আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘনকারী, সেনা রুলস লঙ্ঘনকারী, ক্ষমতা দখলকারী এক জেনারেলের পকেট থেকে যে দল তৈরি হয়েছে, সেই দল ভোটের কি বোঝে? তারা গণতন্ত্রের মানে বোঝে? তারা মানুষকে ‘মানুষ’ মনে করলে পুড়িয়ে মারতে পারত না।
বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) বিকেলে তেজগাঁওয়ে অবস্থিত ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে পাবনাসহ পাঁচ জেলার নির্বাচনি জনসভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে আসবে না। নির্বাচনে আসবে কীভাবে? ২০০৮ সালের নির্বাচনে ফলাফলটা কী ছিল? বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট মাত্র পেয়েছিল ৩০টা আসন। আর আওয়ামী লীগ এককভাবে পেয়েছিল ২৩৩ আসন। তারা এখন বড় বড় কথা বলে! ভোটের কথা বলে! তারা ভোটের কি বোঝে?’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা দেখছেন রেলে আগুন দিয়ে কিভাবে মানুষ পুড়িয়ে মারছে। একটা মা তার সন্তানকে বাঁচাতে বুকে ধরে রেখেছে। বাসের ভিতরে হেলপার ঘুমিয়ে আছে আগুন দিচ্ছে, ট্রাকে আগুন দিচ্ছে। একটি ছেলেকে ট্রাকে বসিয়ে রেখে বাবা পানি আনতে গিয়ে দেখে ছেলে আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়েছে। ২০১৩ সালে ১৪ সালে ১৮ সালে একইভাবে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করেছিল। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকানোর নামে ৫৮২টি স্কুল, ৭০টি সরকারি অফিস, ৬টা ভূমি অফিস, ৩২৫২গাড়ি, ২৯টি রেল, ৯টি লঞ্চ আগুন দিয়ে পুড়িয়েছিল। ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল।’
আরও পড়ুন>> আবার সরকারে আসলে প্রতিটি জেলা গৃহহীনমুক্ত হবে: প্রধানমন্ত্রী
তারেক রহমানের প্রতি ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আর একটি কুলাঙ্গার আছে, ২০০১ সালে তার হাওয়া ভবন ছিল। চাঁদা না দিলে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারত না। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিত। সে অবৈধ যত কাজ আছে সবই করেছে। মানি লন্ডারিং থেকে শুরু করে অস্ত্র চোরাকারবারী, ১০ ট্রাক অস্ত্র নিয়ে আসা, দুর্নীতি সবই সে করেছে। বিদেশ থেকে এসে তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়ে গেছে। এজন্য তার সাজাও হয়েছে। এখন আবার বিদেশে বসে ভোটের কথা বলে। গণতন্ত্রের কথা বলে। সে তো রাজনীতি করবে না। আবার বিদেশে বসে থেকে হুকুম দিয়ে উস্কানি দিয়ে নেতাদের দিয়ে মানুষ হত্যা করাচ্ছে। নির্বাচন বানচাল করার পাঁয়তারা করছে।’
সরকারের উন্নয়নমূলক চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী আবারও নৌকা মার্কায় ভোট চান। দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘এবারের নির্বাচনকে ঘিরে আপনাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। জনগণ ভোট দিবে। ভোটের মালিক জনগণ। এটা তাদের সাংবিধানিক অধিকার। আমরা এটাকে উন্মুক্ত (স্বাধীন) করেছি। প্রত্যেক জনগণের কাছে যাবেন। জনগণ যাকে ভোট দিবে সেই নির্বাচিত হবেন। কেউ কারো অধিকারে হস্তক্ষেপ করবেন না। এখানে মারামারি সংঘাত কোনো কিছু আমি দেখতে চাই না। আমার দলের কেউ করলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমরা চাই জনগণ তাদের ভোটের অধিকার নির্বিঘ্নে প্রয়োগ করবে। তারা যাকে খুশি, পছন্দ করবে, ভোট দিবে এবং সে বিজয়ী হয়ে আসবে। গণতন্ত্রকে আরও সুদীর্ঘ করতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ শেষ হয়ে যাবে। যতটুকু উন্নয়ন করেছি সেটুকু থাকবে না।’
এ সময় পাবনাবাসীর পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল রহিম লাল এবং পাবনা-৫ আসনের নৌকার প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক প্রিন্স এমপি। তারা উভয়ে পাবনার উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান এবং আবারও বেশ কয়েকটি উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের প্রস্তাব করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী তাদের আশ্বাস দেন।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন পাবনা-১ আসনের নৌকার প্রার্থী জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু এমপি, পাবনা-৪ আসনের নৌকার প্রার্থী গালিবুর রহমান শরিফ, পাবনা-৩ আসনের প্রার্থী মকবুল হোসেন এমপি, পাবনা-২ আসনের প্রার্থী আহমেদ ফিরোজ কবির এমপি এবং পাবনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম পাকনসহ জেলার শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।