রি করেন তিনি। প্রতিদিন তার দোকানে গড়ে ১০০ পিস ডাব বিক্রি হয়। কর্মচারীর বেতন দিয়ে ডাব ব্যবসা থেকে তার মাসিক আয় ১৫-২০ হাজার টাকা বলে জানান তিনি। আরেক ডাব বিক্রেতা মোঃ আক্কাস জানান, বাজারে ডাবের সংকট থাকায় দাম কিছুটা বেশি। যখন যোগান ভালো থাকে- তখন দামও কম থাকে। বেচাকেনা ভালো হলে প্রতিদিন ১২০০-১৫০০ টাকা আয় হয় তার। ডাব ব্যবসার আয় দিয়েই তার পরিবার চলে বলে জানান তিনি। তবে অনেক সময় লোকসানও গুণতে হয়। কারণ পাইকার যে ডাব সরবরাহ করে-তার মধ্যে কিছু খারাপ ডাবও থাকে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে ব্যবসায়ীর কাছে ডাব সরবরাহকারী হান্নান মিয়া জানান, প্রতি সপ্তাহে তিনি আড়াই থেকে ৩ হাজার পিস ডাব সরবরাহ করেন ব্যবসায়ীদের কাছে। শহরে তার মতো আরও দুইজন খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে ডাব সরবরাহ করেন। চাহিদা ভালো থাকায় নতুন অনেকেই ডাব ব্যবসায় আসছেন।‘চাহিদার তুলনায় ডাব না পাওয়া এবং পরিবহন খরচ বাড়ায় ডাবের দামও কিছুটা বেশি। প্রতি পিস ডাবের ৭০-৭৫ টাকা দরে কিনতে হয়। ভালো ডাবগুলোর সাথে অনেক খারাপ ডাবও থাকে। সেগুলোর জন্যও একই দাম দিতে হয়। তাই ডাবের দাম বেশি পড়ে। এখানে ব্যবসায়ীদের কোনো কারসাজি নেই’- উল্লেখ করেন হান্নান মিয়া। ডাবের গুণাগুণ সম্পর্কে চিকিৎসকরা বলছেন, ডাবের পানিতে প্রচুর পরিমাণ খনিজ লবন থাকে। গরমের সময় শরীরের ঘাম ঝরার ফলে শরীরে যে লবনের ঘাটতি এবং পানিশূণ্যতা তৈরি হয়- সেটি পূরণ করে ডাবের পানি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন ডা. মুহাম্মদ একরাম উল্লাহ বলেন, ‘গরম আবহাওয়ায় মানুষের শরীরে পানি এবং লবন শূণ্যতা দেখা হয়। এ সময়টাতে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয় মানুষ। ডাবের পানি শরীরের পানিশূণ্যতা এবং লবনের ঘাটতি পূরণ করে শরীরকে চাঙা করে। তাই গরমের সময়টাতে সুস্থতার ক্ষেত্রে ডাবের কার্যকারীতা অনেক’।