ইউক্রেনের মারিউপোল শহরের অবরুদ্ধ আজভস্তাল ইস্পাত কারখানা থেকে সব বেসামরিক নারী, শিশু ও বয়স্ক মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। রুশ বাহিনীর হামলার মধ্যেই গত এক সপ্তাহ ধরে কয়েক শ মানুষকে এ কারখানা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ইউক্রেনের উপ-প্রধানমন্ত্রীর বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। উপ-প্রধানমন্ত্রী ইরিনা ভেরেশচুক এক টেলিগ্রাম পোস্টে বলেছেন, ‘মারিউপোলে মানবিক উদ্ধার অভিযান শেষ হয়েছে।’
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজভস্তাল ইস্পাত কারখানাটি সোভিয়েত যুগের। ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে দশ সপ্তাহ ধরে চলমান যুদ্ধে মারিউপোলের এই একটি কারখানাই ইউক্রেনের সেনারা এখন পর্যন্ত নিজেদের দখলে রাখতে পেরেছে। ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চল দখলের জন্য মরিয়া হয়েছে রুশ বাহিনী। তাদের দখল প্রচেষ্টায় প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে উঠেছে এই ইস্পাত কারখানাটি।
আজভস্তাল কারখানার ভূগর্ভস্থ বাংকারে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ইউক্রেনের কয়েক শ বেসামরিক মানুষ ও যোদ্ধা অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিল। রুশ বাহিনীর গোলাবর্ষণের মধ্যে খাদ্য, পানি ও ওষুধের অভাবে আটকে পড়া এই মানুষেরা অবর্ণনীয় অবস্থায় বেঁচে ছিলেন। ইউক্রেনের একজন সামরিক কমান্ডার জানিয়েছেন, ইউক্রেনের বন্দরনগরী মারিউপোল কৌশলগত কারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই শহর থেকে ইউক্রেনের সেনাদের সরিয়ে দেওয়ার জন্য এবং আজভস্তালের দখল নেওয়ার জন্য শনিবার আবার কামানের গোলাবর্ষণ করা হয়েছে এবং ট্যাংক দিয়ে আক্রমণ চালানো হয়েছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, কয়েক সপ্তাহ ধরে রুশ বাহিনীর অবিরাম গোলাবর্ষণে মারিউপোল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। আজভস্তাল ইস্পাত কারখানাও অনেকাংশে ধ্বংস হয়ে গেছে। এই কারখানায় আটকে পড়া কয়েক শ মানুষকে সরিয়ে নিতে গত সপ্তাহে জাতিসংঘ এবং রেড ক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটির মধ্যস্থতায় অপসারণ কার্যক্রম শুরু হয়।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এক ভাষণে বলেছেন, ‘ইস্পাত কারখানা থেকে ৩০০ জনেরও বেশি বেসামরিক নাগরিককে উদ্ধার করা হয়েছে। আমরা এখনকার চিকিৎসক ও আহত বেসামরিক মানুষদের সরিয়ে নেওয়ার দিকে মনোযোগ দেব। আমরা চেষ্টা করব কারখানার আশপাশের জনবসতি থেকেও লোকজনকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার।’
এদিকে রুশ সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরাও আজভস্তাল ইস্পাত করখানা থেকে ১৭৬ জনকে সরিয়ে নেওয়ার খবর দিয়েছে। আরও বেসামরিক মানুষ সেখানে আছেন কি না তা এখনো জানা যায়নি। কারখানার ভেতরে থাকা যোদ্ধারা আত্মসমর্পণ করবে না বলে জানিয়েছে। সেখানে কতজন যোদ্ধা এখনো রয়েছেন তা স্পষ্ট নয়। ইউক্রেনের কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন যে সোমবারের মধ্যে রুশ বাহিনী সম্ভবত এ কারখানা গুঁড়িয়ে দেবে। এদিকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক উইলিয়াম বার্নস বলেছেন, ‘এ যুদ্ধে পুতিন হারতে পারেন তা এখনো বিশ্বাস করতে পারছেন না।’
গত ২১ এপ্রিল রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মারিউপোলে বিজয় ঘোষণা করেছিলেন এবং আজভস্তাল ইস্পাত কারখানা সিল করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তারপর ইউক্রেন যোদ্ধাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু ইউক্রেন বাহিনী এ আহ্বানে সাড়া না দিলে রুশ বাহিনী হামলা শুরু করে।