মাদারীপুরের ছোট্ট একটি ঘরে। সকাল থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চলে সোরগোল। আমাকে এক কাপ দিন, আমাকে এক কাপ দিন। এটা তার নিত্যদিনের দৃশ্য। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে দোকানে বাড়তে থাকে ভিড়। এ সময় একটু দম ফেলার কোন সুযোগ মেলে না চা বিক্রিতা মনিরের। এই দোকান থেকেই মাসে আয় হয় ৪০ থেকে ৫০হাজার টাকা।
বলছিলাম মাদারীপুর সদর উপজেলা পাঁচখোলা ইউনিয়নের পশ্চিম পাঁচখোলা এলাকার চায়ের দোকানি মোঃ শাহরিয়ার মনিরের কথা। মুক্তিসেনা স্কুলের একটু সামনে মনিরের চা দোকানের খ্যাতি এখন জেলাজুড়ে। সকাল-রাত প্রায় সব বয়সী লোকজনের দেখা মেলে চায়ের জন্য।
তবে তার চায়ের দোকানটি নাফসিন ভ্যারাইটিজ কর্নার স্টোর নামে জেলায় বেশ পরিচিত পেয়েছে। বর্তমানে তার দোকানে ৮০ প্রজাতীর চা পাওয়া যায়। এরমধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় চা হলো দুবাই চা ও স্পেশাল তুর্কি চা এবং আয়ুর্বেদিক রং চা।
চা বিক্রিতার মনির জানান, ২০০০ সালে এসএসসি পাশ করে অভাবের সংসারে হাল ধরার জন্য পারিজমান ঢাকার শহরে। সেখানে চাকরি নেন গার্মেন্টসে। গার্মেন্টস থেকে যে টাকা পায় নিজের চলতে কষ্ট হয়ে পরে। চাকরি ছেড়ে চলে আসেন পাঁচখোলা ইউনিয়ন ১নং ওয়ার্ডের নিজ বাড়িতে। তারপরে চিন্তা আছে মাথায় নিজে কিছু একটা করার। বিভিন্ন দোকানে চা বানানো দেখে এবং ইউটিউবের সহযোগিতায় শিখে নেন চা বানানোর কৌশল।
মুক্তিসেনা স্কুলের সামনে বৃদ্ধাশ্রমের পাশে শুরু করে দেন দোকান নির্মাণের কাজ। প্রথমে তিনি ১৫ রকমের চা দিয়ে শুরু করেন ব্যবসা। বর্তমানে তার দোকানে ৮০ প্রজাতির চা রয়েছে। এছাড়াও বাহারী ধরনের পান রয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য পান আগুন পান। ব্যতিক্রম একটি খাবার রয়েছে তার নাম স্মোক বিস্কিট। সব মিলিয়ে এখন তার মাসে আয় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা এমনটাই জানান। এই আয়ের টাকার মধ্যে দিয়ে সংসার এবং ভাই-বোনদের লেখাপড়া খরচ চালান তিনি। এমন এক সময় গেছে তাদের দিন আনতে দিন খাইতে অনেক কষ্ট হয়ে হত। এখন এই চায়ের দোকানে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। সংসারে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হল বাড়তি ২০ হাজার টাকার পুজি থাকে।
তিনি আরো বলেন, তার দেখা দেখি অনেক বেকার যুবকরাও এই বাহারি চায়ের দোকান দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এবং তার কাছ থেকে তারা চা বানানোর কৌশল শিখেছে।
নিয়মিত চা খেতে আসেন মাদারীপুর সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র সোহান ইসলাম। সে সাংবাদিকদের বলে, মাদারীপুর জেলার সবচেয়ে সুস্বাধু চা পাওয়া যায় মুক্তিসেনা বৃদ্ধাশ্রম এর পাশে মনির ভাইয়ের দোকানে। আমরা বন্ধুরা মিলে প্রায়ই এখানে চা খেতে আসি। আমরা দুবাই চাটাই বেশি খাই।
রুবেল হোসেন বাড়ি রাজবাড়ী জেলায় চাকরি করেন মাদারীপুরে। চাকির সুবাদে থাকা মাদারীপুরে তিনি বলেন, পাঁচখোলা এলাকায় গেলে মনির ভাইয়ের চায়ের দোকানে চায় খাই।বিশেষ করে তার দোকানে দুবাই ও তুর্কি চাটা বেশি চলে। তার দোকানে বিভিন্ন ফ্লেভারের চাপ পাওয়া যায়।
শরীয়তপুর থেকে চা খেতে আসা মোহাম্মদ রিয়ান বলেন, আমি মাঝে মাঝে এখানেই চা খেতে আসি। এবং সবচাইতে আমার কাছে দুবাই চাটাই মজা লাগে। এজন্য আমার মন চায় আমি বারবার এই চা খাই।
গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাহাত ইসলাম বলেন, আমরা ভার্সিটির বন্ধুরা মিলে ২০০ টাকা ভাড়া দিয়ে প্রতি শুক্রবার এখানকার চায়ের অতুলনীয় স্বাদ নিতে আসি। এখানকার চা অন্য সব দোকানের থেকে আলাদা। একবার খেলেই মুখে এর স্বাদ অনেক দিন লেগে থাকে।
অটোচালক রুহুল বলেন, সারা দিন শহরে অটো চালিয়ে সন্ধ্যার পর বাসায় যাওয়ার আগে মনির ভাইয়ের চা খাই। সন্ধ্যার পরে চা খেতে হলে সিরিয়াল নিতে হয়।
মনিরের স্ত্রী মুন্নী বেগম বলেন, যখন দোকানে ভিড় থাকে তখন আমি আমার স্বামীকে দোকানের কাজে সাহায্য সহযোগিতা করি। বেশিরভাগ সময় সন্ধার পরেই ভিড় বেশি থাকে তখন আমি আমার স্বামীকে সংসারের পাশাপাশি তার দোকানও সহযোগিতা করি।
মুক্তিসেনা স্কুলের সহকারী শিক্ষক মোঃ হাসান বলেন, আমি অবসর সময় বিভিন্ন দোকানের চা খাই, কিন্তু এখানের মত এরকম কেউ চা বানাতে পারে না। এখানকার চা একবার খাইলে আবারও খেতে মন চায় যে এখানে সবচাইতে যে বিষয়টা হলো যেখানে তুর্কি দুবাইসহ বিভিন্ন ফ্লেবারের এত সুন্দর ভাবে মন চায় আমাদের বারবার খেতে।
পাঁচখোলা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ তিনু হাওলাদার বলেন, মনিরের চায়ের দোকানে নাম এখন জেলা জুড়ে বিস্তৃত। আমি শহরের যেখানে যাই প্রতিটা লোকের কাছেই শুনে যে মনিরের চায়ের বিভিন্ন রকমের সুস্বাদু চা পাওয়া যায়। আমিও গিয়ে খেয়েছিলাম। এখানে সবচাইতে তুর্কি, আয়ুর্বেদিক এবং দুবাই চাটা বেশি চলে। মনির জীবনে অনেক কষ্ট করেছে আজকে মনির সফলতার মুখ দেখছে এ কারণে মনিরকে ধন্যবাদ জানাই।
প্রসঙ্গত, শাহরিয়ার মনিরের টি স্টোরের সুস্বাধু চা খেতে আসতে হবে মাদারীপুর সদর উপজেলা পাঁচখোলা ইউনিয়ন মুক্তিসেনা সামনে বৃদ্ধাশ্রমের পাশে। এখানে এসে যে কাউকে জিজ্ঞাসা করলে মনিরের চা স্টোরটি দেখিয়ে দেবে।